ঢাকা 9:50 am, Wednesday, 6 August 2025

এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নিজেকে লাকি মনে করছেন নাফিস

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:19:20 pm, Tuesday, 21 March 2023
  • 14 Time View

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

মো. নাফিস উল হক সিফাত। দেখে মনে হয় খুবই সাধারণ একজন ছাত্র। কিন্তু তা নয়, খুবই মেধাবি। বাবা নাসির উদ্দিন ও মা কামরুন নাহার কলেজ শিক্ষক। বাবা-মায়ের সাথেই থাকেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর পাবলিক লাইব্রেরী এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় শহরের হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক প্রাথমিকের নিকটবর্তী হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে পড়ছেন জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবেন। এখনো অধ্যায়নরত, কিন্তু স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) তে। এমআইটিতে পড়ার সুযোগ তার জন্য খুবই লাকি গণমাধ্যমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন নাফিস। তিনি ওই বিশ^বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার আগ্রহ বেশী।

কিভাবে এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিস বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে এই বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, তারা কিভাবে হয় সেটা জানিনা। তবে আমি মনে করে আমার সুযোগটা এনে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কারণ এই মাধ্যমটির অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকায় আমি এই বিশ^বিদ্যালয়ে আবেদন এবং তাদের পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছে। আমাদের ফেসবুক কমিউনিটি গ্রুপটিতে পূর্বে যেসব সিনিয়র ভাইয়ারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। তাদের সাথে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। কারণ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা বিশে^র কোন না কোন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন করেছেন। ঠিক আমিও ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ কিভাবে সৃষ্টি হয়? নাফিস জানালেন, ছোট বেলা থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি খুবই আগ্রহ। অর্থাৎ প্রযুক্তি নিয়ে ঘাটঘাটি। জন্মদিনে সব সময় তার বোন বই উপহার দিতেন। একবার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তার জন্মদিনে বড় বোন জাফর ইকবাল স্যারের মজার মজার গনিতের বই। ওই বইটি পড়ে গনিতের সমাধান যেভাবে বুঝতে পেরেছেন, সে থেকে আরো বই পড়ার আগ্রহ জমে। কারণ এই বই সাধারণত গণিত যেভাবে শেখানো হয়, তার বাইরে আরো অনেক মজার বিষয় আছে। পাশাপাশি কম্পিউটার শেখার আগ্রহ জমে এবং প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন। এসব কিছুর পাশাপাশি তার অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন করার আগ্রহ জমে এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে অংশগ্রহন করে ব্রোঞ্জ পদক পান।

প্রতিদিন কয় ঘন্টা একাডেমিক পড়াশুনা করা হয়েছে? খুব হেসেই নাফিস জানালেন-আসলে আমি পরীক্ষার আগে টানা পড়াশুনা করতাম। নিয়মিত পড়া খুব কমই হত। কারণ আমি অলিম্পিয়াডের জন্য একটু বেশী সময় দিয়েছি। কারণ আমি অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সাথে যুক্ত থেকে জানলাম একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সাধারণ জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। কারণ যারা এই বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই সিলেবাসের বাইরের বই বেশী পড়েছেন।

অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন ছাড়া কি এই ধরণের বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিস জানালেন, যারা এই ধরণের বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তারা, তাদের একাডেমিক দিক ভাল থাকে এবং তাদের এই ধরণের যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অতিরিক্ত বিষয়ে জ্ঞান থাকা লাগে। যেমন বির্তক, ছবি আকা, বিজ্ঞান বিষয়ক কার্যক্রম যেমন-গবেষণা। এছাড়াও যার যে বিষয়টি পছন্দ সে ওই বিষয় নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তার মানে হচ্ছে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে এবং এর পাশাপাশি এক্সটা কারিকুলাম একিটিভিটিসগুলোতে নিজেদেরকে যুক্ত রাখতে হবে।

নাফিস এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৪তারিখে অনলাইনে আবেদন করেন এবং তার ভর্তি বিষয়টি ই-মেইেলে মাধ্যমে নিশ্চিত হয় গত ১৫ মার্চ। তার এই সাফল্য নিয়ে গর্বিত শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা। ১৭ মার্চ শুক্রবার চাঁদপুর সরকারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে নাফিসকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এছাড়া তার বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকেও অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ইসলামী আন্দোলনের দোয়ও আলোচনা

এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নিজেকে লাকি মনে করছেন নাফিস

