দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ছয় বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারে এমন জনপ্রিয়রাই পাচ্ছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
বৃহস্পতিবার সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম দিনের সভায় রংপুর বিভাগের ৩৩ এবং রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে দলটি।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিন আরও চারটি বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগের সংসদীয় আসন রয়েছে।
আজ তৃতীয় দিনের সভায় সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনশ আসনের প্রার্থী চূড়ান্তের পর রোববার বিকালে বা আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
রবিবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় গণভবনে এ সভা হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গঠিত দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সব সদস্য এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী সব প্রার্থীকে (জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মনোনয়নপত্রের রিসিভ কপি, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনলাইন ফরমের ফটোকপিসহ) যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের দ্বিতীয় দিনের সভা শেষে শুক্রবার বিকালে দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ সময় তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে নতুন মুখ যেমন এসেছে, তেমন আগের কেউ কেউ বাদ পড়েছেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, উইনেবল প্রার্থী আমরা বাদ দিইনি। নির্বাচনে জিতবে-যারা ইলেক্টেবল, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যারা উইনেবল-ইলেক্টেবল নন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন; তারা বাদ পড়েছেন। নারী-পুরুষ সব প্রার্থীর ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রথমে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই দুই বিভাগের ৫৭ সংসদীয় আসনের মধ্যে বেশিরভাগ আসনের বর্তমান এমপিরাই আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এর মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-মেহেরপুর-১ আসনে ফরহাদ হোসেন, কুষ্টিয়া-৩ আসনে মাহবুবউল আলম হানিফ, নড়াইল-২ আসনে মাশরাফি বিন মুর্তজা, বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনে শেখ তন্ময়, যশোর-৩ আসনে কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৬ আসনে শাহিন চাকলাদার, খুলনা-২ আসনে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনা-৫ আসনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ভোলা-১ আসনে তোফায়েল আহমেদ, ভোলা-৩ আসনে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-৪ আসনে আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ঝালকাঠি-২ আসনে আমির হোসেন আমু, পিরোজপুর-১ আসনে শ ম রেজাউল করিম, সাতক্ষীরা-৪ আসনে এসএম জগলুল হায়দার, পটুয়াখালী-১ আসনে আফজাল হোসেন।
শুক্রবার বিকালে ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগের সংসদীয় আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। এই দুই বিভাগেও অধিকাংশ বর্তমান মন্ত্রী-এমপিরা পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বেশ কিছু অজনপ্রিয়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং নানা কারণে বিতর্কিত কিছু এমপির কপাল পুড়েছে। সেসব জায়গায় নতুন মুখ হিসাবে তরুণ প্রার্থীরাই প্রাধান্য পেয়েছেন। আজ তৃতীয় দিনের বৈঠকে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র জানায়, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুটি জরিপ গুরুত্ব দিচ্ছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত কিছু দলীয় ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে মাঠ জরিপ করিয়েছেন। এসব জরিপ রিপোর্টে যেসব মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের ব্যাপারে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন, তৃণমূলে কোন্দল-দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। তবে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়। একই সঙ্গে ভোটারদের কাছে অবস্থান, জনপ্রিয়তাসহ নানা ক্রাইটেরিয়ায় মার্ক পাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সব মিলিয়ে যাদের মার্ক বেশি তারাই পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন।
এর আগে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন বোর্ডের প্রথম দিনের সভায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২টি সংসদীয় আসনের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ। এই বিভাগের বেশ কিছু বিতর্কিত বর্তমান এমপি বাদ পড়েছেন দলীয় মনোনয়ন থেকে। তাদের জায়গায় তালিকায় স্থান পেয়েছেন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন মুখ। তবে বর্তমান এমপিদের মধ্যে অনেকেই এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বলে দলীয় সূত্র আভাস দিয়েছে।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-পঞ্চগড়-২ আসনে নুরুল ইসলাম সুজন, নীলফামারী-২ আসনে আসাদুজ্জামান নূর, রংপুর-৪ আসনে টিপু মুন্সী, দিনাজপুর-২ আসনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৪ আসনে ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৩ আসনে আবুল হাসান মাহমুদ আলী, দিনাজপুর-৫ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান, দিনাজপুর-৬ আসনে শিবলী সাদীক, জয়পুরহাট-২ আসনে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নওগাঁ-১ আসনে সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ-৫ আসনে নিজাম উদ্দিন জলিল, নাটোর-৩ আসনে জুনাইদ আহমেদ পলক, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে ডা. আবদুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আবদুল মমিন মন্ডল, পাবনা-১ আসনে শামসুল হক টুকু প্রমুখ।
তবে দুই দিনে চার বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও কৌশলগত কারণে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করছে না আওয়ামী লীগ। শনিবার না হলেও রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনের তালিকা প্রকাশ করা হবে জানিয়ে একসঙ্গে তিনশ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দুটো দিন অপেক্ষা করুন। প্রথম দিনের বৈঠক শেষে কোন বিভাগের চূড়ান্ত করা হয়েছিল তা জানানো হলেও দ্বিতীয় দিন কোন কোন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি দলটি। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যখন বিভাগের নাম ঘোষণা করি তখন ভিড় বেড়ে যায়, নির্দিষ্ট বিভাগ শুনলে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায়। কীভাবে মনোনীতদের নাম বের করা যায়। সে কারণে বিভাগের নাম ঘোষণা করছি না।
এদিকে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও কেন ঘোষণায় দেরি হচ্ছে, সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মনোনয়নের ব্যাপারটা সুনির্দিষ্ট করে এখনো বলছি না। কারণ এর মধ্যে আমরা যেসব প্রার্থী দিয়েছি, সেসব মনোনয়নে ভুল-ত্রুটিও থাকতে পারে। সেটাও সংশোধনের একটা সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমরা ঠিক করেছি, ভিন্নভাবে অর্থাৎ জেলাওয়ারি বা বিভাগওয়ারি প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। একসঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে চাই।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, তিনশ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে, এটা বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিক ও মিত্রদের যেসব আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, সেগুলো থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সেজন্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর দলীয় প্রার্থীদের কাছে দলের প্রধান শেখ হাসিনার স্বাক্ষর সংবলিত প্রতীক বরাদ্দের চিঠি প্রদানের সময় চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া নৌকার মাঝিদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও একটি করে চিঠি নেওয়া হবে।
বিএনপির ভেতর থেকে অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে : এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না সে কথাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাদের (বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নেওয়ার এখনো সুযোগ রয়েছে। হয়তো বিএনপি দলীয়ভাবে, জোটগতভাবে নাও আসতে পারে। বিএনপির ভেতর থেকে অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের কাছে খবর আছে-অনেকেই তারা প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।
সাকিব রাজনীতি করবে, জনগণের সেবা করবে : জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কত নায়ক-নায়িকা এমপি। তারা তো সরাসরি দল করে না। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। আর সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবে, জনগণের সেবা করবে। সাকিবকে ঢাকা থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাকিব বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.