মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্ :
চাঁদপুরের পাঠক প্রিয় সাপ্তাহিক ত্রিনদীর পত্রিকার প্রিন্ট ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি জানতে পেরে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ নামক হাজীগঞ্জ সেতুর পিলার (পায়া) সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের হাজীগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতসহ সেতুটির ৪টি পিলারের সংস্কার জরুরি উল্লেখ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গত সোমবার (১ জুলাই) লিখিতভাবে অবহিত করেন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ।
সড়ক বিভাগ, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর (সওজ) বরাবর লিখিথ ওই অবহিত পত্রে (স্মারক নং- ২৮৬) উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর সড়ক বিভাগাধীন সড়ক উপ-বিভাগ হাজীগঞ্জ এর আওতাধীন হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ (জেড-১৪২২) সড়কের ১ কিলোমিটারে ডাকাতিয়া নদীর উপর হাজীগঞ্জ ডাকাতিয়া সেতুর ১ম স্পেনের ১টি পায়ার ২টি স্থানে (৯০০ মি.মি.* ৩৫০মি.মি) ও (৩০০ মি.মি.* ২০০মি.মি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (ছবি সংযুক্ত)
উক্তর সেতুর নিচ দিয়ে প্রতিনিয়ত বালিবাহী ভলগেট, সিমেন্ট ও মৌসুমি ফল বহনকারী ট্রলার চলাচলের ফলে ঘর্ষন/ধাক্কাজনিত কারণে সেতুতে বিদ্যমান ৪টি পায়ারই (পিলার) কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে/হচ্ছে। এমতাবস্থায় উল্লেখিত সেতুর পায়ার ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করাসহ ৪টি পায়ার কম বেশি সংস্কার কাজ জরুরি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) ‘মেজর রফিকের নির্দেশ উপেক্ষিত, দুই বছরেও সংস্কার হয়নি হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সেতুর পিলার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের বক্তব্যের জন্য সচিত্র ছবি নিয়ে গত রোববার (৩০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের হাজীগঞ্জ সড়ক উপ-বিভাগ কার্যালয়ে যান আমাদের প্রতিবেদক।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, আগামি ১৬ জুলাই চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের নির্দেশনার দুই বছর পূর্ণ হবে। অথচ এখনো সংস্কার করা হয়নি, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ নামক ‘হাজীগঞ্জ সেতু’র পিলারটি। ২০২২ সালে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো একদিন বালুবাহী ব্লাকহেডের ধাক্কায় সেতুর একটি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ওই স্থানে ঢালাই ভেঙে দুটি রিংসহ কয়েকটি রড দেখা গিয়েছিল।
বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের নজরে আনেন, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বি। পরে জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই সংবাদগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের দৃষ্টিগোছর হলে ওই সময়ে তিনি তাৎখনিক ইউএনওকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দেন।
পরবর্তীতে ওই বছরের ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি আকতার ট্রেডার্স, তাহের ট্রেডার্স ও এমদাদ মজুমদার ট্রেডার্স নামক তিনটি বালুমহালকে নগদ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে সেতু থেকে নির্দিষ্ট দুরত্মে বালুমহাল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর ১৬ জুলাই (শনিবার) দুপুরে সেতুটি সরজমিন পরিদর্শন করে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বলেন, সেতুর পিলারটি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমার দেখা মতে তা আশংকাজনক নয়। তারপরও বিষয়টি সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ দেখবে এবং তা সংস্কার করবে। এছাড়াও কেন, কি কারণে পিলারের রড দেখা যাচ্ছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
সেতু পরিদর্শনকালে মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপির সাথে উপস্থিত ছিলেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী রেজওয়ানু রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রমিজ উদ্দিন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ, প্যানেল মেয়র-১ জাহিদুল আযহার আলম বেপারীসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বালুমহাল ব্যবসায়ীরা।
আগামি ১৬ জুলাই সাংসদ মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের নির্দেশনার দুই বছর পূর্ণ হবে। অথচ এখনো সংস্কার হয়নি পিলারটি।
দেখা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সেতুর নদীর উপর চারটি পিলার রয়েছে। সেতুর উত্তর পাশে দুইটি পিলারের মধ্যে পশ্চিম পাশের পিলারটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ২০২২ সালের জুলাই মাসের কোনো এক সময়ে ব্লাকহেডের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ পিলারটির পাথরের আস্তরন উঠে ৩টি রিং (দুইটি দৃশ্যমান) ও ৮টি খাড়া (দাঁড়ানো) রড দেখা গেছে। তখন দেখা যাওয়া রডগুলোতে জং (মরিচা) ধরেনি।
সোমবার (১ জুলাই) পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বর্তমানে দেখা যাওয়া রিং ও খাড়া রডে জং ধরে খসে পড়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি একই পিলারের উত্তর পাশে নতুন করে আরও একটি খতের সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থানটিতেও ব্লাকহেডের ধাক্কায় পাথরের আস্তরন উঠে গেছে এবং রড দেখা যাচ্ছে। দেখা যাওয়া তিনটি রিং (দুইটি দৃশ্যমান) ও ৪ টি খাড়া রডে জং ধরেছে।
এদিকে একই পিলারে একাধিক স্থানে পাথরের আস্তরন উঠে রড দেখা যাওয়ায়, সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা। তা না হলে, এক সময় সেতুটি ঝুঁকিপূণ হয়ে উঠবে এবং মাত্র একটি পিলারের জন্য পুরো সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নোয়াখালি-লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরসহ তিন জেলার মানুষ। তাই, স্থানীয় ও এলাকার লোকজন দ্রুত সেতুর পিলারটি মেরামত (সংস্কার) করার দাবি তুলেছেন।
তারা আরও জানান, নদীতে প্রচুর পরিমানে ব্লাকহেডসহ মালবাহি ট্রলার আসা-যাওয়া করে। তাই সেতুটির চারটি পিলারেই নিরাপত্তা বেস্টনির প্রয়োজন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, পিলারটি সংস্কার করা হবে কিন্তু ব্লাকহেড ও ট্রলার চলাচল-তো বন্ধ হবে না। আবারও যে পিলারে ব্লাকহেড বা ট্রলারের ধাক্কা লাগবেনা, তার-তো নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
এ বিষয়ে স্থানীদের সাথে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপি মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুই বছর পার হয়ে গেছে, তারপরও সিএন্ডবি (সড়ক ও জনপথ) লোকেরা (কর্তৃপক্ষ) কাজ করেনি (পিলারটির সংস্কার হয়নি)। আমরা চাই, এমপি মহোদয় ব্যবস্থা নিক এবং বড় ধরনের ক্ষতির আগেই (পূর্বে) পিলারটি ঠিক করা হোক।
এ ব্যাপারে কথা হয় সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগ, হাজীগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ এর সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি এবং এমপি মহোদয়ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শুনেছি। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি কোনো দেয়াল নয়। যে বালু-সিমেন্টের প্রলেপ দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টি দেখে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসময় তিনি তাৎখনিক উপস্থিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলিউল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি ও পরে ব্যাক না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.