নিজস্ব প্রতিনিধি॥
চাঁদপুর নৌ-সীমানায় নতুন কৌশল অবলম্বন করে শিশু, কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের দিয়ে মা’ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। অসাধূ জেলেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে এসব জেলেরা নিচ্ছেন এক ভয়ংকর নতুর ধরনের কৌঁশল। জেলে তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের মাধ্যমে মা’ইলিশ নিধনকালে ধরা পড়লে জেল-জরিমানার আওতায় না থাকায় তাদেরকে মাছ শিকারে নদীতে নামাচ্ছে অনেক অসাধু জেলে ও দাদনদাররা। সাঁতার না জানা এসব শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে ছোট ছোট নৌকায় করে মাঝ নদীতে গিয়ে তারা মা’ ইলিশ শিকারে মেতে উঠছে। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনা শিকার হতে পারে এ অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরা ।
চাঁদপুর নৌ-সীমানায় মা’ ইলিশ রক্ষায় ২২দিনের অভিযানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনায় মা ইলিশ শিকার করার অপরাধে কয়েক শ’জেলেকে আটকা করা হয়েছে। প্রচুর পরিমান কারেন্ট জাল, শতশত নৌকা জব্দ ও শতাধিক জেলের বিরুদ্বে মামলা ও কয়েকশ’ জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর। বিগত বছর প্রায় ৫২ হাজার জেলে খাদ্য সহায়তা পেলেও এ বছর ৪৪ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পড়েছে ৭হাজার জেলে।
জেলেরা জানান,তারা খাদ্য সহায়তা থেকে বাদ পড়ায় জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তারা আইন অমান্য করে ইলিশ শিকার করতে বাধ্য হয়েছে। খাদ্য সহায়তা পাওয়া জেলে ইয়াছিন ও হযরত আলী জানান, তারা নিষেধাজ্ঞা মান্য করে নদীতে না নামলেও অন্যজেলার জেলেরা পদ্মা-মেঘনায় এসে মা’ইলিশ নিধন করছে।
এ ছাড়া বর্তমান সময়ে দেখা যায়, বয়স্কো জেলেরা ইলিশ নিধনকালে ধরা পড়লে ভ্রাম্যমান আদালত তাদের কারাদন্ড দেওয়ার কারনে জেলেরা তাদের শিশু কিশোর বয়সী সন্তানদের মাধ্যমে অনেকে প্রতিবন্ধীদের দিয়ে মা’ইলিশ নিধন করাচ্ছে। এ সব কিশোর ও প্রতিবন্ধীরা ধরা পড়লে তাদেরকে প্রশাসন শিশু আইনে তাদেরকে জরিমানা করে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। যার ফলে জেলেরা প্রকাশে এখন এ পথ অবলম্বন করে ইলিশ নিধনে মেতে উঠছে। আর মা’ইলিশ নিধন করে প্রতিদিন লক্ষ-লক্ষ টাকার আয়ের ফলে আনন্দের তাদের সীমানেই। তারা অল্প অর্থের মালিক থাকলেও এখন তারা অনেক অর্থের মালিক লাখপতি বনে যাচ্ছে,তাদের সাথের ভাল মানের জেলেরা জানান।
মা’ ইলিশ সংরক্ষণে মা’ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুয়োগ দেওয়ার জন্য এদের নিরাপত্তায় চাঁদপুর নৌ-সীমানার মেঘনায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবেন বলে ২ অক্টোবর এক জেলে সমাবেশে জানিয়েছেন, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পংকজ চন্দ্র রায়। তবে নদীতে সে পরিমান পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি বলে জনমনে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইতে দেখা যায়।
চাঁদপুরে প্রশাসনের ব্যাপক দৃস্টি ও অভিযান থাকার পর ও তাদের চোঁখের আড়ালে ও দৃস্টিগোচর করে নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে প্রকাশ্যে প্রতিবন্ধীরা শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে পালিয়ে-পালিয়ে ব্যাপক ভাবে অসাধু জেলে ও দাদনদাররা মা’ইলিশ নিধন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে পদ্মা ও মেঘনায় মা’ইলিশ আর পানিতে সমানে-সমান। নদীতে কারেন্ট জাল ফেলা মাত্র জাঁকে-জাঁকে মা’ইলিশ জেলেদের জালে আটকা পরে নদী থেকে উঠে আসছে বলে কয়েকজন জেলেরা সাথে কথা বলে জানা যায়।
