অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
হাজীগঞ্জে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে স্কুলের দপ্তরির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. মিজানুর রহমান। তিনি উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী। তিনি গোগরা গ্রামের বাসিন্দা।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থীর নানা প্রধান শিক্ষকের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছেন প্রধান শিক্ষক এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি ম্যানেজিং কমিটিসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করেন।
শিক্ষার্থীর নানা সংবাদকর্মীদের জানান, নাতিনটা এতিম (বাবা নেই)। দূর্ঘটনাবশত গাছ থেকে পড়ে তার বাবা মারা গেছেন। মেয়েটা অনেক কষ্ট করে নাতিনটাকে পড়ালেখা করাচ্ছে। গত কয়েকদিন পূর্বে এই নাতিনের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আপত্তিকরভাবে হাত দেয় বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, নাতিন তার মা ও আমাদের কাছে বিষয়টি জানানোর পর আমি গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ দিকে দপ্তরি মিজানের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, একজন নারী অভিভাবককের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমুতে রাত-বিরাতে ফোন দেওয়ার অভিযোগ উঠে। তবে সামাজিকভাবে সম্মানহানীর ভয়ে তারা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার অভিযোগ রয়েছে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সময়ে তিনি মাদক সেবনকালীন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হন। পরে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে।
এ ব্যাপারে সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, আমার মেয়েটিও এই বিদ্যালয়ে পড়ে। তাহলে, আমি কিভাবে এমন কাজ করতে পারি? এ সময় তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ আলেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটিসহ ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
মাদক সেবনের বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের হাতে আটক হয়েছে কিনা তা বলতে পারবো না। তবে ওই দিন মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে, তাকে অনুপস্থিত দেখানো এবং শোকজ করা হয়েছে।
বেত্রাঘাতের বিষয়ে তিনি বলেন, বেত্রাঘাত নয় গাছের ঢাল দিয়ে গায়ে হাত তোলার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পেরে তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার নির্দেশনা দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাহবুব হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকা আছি। অবরোধের কারণে আসতে পারছিনা। তাই প্রধান শিক্ষককে বলেছি, তিনি যেন ম্যানেজিং কমিটির সভা ঢেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা অপরাধ দিয়ে অন্য অপরাধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
সাবেক ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসী মো. ফারুক হোসেন জানান, মেয়েটির নানা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এছাড়াও দপ্তরি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ শুনেছি। তিনি বলেন, আমি চাই তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কারণ, এটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
বাকিলা ক্লাস্টার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমি শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছি। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি এটিও সাহেব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আমি প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজিং কমিটির রেজ্যুলেশনসহ লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছি। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলছি। তিনি তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, এই সংবাদ লেখার সময় মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মিজানুর রহমানকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিসহ অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক চলছে।