৭ বছর ধরে একই সাথে দুই স্বামীর সংসার করে আসছে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের মোল্লাডহর গ্রামের সর্দার বাড়িতে।
লেবনন ফেরত শহিদ উল্যাহর স্ত্রী রীনা আক্তার শিল্পি। সারা দিন এক স্বামীর সংসারে থাকলেও রাতে চলে যান অন্য স্বামীর কাছে। এ ভাবেই ৭ বছর ধরে চলছে তার রঙ্গলীলা। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় তোলপাড়।
জমির দলিল খুঁজতে গিয়ে শহীদউল্যাহ হাতে পায় একটি কাবিন। কাবিনটি পড়ে দেখেন এটি তার স্ত্রী রীনা আক্তারের। ২০১৬ সালে রাসেল নামে অন্য কাউকে বিয়ে করে দিব্যি তার সাথে সংসার করছে রীনা। একই সাথে তার সাথে সংসার করছে। রীনার ২০ ও ২২ বছর বয়টি ২টি কন্যা সন্তান রয়েছ্ মায়ের এমন কর্মকাণ্ডে স্বামীর সংসারে মানুষকে মুখ দেখাতে পারছেনা ২ মেয়ে।
একই দুই স্বামীর সংসার করা ওই নারীর বিরুদ্ধে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে প্রতারণা করে নগদ ৭৫ লাখ টাকাসহ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন গেলে তার স্বামী শহীদ উল্যাহ জানান, ওই বাড়ির মৃত ছফি উল্ল্যাহর ছেলে শহিদ উল্ল্যাহর সাথে একই গ্রামের মিজি বাড়ির মৃত নূর আহমদের মেয়ে রীনা আক্তার শিল্পীর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ১৯৯৫ সালে।
বিয়ের পর স্ত্রী রীনা আক্তার শিল্পীকে লেবাননে নিয়ে যান তার স্বামী। দুই প্রবাস ভ্রমণে ও দাম্পত্য জীবনে শহিদ উল্ল্যাহ-শিল্পীর কোল আলো করে দুই কন্যা সন্তান। ওই সন্তানগুলোও এখন বড় হয়েছ গেছে এবং তাদের বিয়েও দেয়া হয়েছে।
শহিদ উল্ল্যাহ-শিল্পীর দাম্পত্য জীবনে বিপত্তি বাঁধে শিল্পির সন্দেহজনক আচরণে। প্রবাস জীবনে উপার্জিত টাকা বাড়ীতে স্ত্রীর নামে পাঠালে স্ত্রী স্বামীর নামে জমি ক্রয়ের কথা বলে একটি বাড়ী নিজের নামে ও আরেকটি প্লট নিজ ও স্বামীর নামে ক্রয় করে। বিদেশ থেকে আসার পর এটা জানতে পারেন শহিদউল্যাহ।
শহীদ উল্যাহ জানান, এ ঘটনার সাথে আমার ভায়রা তাজুল ইসলাম ও রীনার ভাইয়ের জড়িত রয়েছে।
রীনা আক্তার শিল্পীর সন্দেহজনক আচরণ, সকাল-সন্ধ্যায় আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার নামে যেত দ্বিতীয় স্বামীর কাছে।
সম্প্রতি স্ত্রীর রহস্যজনক আচরণের কারণে, আমি ঢাকার একটি বাড়ী বিক্রয় করে ডেমরা বাড়ীটির দোতালা আর তিন তলার কাজ করবো বলে ঠিক করি। যখন সেই বাড়ীটি বিক্রয় করতে যাই, তখন জানলাম সেই বাড়ীটি আমার স্ত্রী তার নিজ নামে ক্রয় করেছে। পরে গ্রামের বাড়ী হাজীগঞ্জে এসে সম্পত্তির দলিল খুজতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে ঢাকা ডেমরার ডগাইর ভুট্টোরোড এলাকার মৃত হায়দার আলীর ছেলে রাসেলের সাথে ২০১৬ সালে কোর্ট ম্যারিজের মাধ্যমে বিয়ে হয় শিল্পীর। তাকে বিয়ের পরেও ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমার সাথে সংসার করে রীনা।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হলে বার বার স্থানীয় গ্রাম্য আদালতে সমাধানের জন্য ডাকা হলেও উপস্থিত হয়নি ওই নারী বা তার পরিবারের কেউ। দ্বিতীয় বিয়ের খবরটি জানাজানি হলে সাত বছর একসাথে দুই স্বামীর সংসার করার পর ৫ ফেব্রুয়ারি আমাকে তালাক দিয়ে একটি কাগজ পাঠায় রীনা।
এসব বিষয়ে ওই নারীর স্বজন তাজুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মো. জাকির হোসেন, হেলাল উদ্দিন ও মো. রবিউল হাসানকেও অভিযুক্ত করেন স্বামী শহিদ উল্ল্যাহ।
তবে রীনা আক্তার শিল্পীর বড় বোনের স্বামী আবুল হোসেন জানান, দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়েছে। শহিদ উল্ল্যাহর সাথে পুনরায় তাওবা করে বিয়ে দেওয়া হয়। তখন মেনে নিলেও এখন পাল্টে গেছে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে শহিদ উল্যাহ জানান, এ ঘটনার সাথে আবুল হোসেন পুরোপুরি জড়িত। তার যোগসাজসে আমার টাকা পয়সা ও সম্পদ আয়ত্ব করার জন্যই ফন্দি করা হয়েছে।
এদিকে শিল্পীর মোবাইল নাম্বারে তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলে ও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
রীনা আক্তারের এক মেয়ে জানান, মাকে আমরা কয়েকবার এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছি। তবে মা আমাদের কথা শোনেনি। তিনি বলেন, তিনি দুই তরকারী দিয়েই খাবেন। তার মেয়ে আরো জানা, সে এখন ঢাকায় দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সংসার করছে। আমার বাবাকে সন্ত্রাসী দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমার বাবা প্রাণ ভয়ে ঢাকার বাড়ী ও দোকানঘর ফেলে হাজীগঞ্জে চলে এসেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কেউ উপস্থিত হয়নি। তবে নিয়ম অনুযায়ী আরো ২টি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে তারা রীনা উপস্থিত না হলে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভূক্তভোগী শহীদউল্যাহ। বিষয়টি স্বীকার করেন থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ।