মহিউদ্দিন আল আজাদ॥
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরায় গরুর মাংসের নামে খাওয়ানো হচ্ছে ভারত থেকে আমাদানী নিষিদ্ধ মানহীন ও পঁচা মহিষের মাংস। খাবার অযোগ্য এসব মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কম দামে তা পাওয়ায় ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন হোটেল- রেস্তোরাঁর মালিকরা।
হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাইমচর ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব মাংস বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
হাজীগঞ্জের টোরাগড়ে ফ্রিজিং করা ভারতীয় মহিষের মাংসের ডিপো থেকে মাংসগুলো চলে যায় জেলার অন্যতম হোটেল ব্যবসা কেন্দ্র হাজীগঞ্জ, চাঁদপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নামী-দামী হোটেলে। এসব হোটেলে প্রবেশের পরেই পঁচা মহিষের মাংস হয়ে যায় দেশীয় সু-স্বাদু গরুর মাংস।
হাজীগঞ্জে এক সময় বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় মেসিয়ারের কাজ করতেন মামুন। সে এখন চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রয় করে আসছে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা পঁচা মহিষের মাংস। এ সব মাংসের গায়ে লেখা নেই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। আমদানী নিষিদ্ধ এসব মাংস বিক্রয় হয়ে থাকে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বিক্রয় হওয়া হাজী বিরিয়ানিসহ দামী রেস্তোরায়। এসব রেস্তোরায় সহজে এগুলোকে দেশীয় গরুর মাংস বলে বিক্রয় করে চলছে দেদারছে। ঠকছে ভোক্তা।
দামের বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন বলেন, ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে এসব মাংস বিভিন্ন হোটেলে কালো ভূনা, বিরিয়ানি ও ভুনা খিচুড়ি তৈরীর জন্য বিক্রয় করা করা হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। আমাদানী বা বাজারজাত করার জন্য কোন কাগজ দেখাতে পারেনি মামুন।
[caption id="attachment_4562" align="alignleft" width="300"] মেয়াদ্দোত্তীর্ণ পঁচা মাংসের প্যাকেট।[/caption]
হাজীগঞ্জ উপজেলা সেনাটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. শামসুল ইসলাম রমিজ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম ও জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামুনের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে মানহীন পঁচা মাংস উদ্ধার করেছি। এটি আসলে মহিষের মাংস না গণ্ডারের মাংস তা বলতে পারছিনা।
তিনি বলেন, জেলায় মামুনসহ আরো ২ অসাধু ব্যবসায়ী আমদানি নিষিদ্ধ এ মাংস বিভিন্ন খাবার হোটেলে কম দামে বিক্রয় করে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
হাজীগঞ্জ শাহমিরান হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এ এম ওয়াসিক ফয়সাল জানান, পঁচা মাংস খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে মৃত্যও ঘটতে পারে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৭.৪ মিলিয়ন টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে ৮.৪৪ মিলিয়ন টন মাংস উৎপাদন হয়। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি। এজন্য বৈধ অথবা অবৈধভাবে মাংস আনার বিপক্ষে খাত-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে মাংস আসলে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত পশুর দাম পাবেন না। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধস নামার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে।
সরকারি হিসেবে দেশে চাহিদার চেয়ে গরু-ছাগল বেশি আছে। সেক্ষেত্রে মাংস আমদানি করা হলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এছাড়া অবৈধভাবে আমদানি করাও অপরাধ।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.