সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা । এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।
ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার ফলে এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। অবশ্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান বলেছেন, নির্দেশনা সাপেক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চের স্মারক সংশোধন করে জারি করা পরিপত্রের ভাষ্য, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হলো।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম রিপন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাজু মিয়া।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতার পরপরই সংবিধান হওয়ার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করা হয়। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পূর্ববর্তী সব কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দিক বিবেচনা করে সংবিধান প্রণয়নের আগেই কোটাপদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। এটি চলমান অবস্থায় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকার একটি পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা ৯ম থেকে ১৩ গ্রেডের ক্ষেত্রে বাতিল করে দেয়। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আপিল বিভাগ পর্যন্ত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৮ সালে কোটাব্যবস্থা রেখে শুধু ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রহিত করা হয় অপমানজনকভাবে। এই কোটাপদ্ধতি বাতিল করার কারণে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি বা তার নিচের পদে চাকরি লাভের সুযোগ পেত। এটি জাতির কাছেও লজ্জার। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ রায় অনুসারে ৩০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্পষ্টত উল্লেখ আছে। যদি ৩০ শতাংশ কোটার ক্ষেত্রে প্রার্থী না পাওয়া গেলে, সে ক্ষেত্রে শূন্য পদ মেধার ভিত্তিতে জেলা কোটা থেকে নেওয়া যাবে।
জনপ্রশাসনসচিবের আইনজীবী রাজু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল না। ২০১৮ সালের পরিপত্র আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণার ফলে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অভিপ্রায় অনুসারে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।