চলতি মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে ফুলকপির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে তা নেমে এসেছে দুই থেকে তিন টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে বাজারে ফুলকপির সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে লোকসানের মধ্যেই ফুলকপি বিক্রি করছেন।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৪ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। অনুকূল পরিবেশে রোগবালাই কম থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ফলে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে গেছে।
প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ধনবাড়ী বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে অস্থায়ী পাইকারি সবজির বাজার বসে। সেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলকপি কেনাবেচা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দিনের প্রথম প্রহরেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলকপি নিয়ে চাষিরা বাজারে ভিড় জমান। তারা ভ্যানে করে ক্রেতাদের সামনে সাজিয়ে রাখেন; কিন্তু দাম নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা স্পষ্ট। দাম এতটাই কমে গেছে যে, কৃষকেরা বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ফুলকপি বিক্রি করছেন। আর অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দাম কমিয়ে দিয়েছেন।
ফুলকপি চাষি হামিদ উদ্দিন বলেন, আজ ১০০টা কপি এনেছি; কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বলছেন মাত্র ২ টাকা করে। অনেক দামাদামির পর বাধ্য হয়ে আড়াই টাকায় বিক্রি করেছি। ভালো দামের আশায় ভোরে হাঁটে এসেছিলাম; কিন্তু ভ্যানভাড়াও উঠল না।
আলমগীর হোসেন নামের আরেক চাষি বলেন, এখন দাম এতটাই কম যে, উৎপাদন খরচই উঠছে না। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেলেও এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। এত কষ্ট করে চাষ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরবরাহ এত বেশি যে, তারা সব কপি কিনতে পারছেন না।
ব্যবসায়ী কুদ্দুস আলী বলেন, আমরা সারা জেলায় কপি সরবরাহ করি। তবে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় দাম কম। চাষিদের জন্য বিষয়টি কষ্টের।
কেন্দুয়া গ্রামের চাষি জালাল বলেন, আমার জমিতে ফুলকপির আবাদে প্রতিটি কপিতে চার থেকে সাত টাকা খরচ হয়েছে। অথচ বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে পাচ্ছি দুই থেকে চার টাকা। আমাদের আসলও উঠছে না।
প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি এবং পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। মূল্য কমে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের পুঁজি হারাবার শঙ্কায়ও রয়েছেন।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, একসঙ্গে একই ধরনের চাষাবাদের পরিবর্তে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করা উচিত। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে হবে। শুরুতে ভালো দামে ফুলকপি বিক্রি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হয়েছিলেন। ফুলকপির আবাদ বেশি করায় সরবরাহ বেড়ে গেছে এবং দাম কমে গেছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন। এতে বাজারে ভারসাম্য আসবে এবং কৃষকেরা ভালো দাম পাবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2025 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.