হাজীগঞ্জে বিয়ের বছর পার না হতেই মিতালী রানী দাস (১৯) নামের এক গৃহবধূ রহস্যজনক কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকালে উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের মাঝি বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। আত্মহননকারী মিতালী রানী দাস ওই বাড়ির সুজন চন্দ্র দাসের স্ত্রী।
জানা গেছে, ৭/৮ মাস পূর্বে মিতালীর সাথে সুজন চন্দ্র দাসের বিয়ে হয়েছে। সুজন রাজধানীর একটি সেলুনে কাজ করেন। বাড়িতে শুধু মিতালী ও তার শাশুড়ি থাকেন এবং শাশুড়িও হাজীগঞ্জ বাজারে কাজ করেন। তিনি সকালে যান, বিকালে বা সন্ধ্যায় বাড়িতে আসেন। এ সময়টা বাড়িতে একাই থাকেন মিতালী রানী দাস।
শুক্রবার বিকালে নিজ বসতঘরে সামনে থেকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে মিতালী রানী দাসকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পারিবারিক কলহের জেরে তিনি বিষপান করেছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। তবে কখনো স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ হয়েছে বলে বাড়ির কেউ দেখেনি।
এ দিকে মিতালীর বিষপানের সময় তার স্বামী বা শাশুড়ী কেউ বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে অজ্ঞানের খবর পেয়ে শাশুড়ি বাড়িতে আসেন এবং স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্বামী সুজন চন্দ্র দাস ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন বলে ওই বাড়ির লোকজন সংবাদকর্মীদের জানান।
মিতালীকে হাসপাতালে নেওয়া বিকাশ চন্দ্র দাস জানান, বাড়িতে ডাক-চিৎকার শুনে এবং অজ্ঞান হওয়ার খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে এসে দেখেন মিতালীর মুখ দিয়ে লোট-বিজলা (ফেনা) বের হচ্ছে। তখন তিনি তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন, মিতালী বিষপান করে মারা গেছে।
মিতালী রানী দাসের বাবা শ্রীদাম চন্দ্র দাস জানান, জামাই আমাকে ফোন করে তাকে বলেছেন আলীগঞ্জ হাসপাতালে আসার জন্য। তবে কি কারণে আসতে বলেছেন, তা বলেন। শুধু বলেছেন ইমার্জেন্সি (জরুরি)আসতে। এরপর তিনি হাসপাতালে এসে কাউকে না পেয়ে মেয়ের শশুর বাড়িতে এসে দেখেন মেয়ের লাশ উঠানে পড়ে আছে।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ বা ১০/১৫ আগে জামাই (সুজন চন্দ্র দাস) ও তার মা আমাকে ফোন করে বলেছেন, মিতালীকে যেন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেই। কিন্তু আমার মেয়ের কি দোষ-ত্রুটি তারা কিছু বলেনি। তাছাড়া মেয়েও আমাকে তেমন কিছু বলেনি। শুধু একদিন বলেছে, তাকে ঢাকায় থাকতে থাপ্পড় দিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, মনে করেছি ঘর-সংসার করলে কিছু জায়-ঝামেলা (ঝগড়া-বিবাদ/মল-মালিন্য) হতে পারে। আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু আমার মেয়েটা যে মরেই যাবে, তা বুঝতে পারিনি। এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ দিকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. গোলাম মাওলা নঈম। তিনি জানান, মিতালী রানী দাসকে তারা হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, মিতালী রানীর মরদেহ পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক- মহিউদ্দিন আল আজাদ, ই-মেইল: trenadinews@gmail.com, মোবাইল-০১৭১৭-৯৯২০০৯
Copyright © 2024 সাপ্তাহিক ত্রিনদী. All rights reserved.