অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ট্যাংক নিয়ে রাতভর ‘সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।
এদিকে হামলার ২০তম দিনে বুধবার রাতের হামলাসহ ইসরাইলের অব্যাহত বিমান হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসির।
অপর দিকে গাজার হামাসের টানেলে নার্ভ গ্যাস দিয়ে হামলার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের এলিটফোর্স ব্যবহার করা হবে। নার্ভ গ্যাস দিয়ে হামলা করে হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের মুক্ত করা হবে।
নার্ভ গ্যাস হামলার ৮ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যে টানেলের ভেতরে থাকা হামাস যুদ্ধরা সকলেই মৃত্যুবরণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি পরিকল্পনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এলিট ফোর্সের এমন একটি ছবি শেয়ার করেছে। পরে তিনি তা ডিলেট করে দেন।
ইসরাইল বলেছে, যুদ্ধের পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে বুধবার রাতে ট্যাংক নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, অনেক সন্ত্রাসী সেল এবং অবকাঠামোসহ গাজায় হামাসের ২৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, অভিযান চালানোর পর সৈন্যরা ওই এলাকা ত্যাগ করে ইসরাইলের ভূখণ্ডে ফিরে এসেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরাইল গাজায় স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এই অভিযান কখন চালানো হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি জানাতে রাজি হননি।
রয়টার্স জানিয়েছে, তেল আবিব থেকে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছেন, স্থল অভিযান কখন থেকে শুরু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছি এবং এটা শুরু মাত্র। একই সঙ্গে আমরা একটি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি বলতে চাই না যে সেটি কখন, কিভাবে বা কতজন থাকবে। স্থল অভিযান নিয়ে আমরা কী কী বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করছি সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আমি বলতে চাই না।
ইসরাইলের হুঁশিয়ারির পর গাজা শহর থেকে সরে গিয়ে মধ্য গাজায় অবস্থান নেওয়ার পরও বিমান হামলা থেকে রেহাই পাননি আলজাজিরার আরবি বিভাগের গাজার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল দাহদুহের পরিবার। বুধবার রাতের ইসরাইলের বিমান হামলায় তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং শিশু নাতি নিহত হয়েছেন।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা সাত হাজার ২৮ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ৯১৩ শিশু, এক হাজার ৭০৯ জন নারী ও ৩৯৭ জন বয়স্ক নাগরিক আছেন। ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে শতাধিক ফিলিস্তিনিও নিহত হয়েছেন।
এ হামলা বন্ধ এবং রাফাহ সীমান্ত স্থায়ীভাবে খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরব বিশ্ব এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের শুক্রবার ও রোববার সমাবেশে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। বৃহস্পতিবার হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘রাফাহ ক্রসিং খুলে দাও’ এবং ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করো’ স্লোগানে আপনারা সমাবেশের মাধ্যমে আপনারা আমাদের সমর্থন করুন।
গাজায় হতাহতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান লুইস মোরেনো-ওকাম্পো বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। তিনি বলেন, ‘একটি গণহত্যা সংঘটিত করার একটি রূপ হলো তাদের ধ্বংস করার জন্য জনগণের ওপর শর্ত চাপানো। আর (ইসরাইল) অবরোধ আসলে তাই।
মোরেনো-ওকাম্পো বলেন, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু, তারা ২০ লাখ মানুষকে আটকাতে পারে না বা অবরোধ দিতে পারে না। এসব ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের কারণে গাজা বন্দি শিবিরে পরিণত হতে পারে।’
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, মঙ্গলবার ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধের বিষয়ে বিবৃতি নিয়ে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি অবাক হয়েছেন। গুতেরেস বলেন, বিবৃতিতে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ইসরাইলে ঘটিত ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’র নিন্দা জানান। সেখানে তিনি আরও বলেছেন, এই হামলা ‘বিনা কারণে’ হয়নি।
এবার মার্কিন প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়ার ভেটো : ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবে এবার ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের দশ সদস্য ভোট দিয়েছে, ভোটদানে বিরত ছিল ব্রাজিল ও মোজাম্বিক। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.