এতে করে জেলেরা সে লোভ সামাল দিতে না পেরে গোপনে তারা মা’ইলিশ ধরা অপরাধ জেনেও মা’ইলিশ নিধন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। তাদের নদীতে জাল ফেলা নিষেধ থাকলে,ও তার পরও তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে নদীতে নেমে মা’ইলিশ শিকার করছে। জেলেদের ভাষায় বর্তমানে নদীতে জাল ফেলা মাত্র মা’ ইলিশ প্রচুর জালে আটকা পড়ছে। তারা জানান, মা’ইলিশ লোনা পানি থেকে ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনা নদীর মিঠা পানিতে এসেছে। এখন নদীতে মাছে আর পানিতে সমান অবস্থান রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, অভিযান যে পর্যায়ে হচ্ছে তা’ আরো ব্যাপক ভাবে করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
এদিকে চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে লোনা পানির ও সমুদ্র এলাকা থেকে প্রচুর পরিমানে মা’ ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য এসেছে। এ সব ইলিশ ধরার জন্য অবৈধ জেলেরা নিষিদ্ব কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মা’ ইলিশ নিধন করে যাচেছ। এ সব জেলেদের প্রতিরোধ করার জন্য নদীতে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালিত হচেছনা। যার ফলে জেলেরা নিজেদের ইচছা মত প্রতিবন্ধী ও ছোট,ছোট শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে মা’ ইলিশ নিধন করে যাচ্ছে। নিধন করা মা’ ইলিশ ও অন্যান্যমাছ নদীর কুলবর্তী এলাকায় হাট বসিয়ে প্রকাশে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
মেঘনা নদীর হরিনা,আখনের হাট, দোকানঘর,বহরিয়া,আলুর বাজার, আনন্দ বাজার, কোড়ালিয়া নদীর পাড়, টিলাবাড়ি, পুরানবাজার হরিসভা, নন্দিগো দোকান, চান্দ্রা নদীর পাড়, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এ মা’ ইলিশ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অনেক অসাধূ জেলে ইলিশের লোভ সামলাতে না পেরে তাদের এলাকার প্রতিবন্ধী ও শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে প্রজনন মৌসুমের মা’ইলিশ নিধন করে দেশের সম্পদ নস্ট করে নিজেরা লাভবান হচেছ। চাঁদপুর-নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে দিনে ও রাতে অবাদে ছোট-ছোট শিশু ও কিশোরদের মাধ্যমে মা’ইলিশ নিধন করে যাচেছ। এ মা’ ইলিশ রক্ষায় জেলা টাস্কফোর্স,নৌ-পুলিশ,কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসন যৌর্থ ও ভিন্নভিন্ন অভিযান করে কারেন্ট জাল,নৌকা,মা’ইলিশ জব্দ ও জেল জরিমানা ও দন্ড দিলেও কোন সমাধান হচেছনা। জেলেরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর রেখে প্রশাসনের অবস্থান জেনে নদীতে জাল ফেলে মা’ ইলিশ নিধন করছে। এতে করে ইলিশের বংশ বৃদ্বিতে ও উৎপাদনের বাধা সৃস্টি করেই যাচেছ। জেলেরা মেঘনা নদীতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে কারেন্ট জাল পানির উপরে ভাসিয়ে না রেখে অনেক দূরে-দূরে পাতলা ককসিট জাতীয় বয়া ব্যবহার করে মা’ ইলিশ নিধন অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচেছ।
