মৃত ঘোষিত সারাহ ইসলামের কিডনি ও কর্নিয়া চারজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার দুটি কিডনি দুই নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, আর কর্নিয়া দুটি দুই পুরুষের চোখে।
তাদের চারজনই ভালো আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মাত্র ২০ বছর বয়সে সারা ইসলাম চলে গেলেন পরপারে।তার চারটি অঙ্গ নিয়ে বেঁচে থাকবেন চারজন।
অবশ্য মৃত্যুর আগে সারা তার পুরো দেহটাই দান করে দিতে তার মাকে বলে গেছেন।
মেয়ে হারানোর অতল শোক নিয়েও সারা ইসলামের মা শবনম সুলতানা সম্মতি দিলেন তার মেয়ের দুটি কিডনি ও চোখের কর্নিয়া দান করার বিষয়ে। এর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একটি সম্মতিপত্র লিখেছেন। সে সম্মতিপত্রে তিনি লিখেছেন।
‘আমি রোজিনীর মা শবনম মুলতানা এই মর্মে প্রত্যয়ন করতেছি যে; আমার মেয়ে সারা ইসলাম (২০), (multiple tubular Sclerosis) রোগের অপারেশেন পরবর্তী জটিলতায় ZCU, BSMMU ভর্তি করানো হয়। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে, অত্র ১৮-০১-২০২৩ তারিখে ডাক্তারেরা তাকে (Brain stem Death) ঘোষণা করেন। এমতা অবস্থায় আমি স্বেচ্ছায় প্রনোদিত হয়ে আমার মেয়ের দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া দান করিতে সম্মতি দান করছি। ইহাতে কোন প্রকার ভয় ভীতি বা আর্থিক প্রলোভন দেখানো হয়নি। এই অস্ত্রপ্রচার এবং কিডনি ও কর্নিয়া দান সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা, জটিলতা হলে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী সদস্য, অধ্যাপক, চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারী দায়ী থাকবে না।’
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কিডনি অপারেশন থিয়েটারে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সার্বিক নির্দেশনায় এ কিডনি ও চোখের কর্নিয়া দান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গদান ও বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সারাহ ইসলামের একটি কিডনি দেওয়া হয় মিরপুরের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে। ওই গৃহবধূর কিডনি প্রতিস্থাপনের কাজটি হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। তার চিকিৎসা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ব্লকে।
শুক্রবার সকালে ওই ব্যবসায়ী জানানন, তার স্ত্রী ভালো আছেন।
সারাহ ইসলামের অন্য কিডনিটি প্রতিস্থাপন করা হয় রাজধানীর মিরপুরের বেসরকারি কিডনি ফাউন্ডেশনে। হাসপাতালের প্রধান ও দেশের বিশিষ্ট কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুন–অর–রশীদ জানান, ওই নারী ভালো আছেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে সময় লাগবে।
বৃহস্পতিবার সারাহর দুটি কর্নিয়া দুই পুরুষের চোখে লাগানো হয়। একটি বিএসএমএমইউতে এবং অন্যটি সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে।তারাও ভালো আছেন।
বুধবার বিএসএমএমইউতে একটি কিডনি ও কিডনি ফাইন্ডেশনে অন্য কিডনি দুই নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।
এই জটিল অস্ত্রোপচারে একাধিক চিকিৎসকদল কাজ করেছিল। তাদের কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কর্নিয়া দেওয়া দুই ব্যক্তিও সুস্থ আছেন।