মহিউদ্দিন আল আজাদ:
কখনো এখানেতো আবার দেখা মেলে ওখানে। ওরা প্রতি সপ্তাহে গ্রাম পাল্টায়। নৌকায় চলে ওদের সংসার জীবন। বাংলাদেশের একটি বিস্ময়কর পেশাভিত্তিক জনগোষ্ঠী সম্প্রদায় হলো বেদে পরিবার। তাদের জীবনযাপন, আচার-আচরণ সবই চলছে ভিন্ন রীতিতে।
যেখানে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব অসীম, খুব সামান্য অনুষঙ্গ নিয়ে নৌকা কেন্দ্রিক গোটা জীবন কাটিয়ে দেয় এই সম্প্রদায়ের একাংশ!
বেদেরা বাংলাদেশের অতি পরিচিত প্রান্তিক যাযাবর গোষ্ঠী। ভূমিহীন এই মানুষেরা দলবদ্ধভাবে নৌকাতে বাস করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এদের বসবাস। বিশেষ করে নদীর পাড়ে বা পতিত জায়গায় তাদের বসবাস গড়ে ওঠে বা চোখে পড়ে বেশি।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে এমনই এক বেদে পল্লীর দেখা মিলল চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পেছনে ডাকাতিয়া নদীতে।
কথায়-কথায় ভাব হয় বেদে পল্লী সরদার জামালের সঙ্গে। সরদার হচ্ছে বেদে সম্প্রদায়ের একটা পল্লীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।
ত্রিনদীকে তিনি বলেন, বেদেরা পেশা ও জীবিকার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন বংশ বা গোত্রে বিভক্ত। বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা মোট নয়টি শাখায় বিভক্ত। এগুলো হলো- লাউয়ো, চাপাইলা, বাজিকর, বেজ, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল ও সাপুড়িয়া।
মিস্টার আবুল হোসেন জানান, আমাদের এই পল্লীতে রয়েছে সওদাগর বংশ। এই বংশের মেয়েরা মূলত বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে সিট কাপড়, থ্রি-পিস এবং নারীদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করে। জীবন-জীবিকার তাগিদে বেদেরা ছুটে বেড়ায় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়। পেশাগত কারণেই মূলত বেদেরা এক এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে না।
অন্যদিকে বেদে পুরুষরা খাওয়ার জন্য নদী থেকে মাছ ধরে ও নৌকায় রান্নাবান্না করে ছেলে মেয়েদের দেখাশোনা করে।
তিনি বলেন, বেদে পল্লীতে মেয়েরা মাতৃত্বকালীন সময়ে তেমন কোনো ভালো চিকিৎসা পায় না। আমরা যাযাবর, ফলে একেক সময় একেক জায়গায় থাকি। এখন যেখানে থাকি এখানকার আশেপাশের হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যেতে-যেতে অনেক সময় নৌকার ভেতর সন্তান জন্ম দেয় মেয়েরা। তখন আমাদের বেদেদের মধ্যে যারা দাইয়ের কাজ জানেন, তাদের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারি (স্বাভাবিক প্রসব) সম্পন্ন করা হয়।
এই সম্প্রদায়ের শিশুদেরও নেই তেমন লেখাপড়ার সুযোগ। মিস্টার আবুল হোসেন বলেন, আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ হয় না। তাই তারা (শিশুরা) বাবা-মায়ের কাছ থেকে সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ কবজ বিক্রি করা শিখছে।
জাতভেদে বিভিন্ন বেদেরা হাটে বাজারে ঘুরে শিঙা লাগানো, তাবিজ বিক্রি করে যতটুকু অর্থ উপার্জন করে, তা দিয়েই বহু কষ্টে সংসার চালায়। আবার কেউ-কেউ রাস্তায় মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। সু-প্রাচীনকাল থেকেই বেদেরা কবিরাজি, ঝাঁড়ফুঁকসহ বিভিন্ন হাতুড়ে চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত বলে জানান বেদে সর্দার মিস্টার আবুল হোসেন।
তবে, তাদের দাবি অন্তত মানুষ হিসেব শিক্ষা, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো অন্তত যাতে যথাযথ পায় এই সম্প্রদায়ের মানুষ।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.