প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ৪:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৬, ২০২৪, ৯:১৫ অপরাহ্ণ
পবিত্র ঈদুল আযহায় যাতায়াতে দেশের সড়ক মহাসড়কে ৩০৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত ১৮৪০ জন আহত হয়েছে। এসময়ে রেলপথে ২২ টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, ০৪ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ০৬ টি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, ০৬ জন আহত এবং ০৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৭ টি দুর্ঘটনায় জন ৪৮৮ নিহত ও ১৮৫০ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমিতির পর্যবেক্ষনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ২৬ জুন বুধবার সকালে নগরীর বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষন ২০২৪ প্রকাশকালে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের ন্যায় এবারো প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানীর বিষয়টি দীর্ঘ এক দশক ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভাল ছিল। ঈদের আগে ৩ দিন সরকারি ছুটি থাকায় যাত্রী চাপ কিছুটা ভাগ হয়েছে। দেশে ঈদযাত্রায় মোট যাতায়াতের প্রায় ৭ থেকে ৯ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতা ছিল লক্ষ্যনীয়। তবুও ছোট ছোট যানবাহন বিশেষ করে ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা ব্যাপকহারে বাড়ার কারনে কোন কোন সড়কে এসব যানবাহন হঠাৎ করে জাতীয় মহাসড়কে উঠে আসার কারনে, কোন কোন জাতীয় মহাসড়কে এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, এছাড়াও সড়কে চাঁদাবাজি, ফিটনেস বিহীন যানবাহন চলাচল, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহনসহ নানা কারনে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। একই সাথে সড়কে ভাড়া নৈরাজ্যের কারনে নি¤œ আয়ের লোকজন ফিটনেস বিহীন যানবাহন ও খোলা ট্রাকে যাতায়াতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১০ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যমতে ৩০৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ৭৬২ জন আহত হয়েছে। অপর দিকে, ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ঈদের আগে পরে ১৪ দিনে ১০৭৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাত বা পা ভেঙে ভর্তি রোগী ৪৭৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর ১৫ শতাংশ হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যায়। সেই হিসেবে এবারের ঈদে ৪৫৮ জন নিহত ও ১৮৪০ জন আহত হয়েছে। দেশে প্রায় ৯ হাজার সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত কতজন রোগী ভর্তি হয়েছে তা জানানোর জন্য বিআরটিএর কাছে দাবী জানান।
বিগত ২০২৩ সালের ঈদুল আযহায় ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত ও ৫৪৪ জন আহত হয়েছিল। তার সাথে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১১.৫৫ শতাংশ, প্রাণহানী ৫৩.১৭ শতাংশ, আহত ২৩৮.২৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৩২ মোটরসাইকেল দুঘটনায় ১৩০ জন নিহত, আহত হয়েছে ৫৯৯ জন । যা মোট দুর্ঘটনার ৪২.৭১ শতাংশ, মোট নিহতের ২৮.৩৮ শতাংশ, মোট আহতের ৩২.৫৫ শতাংশ।
এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় ৫১ জন চালক, ১১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৮ জন পথচারী, ৬১ জন নারী, ২৪ জন শিশু, ১৪ জন শিক্ষার্থী, ০১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য (০১ সেনাবাহিনী), ০৩ জন শিক্ষক, ০২ জন মুক্তিযোদ্ধা, ০৩ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার পরিচয় মিলেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য গনমাধ্যম ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর জরুরি বিভাগের ভর্তির তথ্য বিশ্লেষন করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।
সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৮.৩৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১.৩৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৪.৫৭ শতাংশ ব্যাটারিরিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ১৩.৭৭ শতাংশ বাস, ৯.৯৮ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.৭৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা ও ৬.১৮ শতাংশ সিএনজি অটোরিক্সা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।