মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :
হাজীগঞ্জে আবারও বালুবাহী ড্রাম ট্রাক ও সিএনজিচালিত স্কুটারের মুখোমুখি সংর্ঘষে প্রবাসী স্বামী ও অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. সবুজ হাওলাদার (৩০) এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওমান প্রবাসী মো. মোজাম্মেল হোসেন (৪০) ও তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী পিংকি বেগম (৩০) মারা যান। এ ঘটনায় সিএনজি চালক ও অপর এক যাত্রীসহ দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের গোগরা গ্রামের ফারুক মেম্বার (ইউপি সদস্য) বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. সবুজ হাওলাদার গোগরা গ্রামের হাওলাদার বাড়ির রফিক হাওলাদারের ছেলে এবং প্রবাসী মোজাম্মেল হোসেন একই ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বেপারী বাড়ির আবুল খায়ের বেপারীর ছেলে ও পিংকি বেগম মোজাম্মেলের স্ত্রী।
আহত ফরিদ (২৫) হলেন নিহত পিংকি বেগমের ভাই। সিএনজি চালক আকতার হোসেনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ দিকে এর আগে একই এলাকায় গত ৬ মে (সোমবার) দুপুরে বালুবাহী ট্রাক ও সিএনজিচালিত স্কুটারের মুখোমুখি সংর্ঘষে বাবা আবু তাহের মোল্লা (৫৫) ও তার ছেলে মামুন হোসেন মোল্লা (২৫) মারা যান। নিহতরা হলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পয়ালজোশ গ্রামের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বাকিলা থেকে চাঁদপুরমুখী সিএনজিচালিত স্কুটার (চাঁদপুর থ ১১-৬৭০৪) এবং চাঁদপুর থেকে বাকিলামুখী বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের (কুমিল্লা ঠ ১১-০৩২৭) মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাৎখনিক স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে ঘটনাস্থলে সবুজ হাওলাদারকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান এবং আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াদের মধ্যে আব্দুল আহাদ নামের একজন সংবাদকর্মীদের জানান, আহতদের চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাম্মেল হোসেন ও তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী পিংকি বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আহত আকতার হোসেন ও ফরিদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি দেন। এ দিকে সড়ক দুর্ঘটনার পর সড়কের দুই দিকে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ ও এ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীরা।
খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সড়ক থেকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও সিএনজিচালিত স্কুটারটি সরিয়ে যানজট মুক্ত করেন এবং নিহত সবুজ হোসেনের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় শরীফ হোসেন জানান, জোরে (বিকট) একটি শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখি এক মর্মান্তিক ঘটনা। সড়কের উপরে সবুজ হাওলাদার নামের একজন মরদেহ পড়ে আছে, বাকীরা কাতরাচ্ছেন। এ সময় অন্যরা আসার পরে এক নারীসহ ৪ জন উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। এর মধ্যে একজনের মুখ থেতলিয়ে গেছে আর এক নারীর হাড়-গোড় ভেঙ্গে শরীর পুরো গোল হয়ে গেছে।
এসময় তিনিসহ স্থানীয়রা জানান, প্রবাসী মোজাম্মেল হোসেন তার স্ত্রী পিংকি বেগমকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে সিএনজি যোগে বাকিলা বাজার থেকে চাঁদপুর সদরে যাচ্ছিলেন। একই সিএনজিতে শশুর বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সবুজ হাওলাদার ও তার শ্যালক ফরিদ ওঠেন। এরপর সিএনজিটি বাকিলা বাজার পার হয়ে গোগরা ফারুক মেম্বারের বাড়ির সামনে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এ দিকে এই ঘটনার পর ড্রাম ট্রাকের চালক পলাতক রয়েছেন। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, দ্রুতগতির সিএনজিটি কোনো একটি যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে বালুবাহি ড্রাম ট্রাকের সম্মুখে পড়ে। এতে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং সিএনজিটি দুমড়ে-মুছড়ে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, ঘটনাস্থলে সবুজ এবং চাঁদপুর সদর হাসপাতালে স্বামী মোজাম্মেল ও স্ত্রী পিংকি মারা গেছেন। এ ঘটনায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও সিএনজি জব্দ করে থানায় নিয়ে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, একই এলাকায় গত ৬ মে (সোমবার) দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে একটি পিকআপ (মিনি ট্রাক) ও সিএনজিচালিত স্কুটারের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা আবু তাহের মোল্লা (৫৫) ও তার ছেলে মামুন হোসেন মোল্লা (২৫) মারা যান। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হন, নিহত আবু তাহের মোল্লার বড় ভাই কেরামত আলী (৭৫) এবং একই ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের শাহআলম (৬০) ও মনির হোসেন (৬০)।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.