এতে করে অভিযান কালে প্রশাসন নদীতে নেমে ব্যাপক অভিযান করলেও জেলেদের কারেন্ট জাল নদীতে দেখতে পায়না। জেলেরা নদীতে কারেন্ট জাল ফেলে চলে যায়,সময় সুযোগ বুঝে জেলেরা এলাকার একটু বয়স্কো প্রতিবন্ধী ও শিশু কিশোরদের মাধ্যমে জাল টেনে নদীর তীরবর্তী স্থানে এনে বয়স্কো জেলেরা মা’ ইলিশ জাল থেকে খুলে বরফজাত করে রাখে। পরে রাতে সময় উপযোগী অবস্থা বুঝে সরকার দলীয়দের সহায়তায় মা’ ইলিশ ইঞ্জিন চালিত ট্রলার যোগে পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, এক কেজির কম ওজনের ইলিশের হালি ২৫-৩০শ’ টাকা। ১ কেজির বেশী ওজনের ইলিশের হালি ৩৮শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় গোপনে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মেঘনায় জেলা টাস্কফোর্সের অভিযান থাকলেও বিশাল এই নদী এলাকায় এক শ্রেনীর অসাধু জেলে মা ইলিশ নিধন ও আহরণ বন্ধ করেনি। তারা সুযোগ পেলেই মা’ ইলিশ শিকারে মেতে উঠে ইলিশ শিকার করছেই।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় চাঁদপুরের অসাধু কিছু জেলের সাথে জেলার বাহির থেকে এসে অনেক জেলে ইলিশ শিকারের কাজে যোগ দেয়। এরপর তারা যৌথভাবে মা ইলিশ হত্যাযজ্ঞ চালায় নিরবিচারে।
নাম প্রকাশ নাকরা বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, ইলিশ ধরতে গিয়া ধরা পড়লে জেলেদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। নয়তো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। তবে শিশুদের কোন শাস্তি দেওয়া হয় না। তাই তারা শিশুদেরকে ইলিশ শিকারে পাঠায়। তবে এই কাজটি শিশুদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বলে তারা স্বীকার করেন তারা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাসুদ পারভেজ রনি বলেন, শিশুদের তো দূরে থাক, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে কোন জেলেরই নদীতে মাছ শিকারে নামা ঠিক নয়। এভাবে শিশুদের মাছ শিকারে নদীতে নিয়ে গেলে যেকোন সময় ঝড়-বৃষ্টি বা অন্যকোন উপায়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে জীবনহানী ঘটতে পারে। শিশুদের জীবনের ঝুঁকিরোধ করতে সকলকে আরও সচেতন হওয়া দরকার।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন নদীতে অভিযানে নেমে কিছু অসাধু জেলেদের পাশাপাশি ছোট ছোট শিশু-কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের মাছ ধরতে দেখতে পাই। সাধারণত শিশুদের সাজার বাইরে রাখা হয় বলে জেলেরা কৌশলে শিশুদেরকে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত করছে। এতে করে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামীতে শিশু আইনে এসব শিশুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সে ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে কার্যক্রম চলছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা’ ইলিশ রক্ষা কল্পে যে অভিযান চলছে, জেলা টাস্কফোর্সসহ সকল সংস্থা কাজ করে যাচেছ। জেলেদের আটক করে সাজা দেওয়া হচেছ। তাতে ও তারা ভয় পাচেছনা।
কোন অবস্থাতেই যেন অভয়াশ্রমের সময়ে জেলেরা নদীতে না নামে সেজন্য প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের যেন কোন অবস্থাতেই নদীতে নামানো না হয় সে ব্যাপারে জেলেদের সচেতন করা হয়েছে। তারপরেও কিছু অসাধু অভিভাবক জেলে শিশুদের নদীতে পাঠিয়ে তাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে মা’ইলিশ নিধন করাচ্ছে। এটি কোন ভাবেই তারা ঠিক করছেনা। তবে এ বছর নদীতে যে পরিমান অভিযান চলছে,তাতে এ বছরের তুলনায় আগামী সময়ে ইলিশ উৎপাদন অনেক বেশী আশা করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.