ঢাকা 10:25 am, Saturday, 28 June 2025

হাজীগঞ্জে জোড়া খুনের আসামি আলম ২ দিনের রিমান্ডে

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:12:17 pm, Wednesday, 5 June 2024
  • 5 Time View

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্

হাজীগঞ্জে আলোচিত দাদি হামিদুন্নেসা (৭২) ও নাতি আরাফাত হোসেন (১২) খুনের ঘটনায় সন্দেহজনক প্রধান আসামি আলমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রহমান আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই ঘটনায় গত শনিবার নিহত হামিদুন্নেসার পুত্রবধু ও আরাফাতের মা শাহিনা বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি হিসেবে পুলিশ আলমকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগে শুক্রবার (৩১ মে) বিকালে তাকে আটক করে র‌্যাব-১১ এর আভিযানিক দল।

আসামি আলম (৩৮) উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়া বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে। গত ২৭ মে (সোমবার) দিবাগত রাতে ওই গ্রামের বকাউল বাড়ির নিজ ঘরে খুনের শিকার হন দাদি হামিদুন্নেসা ও নাতি আরাফাত হোসেন। এই ঘটনার পর থেকে আলম পলাতক ছিলেন।

এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আলম মুখ খোলেনি। তাই, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৭ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে নিজ ঘরে দাদি হামিদুন্নেসা, নাতি আরাফাত ও নাতিন হালিমা আক্তার মিমকে (১৫) কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে হামিদুন্নেসা ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত হোসেন মারা যান এবং গুরুতর আহত মিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারিরিক অবস্থা উন্নতির দিকে, তবে শঙ্কামুক্ক নন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

খুনের শিকার হামিদুন্নেসা ওই বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও নিহত আরাফাত এবং আহত মিম প্রবাসী ইউসুফ হোসেনের ছেলে ও মেয়ে। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণি ও মিম একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং তারা দুইজন হামিদুন্নেসার ছেলের ঘরের নাতি ও নাতিন।

এ দিকে এই ঘটনার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি রহস্যাবৃত্তের মধ্যেই রয়েছে। অর্থ্যাৎ এখনো হত্যার ক্লু উদঘাটন হয়নি। ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড, তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সংস্থা। তবে প্রথমেই বিষয়টি ডাকাতি বলে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনায় খুনের শিকার হামিদুন্নেসার মেয়ে ও চাঁদপুর সদরের বাবুরহাটের বাবুল মালের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, তার মেয়ে তাছলিমাকে রাধাসার ছাড়া বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে মিলনের (৩৮) কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর মিলনের জমজ ভাই আলম (৩৮) তার মেয়েকে ডিস্ট্রাব করতেন। পরে তারা অসহ্য হয়ে তালাকের মাধ্যমে মেয়েকে ওই ঘর থেকে নিয়ে এনে ঢাকায় বিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ওই ঘরেও সমস্যার কারণে মেয়ে আর শশুর বাড়ি যায়নি। কারণ, আলম ঢাকায় গিয়েও তার মেয়ের স্বামীর কাছে আজে-বাঝে কথা বলেছে। এরপর সে তাছলিমাকে কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার মা (হামিদুন্নেসা) রাজি হয়নি। সবশেষ কয়েকদিন আগে আলম ও ঢাকার জামাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাকে হুমকি-ধমকি দেয় এবং হুমকি-ধমকির পর সোমবার রাতে মা ও আমার ভাইয়ের ছেলে খুন হয়।

এ দিকে আলম ও ঢাকার জামায়ের (তাছলিমার স্বামী) হুমকি-ধমকির বিষয়টি নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগমও সংবাদকর্মীদের জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের বাড়িতে এসে আমার শাশুড়িকে হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়া সাচারে লাখো ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত

