হিমালয় লবণ বা হিমালয়ান লবণ বা গোলাপি লবণই বাজারে পিংক সল্ট হিসেবে পরিচিত। এই লবণে প্রায়শই খনিজ পদার্থের কারণে গোলাপী আভা থাকে, এটি প্রাথমিকভাবে বিশুদ্ধ খাবার লবণ হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবে রান্না এবং খাবার তৈরি , লবণ বাতি এবং লবণ পানি দিয়ে চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়। হিমালয় লবণকে প্রায়ই দাবি করা হয় যে এটির স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
লবণ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু কাঁচা লবণ বা সাদা লবণ বেশি পরিমাণে খেতে বারণ করে ডাক্তাররা। কারণ এতে ঝুঁকি থাকে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার। আবার শরীরে লবণের পরিমাণ কমে গেলে, সেখানেও অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এমন অবস্থা তাহলে কী করণীয়! সাধারণ লবণের পরিবর্তে হিমালয় লবণ বা পিংক লবণ বেছে নিন।
হিমালয়ের পাদদেশের কাছে পাকিস্তানের অঞ্চলে এই লবণ পাওয়া যায়। এই লবণ কম পরিশোধিত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নেই। এটি একটি প্রাকৃতিক লবণ। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নগণ্য। এই লবণকে হিমালয় লবণ বা পিংক লবণও বলা হয়। এই লবণ আপনার ত্বককে ভালো রাখতে এবং অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। পিংক লবণের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিযুক্ত উপাদান। পিংক লবণ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও ব্যবহার করা হয়। এই লবণের একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাই এই লবণের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
পিংক লবণ বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
– পিংক লবণ এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। যদি আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, তবে আপনি পিংক লবণ খেতে পারেন। আপনি সাধারণ লবণের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
– ওজন কমাতে পিংক লবণ খাওয়া যেতে পারে। এজন্য হালকা গরম পানিতে এই লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। এটি খেলে ওজন দ্রুত কমে যায়।
– পিংক লবণ ও লেবু খেলে মেটাবলিক রেট ভালো থাকে। এটি পরিপাকতন্ত্রকেও সুস্থ রাখে।
– এ ছাড়াও আপনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পিংক লবণ খেতে পারেন। এটি রক্তচাপের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে।
– স্ট্রেস এবং বিষণ্নতা কমাতে পিংক লবণ খাওয়া যেতে পারে।
– পিংক লবণ শরীরের ব্যথা এবং হাড়ের ব্যথার জন্যও উপকারী।
– প্রতিদিন পিংক লবণ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
– অ্যাজমা এবং আর্থ্রাইটিস রোগীদের সাধারণ লবণের পরিবর্তে এই লবণ খাওয়া উচিত। এটি একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের মতো কাজ করে।
– এটি আপনার শরীরে পানির অভাব হতে দেয় না। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখে।
– এটি আপনার শক্তি বাড়ায়। কারণ এই লবণে রয়েছে শক্তি বৃদ্ধিকারী খনিজ উপাদান।
– এটি হার্টকেও সুস্থ রাখে। এটি হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়।
এদিকে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের জেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন...
– পিংক লবণ হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো বেশ কিছু খনিজ উপাদান রয়েছে, যা হাড়ের গঠন ও ঘনত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পিংক সল্ট নাম শুনেই খাওয়ার আগ্রহ জন্মায়। এখন সবাই জানেন, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া ভালো নয়। তবে অনেকের ধারণা, পিংক সল্টে ততটা ক্ষতি নেই। কয়েক বছর আগে থেকে পিংক সল্ট বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
সাধারণ লবণের মূল উপাদান সোডিয়াম ক্লোরাইড। এখান থেকে আমরা শুধু সোডিয়াম ক্লোরাইডই পেয়ে থাকি। কিন্তু পিংক সল্টে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পাশাপাশি অনেক ম্যাক্রো-মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়।
যেমন সোডিয়াম ক্লোরাইডের পাশাপাশি আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্রোমিয়াম, সালফেট, জিংকসহ অনেক নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়। সাধারণ ও পিংক সল্টে এটাই হলো মূল পার্থক্য।
এত গুণ থাকা সত্ত্বেও পিংক সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কেন?
প্রথমত, আমরা লবণ খাই শুধু সোডিয়াম ক্লোরাইডের জন্য। সাধারণ লবণে ৯৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে। অন্যদিকে পিংক সল্টেও ৯৬-৯৭ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে।
কিন্তু পিংক সল্ট সাধারণ লবণের চেয়ে বেশি দামি। তাই এত ব্যয় করে সোডিয়াম ক্লোরাইড পেতে পিংক সল্ট কেনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা ঠিক, পিংক সল্টে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে, যেমন: ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম, জিংক ইত্যাদি নিউট্রিয়েন্ট। তবে এসব উপাদান আমরা সারা দিনের স্বাভাবিক খাবার থেকেই পাই।
দ্বিতীয়ত, সাধারণ লবণের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে আয়োডিন। সাধারণ লবণে আয়োডিন ফর্টিফাইড করা থাকে, যা পিংক সল্টে থাকে না। আমাদের শরীরে প্রতিদিনের আয়োডিনের চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয়ে থাকে সাধারণ লবণে। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে আয়োডিনের পরিমাণ খুব কম থাকে। এর পরিমাণ অঞ্চলভেদে বিভিন্ন। যেমন: চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাবারে বেশ কিছুটা আয়োডিন থাকলেও রংপুর অঞ্চলে এর পরিমাণ খুবই কম।
সে ক্ষেত্রে আয়োডিনের চাহিদা পূরণে সাধারণ লবণের ওপরে নির্ভর করতে হবে। দীর্ঘদিন পিংক সল্ট খেলে শরীরে আয়োডিনের অভাব হতে পারে। আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ যেমন গলগণ্ড, থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
একসময় এসব রোগ ব্যাপক হারে ছিল। শুধু ফর্টিফাইড করা আয়োডিনযুক্ত লবণ খেয়ে ধনী, গরিব এবং মধ্যবিত্ত—সব শ্রেণির মানুষ আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিহত করেছে।
আবার পিংক সল্টে কিছুটা পটাশিয়াম থাকায় এটা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই না বুঝে শুধু হুজুগে পিংক সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন নেই, সাধারণ লবণেই ভরসা রাখুন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.