হাজীগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভাধীন ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, অকটেন, পেট্টল, ডিজেল ও মবিলসহ বিভিন্ন দাহ্যপদার্থ। সরকারি কোন ধরনের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রক্যাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ এসব দাহ্যপদার্থ। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সচেতনমহল।
এছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব দাহ্যপদার্থ দিয়ে নাশকতার হতে পারে। এমন আশংকাও করছেন সরকার দলীয় ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন। যার প্রমাণও রয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে বিএনপি-জামাতের ডাকা অবরোধ চলকালীন সময়ে পৌরসভাধীন চাঁদপুর পল্লী-বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সদর দপ্তর এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেয় দূর্বত্তরা।
বিশেষ করে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ চৌরাস্তা ও হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের ডাকাতিয়া সেতুর পশ্চিম পাড় রান্ধুনীমূড়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রকাশ্যে এবং খোলামেলা ভাবে বিক্রি হচ্ছে অকটেন, পেট্টল, ডিজেল ও মবিলসহ বিভিন্ন দাহ্যপদার্থ। অথচ গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রিতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক।
হাজীগঞ্জ বাজারসহ ইউনিয়নের হাটবাজারগুলোতে দেখা গেছে, মেইন রাস্তার পাশে, মুদি দোকান, হার্ডওয়ার এন্ড স্যানেটারী দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার। এ ছাড়াও বিভিন্ন দোকানে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বাজারে লিটার হিসেবে বিশেষ করে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটারসহ বিভিন্ন ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্টল, ডিজেল ও মবিলে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এসব দোকান থেকে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি দাহ্যপদার্থ কিনতে পারেন এবং কিনছেন। গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থের এ সহজলভ্যতা এবং অবাধে বিক্রির ফলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে এসব দাহ্যপদার্থ ব্যবহার করে নাশকতামূলক কাজ করতে পারে দূর্বত্তরা।
সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্টল, ডিজেল ও মবিলসহ দাহ্যপদার্থ বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা-পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা সংক্রান্ত লাইলেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই কেবল গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিস্ফোরক দ্রব্য বা দাহ্যপদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
আর গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেটের পাশাপাশি দোকানের অবস্থান চিহিৃত ম্যাপ (মানচিত্র), ফায়ার লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন কর্তৃক সনদ থাকা বাধ্যতামূলক।
এর মধ্যে বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বা দাহ্যপদার্থ বিক্রি করা যাবে না। অথচ হাজীগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ দাহ্যপদার্থ। হাতে গোনা দুই/চারটি দোকানে সম্পূর্ণ কাগজপত্র থাকলেও বেশিরভাগ দোকানে নেই কোনপ্রকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
২০০৩ সালের দাহ্যপদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি লাইসেন্স না নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করে, তার তিন বছরের কারাদন্ড ও অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হওয়ার আইনের বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল বাজেয়াপ্ত করা যাবে বলেও আইনে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সচেতনমহলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা দরকার। নজরদারি না থাকার কারণে যত্রতত্র চলছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি। ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাজীগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী জানান, ২০১৩/১৪ সালের নদিকে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারস্থ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে একটি সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থের দোকানে আগুন লাগে। এতে বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
হাজীগঞ্জ বাজারস্থ চৌরাস্তায় দাহ্যপদার্থ বিক্রয়কারী জারা মটরস এন্ড স্টিকার হাউজের মালিক আজাদ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নিজের ও বন্ধুদের কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। প্রতিদিন শত লিটারেরও বেশি তেল লাগে। তাই তেল বিক্রি করছেন। এতে নিজের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, আবার বিক্রিও করছেন।
এসময় তিনি বলেন, তাঁর ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে। বিস্ফোরক লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য অনুমোদন নেই। তবে তিনি এসব কাগজপত্রের (লাইসেন্স/সনদ/অনুমতিপত্র) জন্য আবেদন করেছেন/করবেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা ও অপর একজন দাহ্যপদার্থ বিক্রেতা জানান, তারা ছোট ব্যবসায়ী। আইন সম্পর্কে কোন ধারণা তাদের নেই। কাষ্টমারের (ক্রেতা) চাহিদা থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারি গ্যাস সিলিন্ডার এবং অকটেন, পেট্টল, ডিজেল ও মবিল এনে খুচরা বিক্রয় করছেন।
হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের লিডার মোতালেব হোসেন জানান, সরকারি অনুমিত (লাইসেন্স) ব্যতিত কেউ গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যে হারে দূর্ঘটনা বাড়ছে, তা থেকে রক্ষা পেতে হলে, সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা আছে। যত্রতত্র বিক্রির সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে শিঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.