ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নিজের মালিকানাধীন গাছে সাবল দিয়ে কুপিয়ে মিথ্যে গল্প রচনা করে অন্যকে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে আব্দুল আজিজ মিজি নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এ যেন নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা! পৌর এলাকার ১ নং ওয়ার্ডের উত্তর কেরোয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা পুলিশের সদস্যরা। স্থানীয়দের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে যানা যায় এ গল্পের কাহিনী।
স্থানীয়দের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ওই গ্রামের মিজি বাড়ির বাসিন্দা মৃত আব্দুল লতিফ মিজির ছেলে আব্দুল আজিজ মিজি (৫০) ও প্রতিপক্ষ মো. সুলতান আহমেদ’র ছেলে মো. আক্তার হোসাইন (৩০) একই বাড়ির বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল আজিজ মিজি অন্যস্থানে বসতবাড়ি করে বসবাস করে আসছে। পুরাতন বাড়ীতে নিজের দাবীকৃত একটি সম্পত্তি রয়েছে তার। অন্য এক পক্ষের কাছে সম্পত্তিটি বিক্রি করলেও রেজিষ্ট্রি দেয়া হয়নি। এ সম্পত্তিকে পুঁজি করে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানীর নিল নকশা তৈরী করে আসছে আব্দুল আজিজ। পূর্বে এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে এমন হয়রানীর তথ্য পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি সময়ে আব্দুল আজিজ মিজির এমন হয়রানীর শিকার হয়েছেন আক্তার হোসেন নামে এক যুবক। শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সমাজে নম্র ভদ্র হিসেবে পরিচিত আক্তার হোসেন’র বিরুদ্ধে এমন ঘটনা রচনার বিষয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।
সরেজমিনে ওই বাড়ির বাসিন্দা জুয়েল হোসেন, আবুল খায়ের, গৃহবধু রোকসানা আক্তার সহ আরো অনেকে জানান, বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর মানুষ যখন ঘুমে। ঠিক তখনই আব্দুল আজিজ মিজি তার নতুন বাড়ি থেকে পুরাতন বাড়ীতে এসে নিজের মালিকানাদাবী করা একটি হার্বা গাছ ও একটি নারিকেল গাছের নিছশাংষে সাবল দিয়ে কুপিয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে গাছপালা কাটা ও অন্যান্য অভিযোগ তুলে আক্তার হোসেনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দায়ের করে। এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা ডিবি পুলিশের সদস্যরা।
আক্তার হোসেন’র বৃদ্ধা মা ফরিদা বেগম বলেন, ফজরের নামাজ শেষে আমি প্রতিদিনের ন্যায় কোরআন তেলোয়াত করছি। এমন সময় বাহিরে উচ্চ শব্দ শুনে গিয়ে দেখি আব্দুল আজিজ মিজি নিজে গাছের গোড়ায় সাবল দিয়ে কোপাচ্ছে। আমাদের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশিরা আসলে আব্দুল আজিজ ঘটনস্থল থেকে চলে যায়। এ কথার সত্যতা নিশ্চিত করেছে নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক ওই বাড়ির অন্যান্য পুরুষ ও মহিলারা।
মিথ্যে গল্প রচনা করে নিরিহ মানুষকে হয়রানী করার কারনে আব্দুল আজিজ মিজির এমন ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে আব্দুল আজিজ মিজির বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজনও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার আমিন মিজি বলেন, আব্দুল আজিজ মিজির আহ্বানে ঘটনা সম্পর্কে কয়েকবার অবগত হয়েছি। মুলত মানুষকে হয়রানী করায় মনে হচ্ছে তার নেশা। সমাধান অন্যরা চাইলেও পকৃতপক্ষে আব্দুল আজিজ মিজি নিজেই করতে চায়না।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দায়িত্বরত সহকারি উপপুলিশ পরির্দশক (এএসআই) মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের আলোকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জানতে পেরেছি সম্পত্তিগত একটি বিষয় রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এর পূর্বে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে অবগত স্থানীয়দের মাঝে নিরপেক্ষ কয়েকজন গন্যমান্য ব্যক্তি ও উভয়পক্ষকে বলেছি কাগজপত্র নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসার জন্য। পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, আক্তার হোসেন নামের ওই যুবক এলাকাতে নম্র ভদ্র হিসেবে জানি। শুধু তাই নয়, নতুন প্রজন্ম গড়ার কারিগর একজন শিক্ষকও বটে। বিনা কারনে মানুষকে হয়রানী করা ঘৃনিত কাজ। যেহেতু প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আছে, আশাকরি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।
হয়রানির শিকার আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- উনি নিজে নিজের গাছ কেটে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। দলিলে উনার সম্পত্তি হলো ৮ কিন্তু উনি জোর করে ১০ খাচ্ছে। এরপরও সে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমি বার বার বলেছি যেটা সঠিক সেটা আমার বিপক্ষে গেলেও মেনে নিবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.