চাঁদপুর জেলার অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজারকে যানজটমুক্ত এবং হকারমুক্ত করতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা পরিচালনা, অপরিকল্পিতভাবে যানবাহনের যাত্রী উঠানামা এবং সিএনজি অটোস্ট্যান্ডের বিশৃঙ্খলার কারণে বাজার এলাকাটি ভয়াবহ যানজটে পরিণত হয়।
এই সমস্যা নিরসনে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের নির্দেশে সম্প্রতি কয়েকবার হাজীগঞ্জ উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, হকার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা হকারদের দেড় মাস সময় দেওয়া হয়। শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে কোনো হকার আর ফুটপাত দখল করে বসতে পারবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হতে পারে জেল, জরিমানাও।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন,”হাজীগঞ্জ বাজারে যানজট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এবার আমরা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব না করে, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
তিনি বলেন, এ অভিযানে আর্মি, পুলিশ ছাড়াও থাকবে ব্যবসায়ী সমিতির স্বেচ্ছাসেবী টিম এবং পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবী টিম।
বাজার এলাকায় চলাচলকারী যানবাহনের জন্য নতুন রুটিনও নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, কচুয়া, শাহরাস্তি থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলো হাজীগঞ্জ পৌরসভার সামনে গেইট লক করে পশ্চিম বাজার চৌরাস্তায় গিয়ে গেইট খুলবে। একইভাবে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন পশ্চিম বাজারে যাত্রী নামিয়ে পৌরসভার সামনে গিয়ে গেইট খুলবে।
এর মধ্যে বাজারে যাত্রী উঠানামা করতে পারবেনা। এই নিয়ম অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজারের অভ্যন্তরে কোনো অটো বা সিএনজি স্ট্যান্ড থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে। সব অটো রিকশাকে পূর্ব বাজার বা পশ্চিম বাজার চৌরস্তায় যাত্রী ওঠানামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন ভাবেই এ নিয়ম অমান্য করা যাবেনা।
হকারদের পক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী আকতার হোসেন ভান্ডারী বলেন, “আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাতে না বসলে খাবো কীভাবে? তবে যদি বিকল্প জায়গা ও সময়সীমা মেনে সুযোগ দেওয়া হয়, আমরা সহযোগিতা করবো।” তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ফুটপাতে বসবোনা। অপেক্ষা করবো দেখি প্রশাসন কি করে।
হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানান, “আমরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নিয়মিত ব্যবসা চালাতে গেলে বাজারের শৃঙ্খলা খুব দরকার।”
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা জানান “আমরা সবাই চাচ্ছি একটি নিরাপদ, পরিষ্কার ও যানজটমুক্ত বাজার। প্রশাসনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করবো।”
শুক্রবার থেকে হকার হকার উচ্ছেদকে ঘিরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে যৌথবাহিনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বাজারে টহল শুরু করে। হকারদের সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে এটি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে জানা যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার থেকে হাজীগঞ্জ বাজার হবে সম্পূর্ণ হকার ও যানজটমুক্ত।
হাজীগঞ্জ বাজারে প্রাথমিক অভিযানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জাবের হোসেন চৌধুরী, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাছান মাহমুদ’সহ যৌথবাহিনীর সদস্যবৃন্দ।