বির্তকিত স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করা চাঁনমিয়ার খুঁটির জোর কোথায়? এমন প্রশ্ন রাজার গাঁও গ্রামের সাধারণ মানুষের। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিজেই প্রায় অর্ধশত মামলার বাদী হয়ে মামলা পরিচালনা করে দীর্ঘ দিন ধরে শতাধিক পরিবারকে হয়রানি করে আসছেন। এর প্রতিবাদে রাজারগাঁ গ্রামের জনপ্রতিনিধি শাহাদাত মেম্বারের নেতৃত্বে স্থানীয় জনগণ ফ্যাস্টি মামলাবাজ চাঁনমিয়ার বিরুদ্ধে ০০৫/০৯/২০২৫ খ্রি. রাজারগাঁও বাজারে একটি –প্রতিবাদমিছিল শেষে,সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত মেম্বার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তাঁর লিখিত বক্তব্য থেকে জানাযায়,মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ সময়ে এ কুকখ্যাত চাঁনমিয়া নিজে বাদী হয়ে এবং অন্যের মামলা-মোকদ্দমার কোট পাওয়ার নিয়ে মামলা পরিচালনা নেশা এবং পেশায় পরিণত করে সাধারণ মানুষদের হয়রানির মমাধমে চাঁদাবাজী করে আসছেন। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরও তার এ অপকর্ম বন্ধ হয়নি। অবশ্য গত ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রি.,হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক চাঁন মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ছিলেন । সে সময়ে চাঁন মিয়া আত্মগোপনে থাকেন,পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় মামলা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেনে ।সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও চাঁনমিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের দাবীতে সরকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই এ সংবাদ সম্মেলন ।
লিখিত বক্তব্য থেকে আরো জানা যায়, চাঁপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও গ্রামের মৃত ছিদ্দিক বেপারির ছেলে চাঁনমিয়া স¦াধীনতার দীর্ঘ সময় পর হঠাৎ নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করে ২০১০ খ্রি. ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার হাইকোটের সংশ্লিষ্ট সেকশনে একটি রিট দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তাকে নিয়ে সমালোচনার
ঝড় উঠে। তাই তিনি রিট আবেনটি শুনানি না করে নিজেকে প্রশাসনের কাছ থেকে আড়াল করতে ঢাকা ছাড়েন এবং নিজ গ্রাম রাজারগাঁওয়ে অবস্থান করেন।
সে সময় থেকেই মূলত শুরু হয় চাঁনমিয়ার মামলা বাণিজ্য। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষকে হয়রানি করতে অকারণেই কথায় কথায় মামলা দিয়ে টাকা রোজগারের নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন। মানুষের সাথে ঝগড়া লাগানো এবং ঝগড়া মিট করে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়া তার যেন এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এরকম অপকর্মের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
চাঁনমিয়া পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের এক অসহায় পরিবারের যায়গা দখল করতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। এ ঘটনায় পূর্ব রাজারগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের প্রতিবাদ করে চাঁন মিয়াকে রাজারগাঁও বাজারে প্রকাশ্যে মারধর করে। তারপরও চাঁনমিয়া শোধরায়নি।
গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ দিবাগত রাত ২টায় রাজারগাঁও বাজারে আব্দুস সামাদ মার্কেটে চাঁনমিয়ার ভাড়াটিয়া লোক দ্বরা লাগানো আগুনে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয় যা সকল স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ক্ষতি গ্রস্ত মার্কেটের মালিক নতুন করে ঘর তোলতে গেলে এ চাঁনমিয়া বাধা দেন এবং বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেন। রাজারগাঁও ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষের মনে প্রশ্ন ১৯৭১ সালে মাত্র ১২ বছরের একজন শিশু কোন খুঁটির জোরে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করে হাইকোটে রিট করেন। মুক্তিযুদ্ধ ভাতা গ্রহণ বিষয়ে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ তারঁ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই আশা করেন শাহাদাত মেম্বার ।
এছাড়া শাহাদাত মেম্বারের লিখিত বক্ততব্য দেয়া প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁন মিয়া নিজেই একা প্রায় অর্ধশত মামলা পরিচালনা করে আসছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ অন্য মানুষের কাছ থেকে মামলা পরিচালনার করার পাওয়ার নিয়েছেন। ২০১২ খ্রি. থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাঁন মিয়া বাদী হয়ে করা মামলার নং জি আর ৫০/২০১২,২৪০/২০১২, দায়রা জজ আদালত ১৭২/২০১৫,৫২০/২০১৫, ১৭১/ ১১৪ বিবাদী ছামাদ পাটওয়ারী ৪৬/২০১৮, চাঁদপুর জজ কোট বন্টন স্বত্ত্ব-বিবাদী ৮০ জন। মামলা নং- ১৬৭৩/২০১৯ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল মামলায় বিবাদী নাজিমুদ্দিন গং মামলা নং ১৬৯৪/২০১৯ এ মামলায় বিবাদী করা হয় ১০২জন। মামলা নং ৩১৮.৩০.৪,২০১৮ এ মামলা বিবাদী ১৪ জন। মামলা নং ১৬৯৩/২০১৯ বিবাদী রফিকুল ইসলাম গং। মামলা নং ১৬৯১/১৯ বিবাদী লোকমান বেপারী।
মামলা নং ১৬৯৫/১৯ বিবাদী ফজলুল হক মামলা নং ১৬৯৬/২০১৯ বিবাদী অলি উল্লাহ ১৬৯৬/২০১৯ বিবাদী গফুর গং ১৬৯৬/১৯ বিবাদী কাসেম পাটওয়ারী গং ১৬৯৬/১৯বিবাদী রাজ্জাক ১৬৯৬/১৯ বিবাদী ওসমান মৌলবি গং ১৬৯৬/১৯বিবাদী নূরুল ইসলাম গং মামলা নং ১৬৯৭/১৯ বিবাদী সেলিম গং মামলা নং ১৬৯৮/১৯ বিবাদী রফিক, ১৬৯৯/২০১৯ এ সকল মামলা প্রতিবাদে গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট আবু তাহের তার বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট আবু তাহেরে হাজীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী সূত্রে জানাযায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে কথিত এ স্বাধীনতার ঘোষক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চাঁদপুর ষোলঘরস্থ টেকনিক্যাল হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। বার বছর বয়সী একজন ছাত্র যখন নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবী করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে দেশ ব্যাপি জনমনে একটাই প্রশ্ন জাগে যে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া একজন ছাত্রের স্বধীনতার ঘোষণা দেয়া তা কিভাবে সম্ভব?
