ঢাকা 3:28 pm, Monday, 14 July 2025

দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদিআরবে ফেসবুক লাইভে হাজীগঞ্জের যুবকের আত্মহত্যা, পরিবারের পাশে ইউএনও

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:22:59 am, Thursday, 23 February 2023
  • 10 Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:

পাসপোর্ট ও আকামা না থাকা, ঋণ ও সংসার খরচ জোগানো এবং অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে না পেরে সৌদিআরবে মো. আরিফুল ইসলাম নয়ন (২৮) নামের হাজীগঞ্জের এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে তিনি সৌদিআরবের দাম্মাম শহরের নিজ বাসার ছাদে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এতে করে ঋণের ৫ লাখ টাকা ও দুই কন্যা শিশু সন্তানকে নিয়ে শুধুই অন্ধকার দেখছেন স্ত্রী মাহিনুর বেগম।

বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) ওই যুবকের বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম। মো. আরিফুল ইসলাম নয়ন হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম খাঁনের ছোট ছেলে। তাঁর মা, বাবা, স্ত্রীসহ নুহা নামের ৭ বছর ও নুসাইবা নামের ২ বছরের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ লাখ টাকা ঋণ করে ফ্রি ভিসায় গত বছরের এপ্রিল মাসে তার ছোট ভায়রা কচুয়া উপজেলার উজানির গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিমের মাধ্যমে সৌদিআরবে যান আরিফুল ইসলাম নয়ন। সেখানে দুই মাস ভায়রার সাথে থাকার পর তিনি অন্যত্র চলে যান। ভারতীয় মালিকের অধিনে নতুন কর্মস্থলে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না হলেও প্রথম পাঁছ-ছয় মাস কোন মতে চলে যায়। কিন্তু শেষ দুই মাস তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।

তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম জানান, মালিক তার পাসপোট নিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি আকাম করতে পারেন নি। এর মধ্যে হঠাৎ করে অসুস্থ (প্রচন্ড মাথা ব্যাথা) হয়ে পড়েন এবং শেষ দুইমাস তিনি বেতনও পাননি। আবার ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদারেরাও তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। সবশেষ গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি মাথা ব্যথায় ভুগছিলেন। বিষয়টি তিনি মালিককে জানালে, উল্টো মালিক তাকে বকাঝকা করেন।

তিনি বলেন, পাসপোর্ট, আকামা ও টাকা না থাকায় তিনি বাসা থেকে বের হতে পারেন নি। তাই চিকিৎসাও হয়নি। খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ ও সংসার খরচ নিয়েও তিনি দুঃশ্চিন্তা করতেন। সোমবার দুপুরে তিনি আমাকে ও আমার আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি মরে যাবেন। এরপর আমার সাথে কথা বলা অবস্থায় তিনি ফোন কেটে দেন। পরে জানতে পারি, তিনি ফাঁসি দিয়েছেন।

এ সময় তিনি কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং দ্ইু শিশু সন্তানকে নিয়ে কি করবেন ? এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ দিকে এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন জানান, ফেসবুকে লাইভের মাধ্যমে নয়নের আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারি। পরে আমি তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করি এবং সৌদিআরবে থাকা আমার ইউনিয়নের অন্যদেরকে, তার (নয়ন) সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলি।

তিনি বলেন, আমি তাকে বার বার বলেছি, সে জন্য ফাঁসি না দেয়। তার এবং তার পরিবারের সবকিছু আমি দেখবো। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। আমি উপায়ন্তর না দেখে তার কাছে লোক পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা গিয়ে তাকে জীবিত পায়নি। তিনি জানান, এলাকার লোকজন তার কাছে যেতে সময় লেগেছে। এর মধ্যে সে বাসার ছাদে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলেছে।

এ দিকে আরিফুর ইসলাম নয়নের মারা যাওয়া খবর পেয়ে বুধবার বেলা দুইটার দিকে নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার সন্তানদের খোঁজখরব নিয়ে স্ত্রী আর বাবা মাকে সান্ত¡ণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম।

এ সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নয়নের পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদানের কথা বলেন। পরবর্তীতে সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তার আশ^াস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

৩১ দফা বাস্তবায়নে হাজীগঞ্জে বড়কুল পূর্ব, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ও দক্ষিণে ব্যারিস্টার কামালের গণসংযোগ

