চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মিরপুর গ্রামে যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী সেলিনা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্বামী মাসুদ আলম ঢালীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ আব্দুল হান্নান এই রায় দেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মাসুদ আলম ঢালী উপজেলার মিরপুর গ্রামের মৃত বশির উল্যা ঢালীর ছেলে। হত্যার শিকার সেলিনা বেগম একই উপজেলার কড়ইতলী গ্রামের মৃত হাজী আবুল হাশেম খান ও মোসাম্মৎ আয়েশা বেগমের মেয়ে।
মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, মাসুদ আলম ঢালী ও সেলিনা বেগমের সাথে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ১৯৯৮ সালে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুজন পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরই মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌতুক দাবী নিয়ে পারিবারিক কলোহ দেখা দেয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল বিকাল আনুমানিক ৩ ঘটিকার সময় ২ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্বামী মাসুদ সেলিনার গলাচেপে হত্যার চেষ্টা করে এবং ব্যাপক মারধর করে। মার সহ্য করতে না পেরে সেলিনা ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু তার স্বামী মাসুদ আবার সেখান থেকে এনে তাকে বেধম মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এরপর বাড়ীর লোকজন ও স্বজনরা তাকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ৮ এপ্রিল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সেলিনা মৃত্যুবরণ করে। এমন সংবাদ জেনে তার শ^শুর পরিবারের লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে সেলিনার মা আয়েশা বেগম এসে তার মেয়েকে মৃত অবস্থায় পান।
এই ঘটনায় সেলিনার মা আয়েশা বেগম ২০০৮ সালের ৫ জুলাই ফরিদগঞ্জ থানায় মাসুদ আলম ঢালীসহ ৫জনকে আসামী করে মামলা করেন। ওই মামলাটি চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৭ জুলাই গৃহীত হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সময় ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুভাষ কান্তি দাস তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৭ আগষ্ট আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) সায়েদুল ইসলাম বাবু জানান, মামলাটি ১৪ বছরের অধিক সময়ে চলমান অবস্থায় আদালত ১২ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহন ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং আসামী তার অপরাধ স্বীকার করায় আদালত এই রায় দেন। তবে আসামী জামিনে গিয়ে পলাতক। রায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন না।
রাষ্ট্র পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ছিলেন খোরশেদ আলম শাওন এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মনিরা বেগম চৌধুরী।