শাহাদাত মেম্বার আরো বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে অস্বীকার করে নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করেছেন এ চাঁন মিয়া। কেবল দাবী করেই তিনি ক্ষান্ত হননি; রীতিমত হাইকোর্টে রীট আবেদন করেছেন! চাঁপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ১নং রাজারগাঁও গ্রামের মৃত ছিদ্দিক বেপারির ছেলে চাঁনমিয়া স¦াধীনতার দীর্ঘ সময় পর হঠাৎ নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবী করে ২০১০ খ্রি. ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার হাইকোটের সংশ্লিষ্ট সেকশনে একটি রিট দায়ের করেন।
আলোচিত এ আবেদনের বিষয়ে চাঁন মিয়ার আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক থেকে জানাযায়, ১৯৯৬ খ্রি. মুদ্রিত স্কুলের সমাজবিজ্ঞান বইতে উল্লেখ করা হয়েছে,মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। চাঁন মিয়ার দাবী ১৯৭১ খ্রি. ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিব যে পত্রে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন সেটি ১৯৭১ খ্রি. ২৬ মার্চ সকাল ৭টায় মগবাজার ওয়ারলেস স্টেশন থেকে চাঁদপুরের ষোলঘর বেতার স্টেশনে পৌছায়। সকাল ৮টায় এ মেসেজ চাঁন মিয়ার হাতে যায়। তিনি তখন স্কুল ছাত্র। মেসেজ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি এলাকার মানুষকে বক্তব্যের আকারে এটা জানান। বিভিন্ন সভাও করেন তিনি। আবেদনে আরো বলা হয়, চাঁন মিয়া নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু সরকার তার আবেদনে সাড়া দেয়নি। ২০০১ খ্রি. তার স্বাধীনতা ঘোষণার এ বিষয়টি এলাকার ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে আছে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনালি বার্তা।
প্রতি বছর চাদঁপুরের মুক্তিযুদ্ধ মেলায় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে বক্তব্য দিয়ে আসছিল। (সুত্র : যায়যায়দিন) খবরটি পড়ার পর যেকোন পাঠকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, শেখ মুজিব আদৌ কোন ম্যাসেস চাঁন মিয়াকে দিয়েছেনকি? অবশ্য ( হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র গ্রন্থে চাঁন মিয়ার এই ঘোষণাটি স্থান পায়নি)। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রি. হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি কর্তৃক চাঁন মিয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ে। চাঁন মিয়ার খুঁটির জোরে সে আবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে তার মামলা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকা- বেড়ে যায়। যার প্্রমাণ ০৫-০৯-২০২৪খ্রি. শাহাদাত মেম্বারের পুকুর থেকে সন্ত্রসী কায়দায় মাছধরে নিয়ে যায়,এ ছাড়া ১৪-০৬-২০২৫ খ্রি.পশ্চিম রাজারগাঁয়ের,ফাতেমা(মর্জিনা),মো. শাহাদাত হোসেন,সেলিম বেপারী এ তিন জনের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় মুক্তিযুদ্ধা নাম ভাঙ্গিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তাদের জেলের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ০৪-০৭-২০২৫ খ্রি. এ চাঁনমিয়া মামলা প্রত্যাহার করেন।এ ছাড়া ২০-০৬-২০২৫ রোজ শুক্রবার দুপুরে চাঁনমিয়া তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে একটি প্রতিবন্ধী মার্কেট জোর করে দখল নিতে গেলে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে স্থানীয় মেম্বার শাহাদাত বাধা দিলে মার্কেট দখল করতে না পারায় ,চাঁনমিয়া একটি মিথ্যা মামলা করেন, সি.আর. মালা নং ৫৩৩/২০২৫ আসামী শাহাদাত বেপারী গং{ ৭ জন} বাদী চাঁনমিয়া এরকম অর্ধশত মামলা সে নিজে একাই পরিচালনা করে আসছে। কিছুকিছু মামলা টাকার বিনিময়ে প্রত্যাহার করলেও অধিকাংশ মামলা প্রত্যাহার না করায় সাধারণ মানুষ হয়রানি হচ্ছে। এ অবস্থায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক অস্বীকার করা বির্তকিত মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী জানান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রাজারগাঁয়ের ভুক্তভোগী জনতা।