চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন ঈদগাঁ বাজার মসজিদের সাবেক প্রবীণ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার বিকেলে ঈদগাঁও বাজার ফেরিঘাট ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় (মজিদ শেখ এর দোকানের সামনে) প্রকাশ্যে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী এই হামলার ঘটনা ঘটায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ছুটে এসে গুরুতর আহত ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামীদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত জায়গা জমি নিয়ে শত্রুতা চলছিলো। ঘটনার দিন ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানের পারিবারিক সম্পত্তিগত বিষয়ে জমি ক্রয়ের জন্য নগদ ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে চাঁদপুর থেকে ট্রলারযোগে ফেরিঘাট ঈদগাঁও বাজার এলাকায় যায়। বিবাদীগণ পূর্বে থেকেই জমি ক্রয়ের টাকা লেনদেনের বিষয় টি জানতে পেরে পথিমধ্যে ৫-৬ জন লোক তার পিছু নেয়। কিন্তু তিনি বিষয়টি বুঝতে পারেননি। পরবর্তীতে পরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা মাওলানা মিজানুর রহমান ঈদগা বাজার পৌঁছানোর আগেই ঈদগাহ মাঠে ফাঁকা জায়গা পেয়ে তাকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে অতর্কিত হামলা করে। এতে মাওলানা মিজানুর রহমান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপরও সন্ত্রাসীরা তাকে বেধড়ক মারধর করে তার কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মাওলানা মিজানুর রহমান গুরুতর আহত অবস্থায় ঈদগাহ মাঠে পড়ে থাকে। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন ও পথচারীরা দেখে মাওলানা মিজানুর রহমানকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, মিজানুর রহমানের জমি বায়নার খবর শুনতে পেয়ে বিবাদীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুযোগ বুঝে টাকা ছিনতাই ও মাওলানা মিজানুর রহমানকে হত্যা করার পরিকল্পনাও করেন। মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী মৃত সিরাজ পাঠানের ছেলে মনির পাঠান (৪০), মৃত সিদ্দিক আলী গোলদারের ছেলে আবু তাহের গোলদারের (৫৫), মৃত-বশির ঢালীর তিন ছেলে মফিজ ঢালী (৩৫), সিয়াম ঢালী (২৭), ও তাজল ঢালী (৪০) এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্য ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
এ বিষয়ে ইমাম মিজানুর রহমান বলেন, আমি হসপিটালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ করতে যাই, সেখানে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি ও বাধা প্রদান করা হয়। পরে আমি চাঁদপুর বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করি। তিনি বলেন, বিবাদী গন অনেক ক্ষমতাধর ও খারাপ প্রকৃতির লোক, তারা যে কোনো সময় আমার এবং আমার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
প্রবীণ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানের উপর হামলার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় নজরুল ইসলাম, মহিলা মেম্বারের স্বামী স্থানীয় দোকানদার আবু সাঈদ ও সুফিয়ান বেপারী জানান, ঘটনার দিন আমরা ঈদগাঁ বাজার মাঠের পাশে দোকানে বসা ছিলাম, হঠাৎ দেখি ডাক চিৎকার শুনা যাচ্ছে। সামনে এগিয়ে দেখি মনির পাঠান সহ আরো ৫-৬ জন লোক মিলে আমাদের এলাকার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানকে বেধরক ভাবে মারধর করছে। এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা ডাক চিৎকার করলে এলাকার কিছু মানুষ ছুটে আসে। পরে মনির পাঠানসহ সন্ত্রাসীরা চলে যায়। আমরা এগিয়ে আশায় মনির পাঠান আমাদেরকেও গালাগাল ও হুমকি দিতে থাকে।
এই ঘটনা স্থানীয় মুসল্লী ও জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছে, একজন প্রবীন বয় বৃদ্ধ ইমামের উপর এ ধরনের ঘটনা মানা যায় না। অবিলম্বে এর বিচার করতে হবে। ইমামের উপর হামলার সুষ্ঠু বিচার না হলে মসজিদের মুসল্লী ও এলাকাবাসী মসজিদ থেকে বেরিয়ে বিচারের দাবিতে আন্দোলন করবে।
অভিযুক্ত মনির পাঠানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের সাবেক চেয়ারম্যান জিতু বেপারী আমাকে বলেছে হুজুরের জমি জমার বিষয়গুলো সমাধান করে দেওয়ার জন্য। আমি ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানকে এই কথা বলতে গেলে সে আমার সাথে উচ্চ বাক্য ও গালিগালাজ করতে থাকে, এতে আমি উত্তেজিত হয়ে তার গায়ে হাত তুলি। তবে কোন টাকা পয়সা আমি নেইনি।
এ বিষয়ে চরসেনসাস ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিতু বেপারী বলেন, ঈদগাহ বাজার মাঠে শুক্রবার বিকেলে একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেটি আমি জেনেছি। বিষয়টি তাদের জমিজমা সংক্রান্ত। এ ব্যাপারে আমি ততটা জানিনা, তবে মনির পাঠান আমাকে বলেছে আমাদের এলাকার সাবেক ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমানের সাথে তাদের একটি জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। আমি বলেছি নিজেরা বসে ঝামেলা শেষ করতে।