ঢাকা 11:05 am, Friday, 22 August 2025
ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে টিফিন বক্স বিতরণ

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাময়ী মায়ের পা ধুইয়ে দিল শিক্ষার্থীরা

হাজীগঞ্জের জগন্নাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাময়ী মা মায়ের পা ধুইয়ে দিল।

সে এক অন্য রকম কর্মসূচি, অসাধারণ দৃশ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে আছেন মমতাময়ী মায়েরা। আর তাদের সন্তান বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত। মাইকে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

বৃহস্পতিবার এ রকম দৃশ্য দেখা যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা দেখানো ও যত্মশীল করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কয়েক শতাধীক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে দেন।

এ সময় বেশিরভাগ মায়েরা ও শিক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেক মা ও সন্তান অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কর্মসূচির তদারকির দায়িত্বে সেখানে উপস্থিত বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

এর পূর্বে বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে টিফিন বক্স বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ. এম. জাহাঙ্গীর আলম।

বক্তব্যে তিনি বলেন আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব” – এই বিখ্যাত উক্তিটি দিয়ে তিনি আরো বলেন প্রতিটি মা এ পাবে তার স্বামীকে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে এবং ছাত্র /ছাত্রীদের বাবা বাসায় থাকলে বাচ্ছারা ও পড়া লেখা না করতে চাইলে বাবা ভয়ে পড়বে।

তিনি আরো বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সারিবদ্ধ হয়ে মমতাময়ী মায়েদের উপজেলা মাধ্যমে শিক্ষা অফিসর শিক্ষার্থীদের দিয়ে পানির বোতলে পানি ভরে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে দিলো। মায়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা ও যত্নশীল হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী আর্দশ শিক্ষাদেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ৯নং গন্ধর্ব্যপুর (উঃ) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল।

সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মুরতেজা কামাল এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় করেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নূরে আলম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিব উল্যাহ মজুমদার,ধর্মীয় শিক্ষক এ টি এম হোসাইন তালুকদার, সাংবাদিক খালেকুজ্জামান শামিম, ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য গোলাম মোস্তফা, ইউপি সদস্য মহিলা মেম্বার তাসলিমা বেগম

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রাণবন্ত। কোরআন তেলাওয়াত করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান। মা সমাবেশ উপলক্ষে সংগীত পরিবেশন করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহা আক্তার ও ইসরাত জাহান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেষে উপস্থিত অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা ও সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক-অভিভাবক সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাময়ী মায়ের পা ধুইয়ে দিল শিক্ষার্থীরা

ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে টিফিন বক্স বিতরণ

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাময়ী মায়ের পা ধুইয়ে দিল শিক্ষার্থীরা

Update Time : 10:53:20 am, Friday, 22 August 2025

সে এক অন্য রকম কর্মসূচি, অসাধারণ দৃশ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সারিবদ্ধ চেয়ারে বসে আছেন মমতাময়ী মায়েরা। আর তাদের সন্তান বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত। মাইকে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

বৃহস্পতিবার এ রকম দৃশ্য দেখা যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা দেখানো ও যত্মশীল করার লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কয়েক শতাধীক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে দেন।

এ সময় বেশিরভাগ মায়েরা ও শিক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেক মা ও সন্তান অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কর্মসূচির তদারকির দায়িত্বে সেখানে উপস্থিত বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।

এর পূর্বে বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে টিফিন বক্স বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ. এম. জাহাঙ্গীর আলম।

বক্তব্যে তিনি বলেন আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব” – এই বিখ্যাত উক্তিটি দিয়ে তিনি আরো বলেন প্রতিটি মা এ পাবে তার স্বামীকে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে এবং ছাত্র /ছাত্রীদের বাবা বাসায় থাকলে বাচ্ছারা ও পড়া লেখা না করতে চাইলে বাবা ভয়ে পড়বে।

তিনি আরো বলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সারিবদ্ধ হয়ে মমতাময়ী মায়েদের উপজেলা মাধ্যমে শিক্ষা অফিসর শিক্ষার্থীদের দিয়ে পানির বোতলে পানি ভরে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ মায়ের দুই পা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে দিলো। মায়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাবোধ, ভালবাসা ও যত্নশীল হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ধরনের ভিন্নধর্মী আর্দশ শিক্ষাদেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ৯নং গন্ধর্ব্যপুর (উঃ) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল।

সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জগন্নাথপুর হাজী এরশাদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মুরতেজা কামাল এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় করেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নূরে আলম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিব উল্যাহ মজুমদার,ধর্মীয় শিক্ষক এ টি এম হোসাইন তালুকদার, সাংবাদিক খালেকুজ্জামান শামিম, ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য গোলাম মোস্তফা, ইউপি সদস্য মহিলা মেম্বার তাসলিমা বেগম

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রাণবন্ত। কোরআন তেলাওয়াত করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান। মা সমাবেশ উপলক্ষে সংগীত পরিবেশন করেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহা আক্তার ও ইসরাত জাহান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেষে উপস্থিত অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা ও সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক-অভিভাবক সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।