হাজীগঞ্জে জোড়া খুনের আসামি আলম ২ দিনের রিমান্ডে

Update Time : 06:12:17 pm, Wednesday, 5 June 2024

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্

হাজীগঞ্জে আলোচিত দাদি হামিদুন্নেসা (৭২) ও নাতি আরাফাত হোসেন (১২) খুনের ঘটনায় সন্দেহজনক প্রধান আসামি আলমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রহমান আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই ঘটনায় গত শনিবার নিহত হামিদুন্নেসার পুত্রবধু ও আরাফাতের মা শাহিনা বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি হিসেবে পুলিশ আলমকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগে শুক্রবার (৩১ মে) বিকালে তাকে আটক করে র‌্যাব-১১ এর আভিযানিক দল।

আসামি আলম (৩৮) উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের পশ্চিম রাধাসার গ্রামের ছাড়া বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে। গত ২৭ মে (সোমবার) দিবাগত রাতে ওই গ্রামের বকাউল বাড়ির নিজ ঘরে খুনের শিকার হন দাদি হামিদুন্নেসা ও নাতি আরাফাত হোসেন। এই ঘটনার পর থেকে আলম পলাতক ছিলেন।

এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আলম মুখ খোলেনি। তাই, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৭ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার দিকে নিজ ঘরে দাদি হামিদুন্নেসা, নাতি আরাফাত ও নাতিন হালিমা আক্তার মিমকে (১৫) কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে হামিদুন্নেসা ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত হোসেন মারা যান এবং গুরুতর আহত মিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারিরিক অবস্থা উন্নতির দিকে, তবে শঙ্কামুক্ক নন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

খুনের শিকার হামিদুন্নেসা ওই বাড়ির মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ও নিহত আরাফাত এবং আহত মিম প্রবাসী ইউসুফ হোসেনের ছেলে ও মেয়ে। আরাফাত শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণি ও মিম একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং তারা দুইজন হামিদুন্নেসার ছেলের ঘরের নাতি ও নাতিন।

এ দিকে এই ঘটনার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও ঘটনাটি রহস্যাবৃত্তের মধ্যেই রয়েছে। অর্থ্যাৎ এখনো হত্যার ক্লু উদঘাটন হয়নি। ডাকাতি, প্রেম, পরকীয়া নাকি পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড, তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সংস্থা। তবে প্রথমেই বিষয়টি ডাকাতি বলে চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনায় খুনের শিকার হামিদুন্নেসার মেয়ে ও চাঁদপুর সদরের বাবুরহাটের বাবুল মালের স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, তার মেয়ে তাছলিমাকে রাধাসার ছাড়া বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে মিলনের (৩৮) কাছে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর মিলনের জমজ ভাই আলম (৩৮) তার মেয়েকে ডিস্ট্রাব করতেন। পরে তারা অসহ্য হয়ে তালাকের মাধ্যমে মেয়েকে ওই ঘর থেকে নিয়ে এনে ঢাকায় বিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ওই ঘরেও সমস্যার কারণে মেয়ে আর শশুর বাড়ি যায়নি। কারণ, আলম ঢাকায় গিয়েও তার মেয়ের স্বামীর কাছে আজে-বাঝে কথা বলেছে। এরপর সে তাছলিমাকে কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার মা (হামিদুন্নেসা) রাজি হয়নি। সবশেষ কয়েকদিন আগে আলম ও ঢাকার জামাই আমাদের বাড়িতে এসে আমার মাকে হুমকি-ধমকি দেয় এবং হুমকি-ধমকির পর সোমবার রাতে মা ও আমার ভাইয়ের ছেলে খুন হয়।

এ দিকে আলম ও ঢাকার জামায়ের (তাছলিমার স্বামী) হুমকি-ধমকির বিষয়টি নিহত আরাফাতের মা শাহিনা বেগমও সংবাদকর্মীদের জানান। তিনি বলেন, তারা আমাদের বাড়িতে এসে আমার শাশুড়িকে হুমকি-ধমকি দিয়ে গেছে।