নুরুল ইসলাম ফরহাদ :
৪র্থ বার সিজার করে সফল হয়েছেন ফরিদগঞ্জের চিকিৎসক লিপিকা পাল। রিতিমত উপজেলায় তিনি চমক দেখিয়েছেন। সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার সিজারে বাচ্চা হওটা স্বাভাবিক। কিন্তু ৪র্থ বার! সেটা সাধারণত এ অঞ্চলে তেমন একটা হয় না। বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ আছে।
৯ অক্টোবর সোমবার ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের ফ্যামিলি কেয়ার মেটারনেটি সেন্টারে ডাক্তার লিপিকা এই সফল সিজারটি করেন। জানা যায়, উপজেলার ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের পূর্ব চান্দ্রার সেকদি পাল তালুকদার বাড়ির মো. এমরান মিজির স্ত্রী মিনু বেগম সিজারের মাধ্যমে ৪র্থ বারের মতো মা হন। এর আগে তার তিনটি বাচ্চাই ডাক্তার লিপিকা পালের তত্বাবধানে সিজারের মাধ্যমে হয়েছে। তিন ছেলের পর কন্যা সন্তান এবং দু’জনেই সুস্থ, এ কারনে মিনু বেগমের পরিবারের সবাই খুশি। তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।
আবেগে আপ্লুত হয়ে মিনু বেগমের বোন সাংবাদিকদের কাছে উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অনেক খুশি। এই সিজারটা অনেক রিস্ক ছিলো। মেয়ে এবং তার মা আল্লর রহমতে সুস্থ আছে। আমার বোনের বাকী তিনটি সন্তানও এই ডাক্তার (ডা.লিপিকা) সিজার করিয়েছে।’ মিনু বেগমের প্রথম সিজার হয়েছে ২০১৫ সালে, দ্বিতীয় সিজার হয়েছে ২০১৮ সালে, তৃতীয় সিজার হয়েছে ২০২০ সালে।
এ বিষয়ে ডা. লিপিকা বলেন, ‘তৃতীয় সিজার নিয়মিত হলেও চতুর্থ সিজার তেমন একটা হয় না। সাধারণত ৪র্থ সিজার কেউ করতে চান না। তার যথেষ্ট কারণও আছে। কারণ এটা খুবই রিস্ক। এতে মা এবং শিশু দু’জনেরই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।’
৪র্থ সিজারে মা এবং শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি থাকে, তারপরও আপনি কিসের ভিত্তিতে সিজার করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘অভিজ্ঞাতা, অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি এই ঝুঁকি নিয়েছি। তাছাড়া এই রোগী দীর্ঘ বছর ধরে আমার কাছে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। আমি তাকে জানি। তারপরও আমি সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমি সফল হয়েছে।’
সিজার এক প্রকার শল্যচিকিৎসা যা এক বা একাধিক শিশু জন্মদানের জন্য মায়ের উদর ও জরায়ুতে করা হয়। এটি সাধারণত করা হয় তখন, যখন প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মনালির মাধ্যমে যোনীয় প্রসব সম্ভব হয় না, বা সম্ভব করতে গেলে মায়ের বা শিশুর জীবন বা স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘হয়তো আপনার বাচ্চার সমস্যা রয়েছে কিংবা আপনার এটা দ্বিতীয় বিয়ে- এ সকল ভিন্ন গ্রাউন্ডে যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয়, তবে তিনবার, চারবার কিংবা পাঁচবার পর্যন্ত সিজার করা যায়। তবে প্রতিবার সিজারের সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি কিন্তু বাড়ে। সিজার করলে সাধারণত কী হয়? একটা জায়গা কাটা হয়। বাচ্চাটাকে বের কওে হয় কেটে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দ্বিতীয় বাচ্চাটা যখন আসবে, জরায়ু যখন বড় হতে থাকবে, তখন কাটা জায়গাটাতে টান পড়ে। এ ক্ষেত্রে সিম্পটম অনুসাওে ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। বড় সমস্যা হলো জরায়ু ফেটে যায়। এক্ষেত্রে বাচ্চার জীবন যায়, মায়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। একবার সিজার হলে পরবর্তী সিজারে ডেলিভারির আশঙ্কা বাড়ে।
সিজারের ক্ষেত্রে মায়ের রক্ত নিতে হয়। রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ে। সব থেকে বড় বিপদ হলো হচ্ছে গর্ভফুল। যখন সিজার করা হয়, তখন দেখা যায় কাটা জায়গাটায় ফুলটা বসে। মহুর্তেও মধ্যে অনেক রক্ত বের হয় মায়ের। তখন মাকে বাঁচানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.