শাহরাস্তি প্রতিনিধিঃ
শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদারের বিরুদ্ধে আবারো দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলেছেন সাবেক ও বর্তমান ৪ মেম্বার।
রোববার রাতে সাবেক মেম্বারদের বেতনের টাকা না দিয়ে টালবাহানাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ও চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন সংরক্ষিত নারী মেম্বার সাবরিনা নুসরাত কবিতা ও ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শাহ মিরন।
২ মেম্বার স্বাক্ষরিত সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহকৃত লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, সূচীপাড়া (উঃ) ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদার শপথ গ্রহণ করার পর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের এন আই ডি কার্ড নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবনে অফিস না করে নিজস্ব ভাড়াটিয়া জায়গায় অফিস করেন। এতে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ সেবা কার্যক্রম সঠিকভাবে পাচ্ছে না। জনগন হয়রানীর শিকার হচ্ছে ও তিনি নিয়মিত অফিস করেন না।
ইউনিয়ন পরিষদ নিয়মনীতি মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। পরিষদের মাসিক, ত্রৈমাসিক সভা না করে চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত এক তরফা পরিচালিত করে যাচ্ছে।। ইউনিয়ন পরিষদে রেজুলেশন বিহীন কাজ ও মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্প কমিটি জমা। জনসংখ্যা অনুপাতে ওয়ার্ড ভিত্তিক কাজ ও রিলিফ বন্টন করেন না।
জন্ম নিবন্ধনে বেশী টাকা গ্রহণ ও জনগনকে হয়রানী করে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ প্রকল্প কমিটিতে চেয়ারম্যান নিজের সুবিধার জন্য নিজস্ব ওয়ার্ড মেম্বারকে সভাপতি না করে অন্য ওয়ার্ড মেম্বারকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করে প্রকল্প কমিটি জমা দেন, যা ইউনিয়ন পরিষদ নীতিমালার পরিপন্থী।
ইউনিয়ন পরিষদের এল.জি.এস.পি কাজ করার জন্য উনার নিজস্ব আত্মীয় স্বজন এর নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স যা শাহ এন্টারপ্রাইজ, রমনা কর্পোরেশন, লিমন এন্টারপ্রাইজ ও মজুমদার এন্টারপ্রাইজ নামে যার চেকবই স্বাক্ষর সহ উনার নিজের হাতে পরিচালিত করেন। যার হালনাগাদ আয় কর নেই। যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত করা যাবে। যা আইনত ভূয়া লাইসেন্স।
ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প দেখিয়ে প্রকল্প এরিয়ার বাড়ীর লোকজন হতে কাজ করার কথা বলে অর্থ গ্রহণ করে যাচ্ছে। যেমন, রাউৎ বাড়ীর রাস্তার সলিং, রাজাউল্লাহ মিঝি বাড়ীর পুকুর গার্ড ওয়াল প্রকল্প শোরসাক কাচারি বাড়ি থেকে খালপাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১৬০০ কেজি চাল বরাদ্ধ ছিল তা আত্নসাৎ করা সহ অন্যান্য প্রকল্প।
আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল বাণিজ্য, সরকারী ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ, প্রতি টিউবওয়েলে ২৫/৩০ হাজার টাকা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি। জনস্বার্থে টিউবওয়েল না দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল দিয়ে যাচ্ছে যা তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রমান করা যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড ও রিলিফ কার্যক্রম সমভাবে বন্টন না করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কে গুরুত্ব না দিয়ে উনার ছোট ভাই (হুমায়ন) ও নিকট আত্মীয় স্বজন দ্বারা রিলিফ কার্ড করা ও বিতরন করে থাকে। ২ দিন আগে শাহ মিরন মেম্বারের বিরুদ্ধে সুলতানের নামের চাউলের কার্ডের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করা হয়েছে। সাবরিনা নুশরাত কবিতা মেম্বারের বিরুদ্ধে পেয়ারা বেগম ও হারুনুর রশিদ যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
মহিলা মেম্বার সাবরিনা নুসরাত কবিতা সাংবাদিকদের আরও জানান, গত শনিবার চেয়ারম্যান ও তার ভাই হুমায়ুন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ আনায় তার উপর হামলা করে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করেছে।
একই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী মেম্বার শিল্পী বেগম জানান, তার আগের প্রয়াত নূরজাহান মেম্বারের জানাজায় দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান ওয়াদা করেছিলেন তিনি নূরজাহান মেম্বারের বকেয়া বেতন দিয়ে দিবেন। ওনার বেতন তো দূরের কথা, উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর আমি ১ মাসেরও বেতন পাইনি। চেয়ারম্যান আমাকে কোন প্রকল্প দেন নি। শুধু শুধু বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হয়ে আমি সেখান থেকে কোন আর্থিক সহায়তা পাই নি।
৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ হাতেম আলী জানান, তিনি গত ৫ বছর মেয়াদকালে ৫৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওই ইউনিয়নে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ইউনিয়ন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৯ নং ওয়ার্ডের শোরসাক ফিশারী পুকুর পাড়ে গার্ড ওয়াল নির্মাণ কাজের প্রকল্পের কোনো প্রকার কাজ না করে বাস্তবায়ন কমিটির সকলের স্বাক্ষর জাল করে কমিটি জমা করে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে ইউনিয়ন কমিটির প্রত্যয়ন পত্র দেয়া হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগ করেছেন ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মিরন হোসেন (শাহ মিরন) ও নারী মেম্বার সাবরিনা নুশরাত। অভিযোগের পর তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যান ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গত ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন। এর পরদিনই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আবারও মুখ খোলেন সাবেক ও বর্তমান ৪ মেম্বার।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.