বাংলার মাটিতে যাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, যাঁরা জীবন দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন—তাঁদের স্মৃতি কোনোদিন মুছে যাবে না। শহীদ আজাদ সরকার তেমনি একজন সংগ্রামী নেতা, যাঁকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই শহীদের স্মৃতিকে অম্লান রাখতে এবার তাঁর নামে হাজীগঞ্জে স্থাপন করা হলো স্মৃতিফলক।
আজাদ সরকার ছিলেন বিএনপির একজন নিবেদীত কর্মী। সে হিসেবে তিনি বিএনপির মিছিল, মিটিংসহ সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। তার ছেলে আহমেদ কবির হিমেল হাজীগঞ্জ পৌর ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের দাবীতে জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে হাজীগঞ্জ পৌরসভার সম্মুখে আন্দোলনকারীদের পানি খাওয়ানোর সময় ফ্যাসিস্ট বাহিনী তাকে কুঁপিয়ে গুরুতর আহত করে। ওই দিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় ফ্যাসিস্ট মুক্ত হওয়ার পর তার ছেলে আহমেদ কবির হিমেল ১৪ আগস্ট হাজীগঞ্জ থানায় পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী মনির হোসেন মিঠুসহ ১৫ জনকে নামীয়সহ আরো অর্ধশতাধীক ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা করে।
এ মামলায় প্রধান আসামী কাজী মনির হোসেন মিঠু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলালউদ্দিন মিয়াজী, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাব্বিসহ কয়েকজন জেল হাজতে রয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড়ে আজাদ সরকারের নামে স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইবনে আল জাহিদ হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক, শহীদ আজাদের সন্তান আহমেদ কবির হিমেল সরকার, স্থানীয় যুবদল নেতা মিজানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মোনাজাত পরিচালনা করেন টোরাগড় কাজী বাড়ী জামে মসজিদের বেশ ইমামও খতিব মুফতি আব্বাস আলী।
আজ থেকে এক বছর আগে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেন আজাদ সরকার। সেই প্রতিবাদেরই রক্তাক্ত ফসল ছিল ২০২৪ সালের ৪ আগস্টের কালরাত। ওই দিন পৌর ভবনের সামনে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন তিনি।
নামফলক উদ্বোধনের সময় ইউএনও বলেন, “আজাদের মতো প্রতিবাদী মানুষদের স্মৃতি জাতির চেতনায় বাঁচিয়ে রাখা উচিত। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি ছিলেন না, ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক।”
শহীদের পুত্র হিমেল সরকার বলেন, “আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও আজ তাঁর আত্মত্যাগ স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের পরিবারের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।”
স্থানীয় জনগণ জানান, এই শহীদী নামফলক প্রজন্মের কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রতীক হয়ে থাকবে।