সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি পরিচয়ে দুস্থদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার আদমদীঘিতে।
আতিকুর রহমান আতিক নামে একজন উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার মালশন ও সাহেবপাড়া এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে টিসিবি, বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের জন্য দেড় শতাধিক নারী ও পুরুষের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে নিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জনগণের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তারা টাকা আদায়কারী প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার মালশন এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান ওরফে আতিক নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয় দেন। তিনি মালশন ও সাহেবপাড়া এলাকার দেড় শতাধিক দুস্থ নারী ও পুরুষদের বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, টিটিবিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কার্ড দেওয়ার নামে জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে আদায় করেন।
মালশন ও সাহেবপাড়ায় গিয়ে খোঁজ নিলে কার্ড দেওয়ার নামে টাকা আদায়ের সত্যতা মেলে। ভুক্তভোগীরা এর সত্যতা নিশ্চিত ও টাকা দিয়েও কার্ড না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী রেহেনা বেওয়া জানান, মালশন এলাকার আতিক ও তার সহপাঠীরা কয়েক দিন আগে তার বাড়িতে আসেন। তারা তাকে জানান- আদমদীঘি উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে ভোটার আইডির ফটোকপি ও ছবি নেন। এছাড়া অনলাইনে আবেদন করার ফি বাবদ ৩৫০ টাকা নেওয়া হয়।
রেহেনা বেওয়া জানান, অভাবের সংসার হলেও ভাতা পাওয়ার আশায় তিনি টাকা দিয়েছেন।
খোতেজা নামে এক নারী জানান, তার স্বামী পেশায় অটোরিকশা চালক। কয়েকজন ছাত্র গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাতার কার্ড দেওয়ার কথা বলেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে তারা তাদের প্রলোভনে রাজি হন। তখন তার স্বামীর ভোটার আইডি দেখে বয়স্ক ভাতার কার্ড করা সম্ভব বলে জানান। এতদিন কেন কার্ড করা হয়নি বলে নানা প্রশ্ন করেন। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অনলাইন খরচের নামে তার কাছ থেকে ৩৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বেকার আজিবর হোসেন (৬৩) জানান, বয়স কম থাকায় সান্তাহার পৌরসভায় গিয়েও কার্ড করা সম্ভব হয়নি। দুই দিন আগে এলাকার ছেলেরা এসে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে চাইল। বিনিময়ে তাদের চাহিদামতো টাকা দেওয়া হয়েছে।
রাকিবুল হাসান, শাহজাহান আলম, মিজানুর রহমান, সিরাজুল ইসলামসহ এলাকাবাসী জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে এলাকার কিছু ছেলে নিজেদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দাবি করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত ১৫০ জন দুস্থ নারী ও পুরুষের কাছে কার্ড করে দেওয়ার নামে ৩৫০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সান্তাহারের মালশন গ্রামে আতিকুর রহমান ওরফে আতিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয়ে কার্ড দেওয়ার নামে টাকা আদায়ে জড়িত থাকার কথা দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।
আদমদীঘি উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আল ফাহাদ জানান, আতিকুর রহমান বা আতিক নামে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। আমাদের নাম ভাঙিয়ে টাকা উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ জানান, সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পেতে টাকা দিতে হয় না। বিশেষ করে যেকোনো ভাতা সংক্রান্ত। তিনি এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2025 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.