হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ধেররা মাদ্রাসায়ে আবেদীয়া মোজাদ্দেদীয়ায় (দাখিল) নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ এনেছেন হাছিনা আক্তার নামের এক নারী শিক্ষক। তিনি মাদ্রাসার মাধ্যমিক বিভাগের এমপিওভুক্ত সহকারী শিক্ষক (গণিত)। অথচ তাঁকে দিয়ে ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) শিক্ষার্থীদের পড়ানো (পাঠদান) হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছে মাধ্যমিক শাখার শিক্ষার্থীরা (৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও দাখিল পরীক্ষার্থী)। রয়েছে এমন নানান অভিযোগ।
সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে জানান, ভুক্তভোগি শিক্ষক হাছিনা আক্তার। তাই বাধ্য হয়েই পাঠিয়েছেন লিগ্যাল নোটিশ এবং দ্বারস্থ হয়েছেন সংবাদকর্মীদের। সম্প্রতি তিনি সংবাদকর্মীদের বিষয়টি জানান এবং গত ২৬ ডিসেম্বর মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য সৈয়দ আলমগীর শাহ ও সুপারিনটেন্ডেট মোহাম্মদ আলীকে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
হাছিনা আক্তার জানান, মাদ্রাসায় তাঁর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। গত ৪ ডিসেম্বর মাদ্রাসায় তাঁকে হুমকি-ধমকি এবং গালমন্দ করেন দাতা সদস্য সৈয়দ আলমগীর শাহ। বিষয়টি সুপারিনটেন্ডেটকে জানালে উল্টো তার প্রতি ক্ষিপ্ত হন তিনি (সুপার)। তাই বাধ্য হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ‘নিরাপত্তার সাথে দায়িত্ব পালনের আবেদন’ জানিয়ে একটি দরখাস্ত দেন একং ২৬ ডিসেম্বর লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও আমার সহকর্মী (শিক্ষক) ও অভিভাবক (একজন শিক্ষার্থীর পিতা) হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। দুইজন সহকর্মী, আমাকে নিয়ে ছাত্রদের জড়িয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন এবং শাসন নিয়ে অপর একজন সহকর্মী ছাত্রদের উস্কে দিয়েছেন। আমি নিরাপত্তা ছেয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিনটেন্ডেটের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। উল্টো আমি নিজেই হয়রানির শিকার হয়েছি।
যার ফলে ‘সুষ্ঠভাবে পাঠদানের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন’ জানিয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বৈশাখী বড়–য়ার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগে ২৭টি সমস্যা তুলে ধরেছি। ওই অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে আমি মাদ্রাসায় আরো বেশি হয়রানির শিকার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
উদাহরণসরূপ তিনি বলেন, ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে বার বার শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করা শুরু হয় এবং আমাকে দিয়ে মাধ্যমিক শাখার পাঠদান বন্ধ করে দেন সুপারিনটেন্ডেট। আমাকে ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) শিক্ষার্থীদের পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ আমি মাধ্যমিকের শিক্ষক। আমি ৬ষ্ঠ থেকে দশম এবং দাখিল পরীক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদান করতাম।
হাছিনা আক্তার বলেন, সবশেষ একটি বিষয় নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর মাদ্রাসার দাতা সদস্য সৈয়দ আলমগীর শাহ আমাকে মারতে তেড়ে আসেন, হুমকি-ধমকি দেন এবং গালমন্দ করেন। যার প্রমান (ভিডিও) আমার কাছে রয়েছে। তাই, আমি নিরাপত্তা চেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন এবং ২৬ ডিসেম্বর একজন আইনজীবির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করি।
এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি বার বার হুমকি-ধমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছি। এতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই, আমার জীবনের নিরাপত্তা এবং মাদ্রাসায় পাঠদানের জন্য নিরাপদ পরিবেশ চাই। আমি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ
দিকে হুমকিÑধমকিসহ হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেট মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি (সহকারী শিক্ষক হাছিনা আক্তার) সব সময় কারণ দর্শানোর মত প্রশ্ন করেন। তিনি২০০৫ সালে অত্র মাদ্রাসায় যোগদানের পর থেকে চাকরি বহির্ভূত কর্মকান্ড ও আচরন করে আসছেন। তাঁকে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু নিজেকে সংশোধন না করায় ২০০৮ সালে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, ওই নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিলেও মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁকে ছাঁড় দিয়ে মৌখিকবাবে সতর্ক করা হয়। তারপরও তিনি নিয়মিত চাকরি বহির্ভূত কর্মকান্ডের পাশাপাশি উশৃঙ্খল, ঔদ্বত্তপূর্ণ, আক্রমনাত্বক আচরণ করতেই থাকেন। তাই ২০১৯ সালে তাঁকে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর থেকে মাদ্রাসায় না আসায় তাকে গত জানুয়ারী মাসে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি স্বীকার করে সুপারিনটেন্ডেট মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি যেসব বিষয়ে (গণিত ও বিজ্ঞান) পাঠদান করাতেন, সেসব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হওয়ায় তাঁকে দিয়ে মাধ্যমিকের ক্লাসের পরিবর্তে ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ওনাকে (হাছিনা আক্তার) কি নিরাপত্তা দিবো ?
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারীসহ ২০/২৫ জন লোক রয়েছে। ওনার (শিক্ষক হাছিনা আক্তার) সাথে কারো সু-সর্ম্পক নেই। ওনি ক্রেজি প্রকৃতির মানুষ। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই ওনাকে নিয়ে সমস্যা। ওনি মাদ্রাসার সুপারসহ কারোই কথাই শুনেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগেরও শেষ নেই। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার শোকজ করা হয়েছে। তারপরও তিনি সতর্ক বা সচেতন হন নি।
তিনি বলেন, নিয়মিত পাবলিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার রেজাল্ট (ফলাফল) খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং বাধ্য হয়েই তাঁকে উপরের (মাধ্যমিক) ক্লাস থেকে নিচের (ইবতেদায়ী) ক্লাস দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি তাঁর মতো করেই চলছেন। একজন শিক্ষকের জন্য প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যহৃত হচ্ছে। তাই তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ আরো বলেন, মানব কল্যাণে আমি কোটি কোটি টাকার সম্পদ দিয়েছি। এখানে আমার বা আমাদের পরিবারের কোন স্বার্থ নেই। এখন, একজনের কারণে সেই কার্যক্রম ব্যহৃত হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে কি হয়েছে আমি জানি না। আমার ভাইয়ের বয়স হয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যে দুই একটি অসংলগ্ন কথা বলে থাকেন। বিষয়টি ওনিসহ সবাই জানে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি জানতে পেরেছি। মাদ্রাসা সুপার ও সহকারী শিক্ষকের (হাছিনা আক্তার) সাথে বসে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। যার তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষ হলে দুই পক্ষের সাথে বসে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.