ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:১৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • ৬২ Time View

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েটের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশজুড়ে দুর্বিষহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। সারা দেশে এই অসহনীয় তাপমাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যজাত ও অল্প বয়সী শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়া এবং উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এই বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বাবা-মায়েদের প্রতি তাদের সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে বিবৃতিতে।

ইউনিসেফ জানায়, চলমান এই তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আমাদের আগে শিশু ও সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে। চলমান এই তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য ইউনিসেফ সম্মুখ সারির কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।

১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করুন। তপ্ত দুপুর ও বিকালের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখুন। শিশুরা যেন হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সারা দিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রাথমিক চিকিৎসা: যদি কোনও শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে ‘হিট স্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয় (যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়ি) তাহলে তাকে একটি ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান। যেখানে ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে। এরপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার শরীর মুছিয়ে দিন বা গায়ে ঠান্ডা পানি দিন। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন (ওআরএস) পান করতে দিন। তবে হিটস্ট্রোকের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে (যেমন কোনও কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে) সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।

৩. আপনার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখুন: তাপপ্রবাহ চলাকালে অসহায় পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাই সবার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকেন। আপনার প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজ নিন ও খেয়াল রাখুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

Update Time : ১২:১৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েটের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশজুড়ে দুর্বিষহ তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। সারা দেশে এই অসহনীয় তাপমাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

ইউনিসেফের ২০২১ সালের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে নবজাতক, সদ্যজাত ও অল্প বয়সী শিশুদের জন্য। হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতাজনিত ডায়রিয়া এবং উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবে সৃষ্ট অসুস্থতায় এই বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

শিশুদের ওপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউনিসেফ বাবা-মায়েদের প্রতি তাদের সন্তানদের পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে বিবৃতিতে।

ইউনিসেফ জানায়, চলমান এই তাপপ্রবাহসহ জলবায়ু পরিবর্তনের আরও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। অস্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আমাদের আগে শিশু ও সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখার প্রতি নজর দিতে হবে। চলমান এই তাপপ্রবাহ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সুরক্ষার জন্য ইউনিসেফ সম্মুখ সারির কর্মী, বাবা-মা, পরিবার, পরিচর্যাকারী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।

১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের বসা ও খেলার জন্য ঠান্ডা জায়গার ব্যবস্থা করুন। তপ্ত দুপুর ও বিকালের কয়েক ঘণ্টা তাদের বাড়ির বাইরে বেরোনো থেকে বিরত রাখুন। শিশুরা যেন হালকা ও বাতাস চলাচলের উপযোগী পোশাক পরে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সারা দিন তারা যেন প্রচুর পানি পান করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রাথমিক চিকিৎসা: যদি কোনও শিশু বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর মধ্যে ‘হিট স্ট্রেস’ বা তাপমাত্রাজনিত সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয় (যেমন- মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব, হালকা জ্বর, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাংসপেশিতে টান, ডায়াপার পরার জায়গাগুলোতে ফুসকুড়ি) তাহলে তাকে একটি ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যান। যেখানে ছায়া এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের সুযোগ আছে। এরপর ভেজা তোয়ালে দিয়ে তার শরীর মুছিয়ে দিন বা গায়ে ঠান্ডা পানি দিন। তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা খাবার স্যালাইন (ওআরএস) পান করতে দিন। তবে হিটস্ট্রোকের (তাপমাত্রাজনিত অসুস্থতার) উপসর্গ তীব্র হলে (যেমন কোনও কিছুতে সাড়া না দিলে, অজ্ঞান হয়ে পড়লে, তীব্র জ্বর, হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে, খিঁচুনি দেখা দিলে এবং অচেতন হয়ে পড়লে) সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে।

৩. আপনার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখুন: তাপপ্রবাহ চলাকালে অসহায় পরিবার, প্রতিবন্ধী শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিরাই সবার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকিতেও তারাই বেশি থাকেন। আপনার প্রতিবেশী, বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের খোঁজ নিন ও খেয়াল রাখুন।