দালালের প্রতারণার শিকার হয়ে সৌদিআরবে ফেসবুক লাইভে হাজীগঞ্জের যুবকের আত্মহত্যা, পরিবারের পাশে ইউএনও

Update Time : 09:22:59 am, Thursday, 23 February 2023

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:

পাসপোর্ট ও আকামা না থাকা, ঋণ ও সংসার খরচ জোগানো এবং অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে না পেরে সৌদিআরবে মো. আরিফুল ইসলাম নয়ন (২৮) নামের হাজীগঞ্জের এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে তিনি সৌদিআরবের দাম্মাম শহরের নিজ বাসার ছাদে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এতে করে ঋণের ৫ লাখ টাকা ও দুই কন্যা শিশু সন্তানকে নিয়ে শুধুই অন্ধকার দেখছেন স্ত্রী মাহিনুর বেগম।

বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) ওই যুবকের বাড়িতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম। মো. আরিফুল ইসলাম নয়ন হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম খাঁনের ছোট ছেলে। তাঁর মা, বাবা, স্ত্রীসহ নুহা নামের ৭ বছর ও নুসাইবা নামের ২ বছরের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মিলন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ লাখ টাকা ঋণ করে ফ্রি ভিসায় গত বছরের এপ্রিল মাসে তার ছোট ভায়রা কচুয়া উপজেলার উজানির গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিমের মাধ্যমে সৌদিআরবে যান আরিফুল ইসলাম নয়ন। সেখানে দুই মাস ভায়রার সাথে থাকার পর তিনি অন্যত্র চলে যান। ভারতীয় মালিকের অধিনে নতুন কর্মস্থলে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না হলেও প্রথম পাঁছ-ছয় মাস কোন মতে চলে যায়। কিন্তু শেষ দুই মাস তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।

তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম জানান, মালিক তার পাসপোট নিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তিনি আকাম করতে পারেন নি। এর মধ্যে হঠাৎ করে অসুস্থ (প্রচন্ড মাথা ব্যাথা) হয়ে পড়েন এবং শেষ দুইমাস তিনি বেতনও পাননি। আবার ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদারেরাও তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। সবশেষ গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি মাথা ব্যথায় ভুগছিলেন। বিষয়টি তিনি মালিককে জানালে, উল্টো মালিক তাকে বকাঝকা করেন।

তিনি বলেন, পাসপোর্ট, আকামা ও টাকা না থাকায় তিনি বাসা থেকে বের হতে পারেন নি। তাই চিকিৎসাও হয়নি। খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ ও সংসার খরচ নিয়েও তিনি দুঃশ্চিন্তা করতেন। সোমবার দুপুরে তিনি আমাকে ও আমার আত্মীয়-স্বজনকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি মরে যাবেন। এরপর আমার সাথে কথা বলা অবস্থায় তিনি ফোন কেটে দেন। পরে জানতে পারি, তিনি ফাঁসি দিয়েছেন।

এ সময় তিনি কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং দ্ইু শিশু সন্তানকে নিয়ে কি করবেন ? এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ দিকে এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন জানান, ফেসবুকে লাইভের মাধ্যমে নয়নের আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারি। পরে আমি তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করি এবং সৌদিআরবে থাকা আমার ইউনিয়নের অন্যদেরকে, তার (নয়ন) সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলি।

তিনি বলেন, আমি তাকে বার বার বলেছি, সে জন্য ফাঁসি না দেয়। তার এবং তার পরিবারের সবকিছু আমি দেখবো। কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। আমি উপায়ন্তর না দেখে তার কাছে লোক পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা গিয়ে তাকে জীবিত পায়নি। তিনি জানান, এলাকার লোকজন তার কাছে যেতে সময় লেগেছে। এর মধ্যে সে বাসার ছাদে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলেছে।

এ দিকে আরিফুর ইসলাম নয়নের মারা যাওয়া খবর পেয়ে বুধবার বেলা দুইটার দিকে নিহতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার সন্তানদের খোঁজখরব নিয়ে স্ত্রী আর বাবা মাকে সান্ত¡ণা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম।

এ সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নয়নের পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদানের কথা বলেন। পরবর্তীতে সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন থেকে আর্থিক সহায়তার আশ^াস দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।