Update Time : 10:19:20 pm, Tuesday, 21 March 2023

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

মো. নাফিস উল হক সিফাত। দেখে মনে হয় খুবই সাধারণ একজন ছাত্র। কিন্তু তা নয়, খুবই মেধাবি। বাবা নাসির উদ্দিন ও মা কামরুন নাহার কলেজ শিক্ষক। বাবা-মায়ের সাথেই থাকেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর পাবলিক লাইব্রেরী এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় শহরের হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উচ্চ মাধ্যমিক প্রাথমিকের নিকটবর্তী হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে পড়ছেন জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবেন। এখনো অধ্যায়নরত, কিন্তু স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) তে। এমআইটিতে পড়ার সুযোগ তার জন্য খুবই লাকি গণমাধ্যমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন নাফিস। তিনি ওই বিশ^বিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার আগ্রহ বেশী।

কিভাবে এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিস বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে এই বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়, তারা কিভাবে হয় সেটা জানিনা। তবে আমি মনে করে আমার সুযোগটা এনে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কারণ এই মাধ্যমটির অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সাথে যুক্ত থাকায় আমি এই বিশ^বিদ্যালয়ে আবেদন এবং তাদের পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহনের সুযোগ হয়েছে। আমাদের ফেসবুক কমিউনিটি গ্রুপটিতে পূর্বে যেসব সিনিয়র ভাইয়ারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি। তাদের সাথে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। কারণ বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা বিশে^র কোন না কোন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন করেছেন। ঠিক আমিও ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই) এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ কিভাবে সৃষ্টি হয়? নাফিস জানালেন, ছোট বেলা থেকেই তার বিজ্ঞানের প্রতি খুবই আগ্রহ। অর্থাৎ প্রযুক্তি নিয়ে ঘাটঘাটি। জন্মদিনে সব সময় তার বোন বই উপহার দিতেন। একবার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তার জন্মদিনে বড় বোন জাফর ইকবাল স্যারের মজার মজার গনিতের বই। ওই বইটি পড়ে গনিতের সমাধান যেভাবে বুঝতে পেরেছেন, সে থেকে আরো বই পড়ার আগ্রহ জমে। কারণ এই বই সাধারণত গণিত যেভাবে শেখানো হয়, তার বাইরে আরো অনেক মজার বিষয় আছে। পাশাপাশি কম্পিউটার শেখার আগ্রহ জমে এবং প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেন। এসব কিছুর পাশাপাশি তার অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন করার আগ্রহ জমে এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে অংশগ্রহন করে ব্রোঞ্জ পদক পান।

প্রতিদিন কয় ঘন্টা একাডেমিক পড়াশুনা করা হয়েছে? খুব হেসেই নাফিস জানালেন-আসলে আমি পরীক্ষার আগে টানা পড়াশুনা করতাম। নিয়মিত পড়া খুব কমই হত। কারণ আমি অলিম্পিয়াডের জন্য একটু বেশী সময় দিয়েছি। কারণ আমি অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সাথে যুক্ত থেকে জানলাম একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সাধারণ জ্ঞান খুবই প্রয়োজন। কারণ যারা এই বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই সিলেবাসের বাইরের বই বেশী পড়েছেন।

অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহন ছাড়া কি এই ধরণের বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে নাফিস জানালেন, যারা এই ধরণের বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তারা, তাদের একাডেমিক দিক ভাল থাকে এবং তাদের এই ধরণের যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অতিরিক্ত বিষয়ে জ্ঞান থাকা লাগে। যেমন বির্তক, ছবি আকা, বিজ্ঞান বিষয়ক কার্যক্রম যেমন-গবেষণা। এছাড়াও যার যে বিষয়টি পছন্দ সে ওই বিষয় নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তার মানে হচ্ছে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে এবং এর পাশাপাশি এক্সটা কারিকুলাম একিটিভিটিসগুলোতে নিজেদেরকে যুক্ত রাখতে হবে।

নাফিস এমআইটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৪তারিখে অনলাইনে আবেদন করেন এবং তার ভর্তি বিষয়টি ই-মেইেলে মাধ্যমে নিশ্চিত হয় গত ১৫ মার্চ। তার এই সাফল্য নিয়ে গর্বিত শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা। ১৭ মার্চ শুক্রবার চাঁদপুর সরকারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে নাফিসকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এছাড়া তার বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকেও অধ্যক্ষ এবং শিক্ষকরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।