চাঁদপুরে বিগত কয়েক অর্থ বছরে খাল খননের নামে অন্তত ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন করা হলেও সুনির্দিষ্টি পরিকল্পনার অভাবে বর্তমানে খালগুলো কৃষি ও কৃষকের কাজে আসছে না। কৃষকদের অভিযোগ খননকৃত এসব খাল স্ষ্কু মৌসুম এলে পানি শূন্য হয়ে পড়ে। আর এসব খালগুলোর অধিকাংশ সেচ প্রকল্পের বাহিরে মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী সংযুক্ত।
জেলায় প্রতিবছর চারটি দপ্তরের অধীনে খাল খনন করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকারি প্রকৌশল বিভাগ এসব খাল খনন করে থাকে। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে খননকৃত এসব খাল কৃষকের কোন উপকার হচ্ছে না। তাদের দাবি, খাল খননে সরকারের টাকাই খরচ হয় কিন্তু কোনো কাজে আসে না তাদের। কারণ যেখানে খাল খনন করা হয় সেখানে পরিপূর্ণভাবে খাল খনন করা হয় না। অধিকাংশ সময় খালের নির্দিষ্ট অংশ খনন করা হয়। যার ফলে খালের বাকী অংশে গভীরতা না থাকায় পানি আসতে পারে না। খননকৃত খাল থেকে যেসব কৃষক সুবিধা পাওয়ার কথা তারা তা পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা সেলু বা ডিপ টিউবয়েল দিয়েই সেচ কাজ করছেন।
সরজমিনে খননকৃত এসব খালের সুবিধাভোগী কৃষকদের অবস্থান দেখতে গিয়ে দেখা যায়, খালের চারপাশের কৃষক পানির অভাবে কৃষিকাজ করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা সম্মিলিতভাবে অধিক ব্যয় বহন করে সেলু বা ডীপ টিউবয়েল দিয়েই সেচ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বর্ষা মৌসুমে খালে ভরপুর পানি থাকে। মূলত জেলায় বর্ষা মৌসুমের অধিকাংশ কৃষি জমি থাকে পানির নিচে। এ সময় তেমন কোনো ফসল উৎপাদন হয় না।
খাল গুলো খনন করা হয় শুষ্ক মৌসুমে যাতে কৃষক পর্যাপ্ত পানি সুবিধা পায় ফসল ফলানোর জন্য। অপরিকল্পিত খাল খননের ফলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষক ভোগে পানি শূন্যতায়। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা জানান, ফসল উৎপাদনের জন্য তাদের নিয়মিত পানির প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে আমাদের এ অ লে তেমন কোন ফসল উৎপাদন হয় না। কারণ তখন অধিকাংশ ফসলে জমি এমনিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায়।
কৃষকরা বলেন, আমাদের ফসল ফলানোর জন্য সবচেয়ে বেশি পানি প্রয়োজন পড়ে শুষ্ক মৌসুমে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে সে সময়টাতে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাই না। পানি না পাওয়ার কারণ খালগুলো ঠিকমতো খনন করা হয় না। দেখা যায় খালের একটা অংশ খনন করা হয়েছে। বাকি অংশটা এমনিতে পড়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে খালের গভীরতা না থাকায় পানি আসে না। আমরাও ফসল উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাই না। বাধ্য হয়ে আমরা সেলু বা ডীপ টিউবয়েল দিয়েই সেচ কাজ করি।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আল মামুন এ বিষয়ে বলেন, পরিকল্পিত খাল খনন করলে অবশ্যই কৃষক অনেক উপকৃত হবে। ইতোমধ্যে এ ইউনিয়নে কয়েক কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, যেটুকু খনন হয়েছে সেটুকু কৃষকের উপকারে আসছে। আর খালের যে অংশের খনন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটুকুই করা হয়েছে। কিছু কিছু খালের প্রস্থ বেশি হওয়ায় ভিন্ন প্রক্রিয়ায় খনন করতে হবে।
বিএডিসি চাঁদপুর সেচ জোন সহকারী প্রকৌশলী ইমরুল কায়েস মির্জা কিরণ খাল খনন বিষয় বলেন, মূলত যে স্থানে খনন প্রয়োজন সেখানেই খনন কাজ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোথাও কোথাও খাল অনেক প্রসস্থ তাই সাধারণ ভাবে ওখানে খাল খনন করা যায় না। সেখানে স্কেভেটর বা ভিন্ন উপায়ে খনন কাজ করতে হবে। মূলত বিএডিসি কৃষি ও কৃষকের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, যেখানেই খাল খনন হোক এর উপকারিতা আছেই। অন্তত জলাবদ্ধতা বা পানি নিস্কারসনেও হলেও উপকার আসে। তাই কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে খাল খননের প্রয়োজনীতা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেভাবেই পরের অর্থবছরেগুলোয় কাজ হবে। একটি খালের মাঝখান থেকে খনন না করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সিদ্ধান্তগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোয় জানানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.