ঢাকা 9:22 am, Monday, 15 September 2025
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে বিলাসী জীবনযাপনের ছবি ও ভিডিও

মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণীর বিলাসী জীবন নিয়ে নানান প্রশ্ন, পরিবারের সদস্যরা জানে তারা চাকুরী করে

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:21:26 am, Monday, 15 September 2025
  • 0 Time View

ময়মনসিংহ নগরীতে ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে বাসা দেখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক কলেজছাত্র। এ ঘটনায় থানায় মামলা ও দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া দুই তরুণীকে আজ ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

এদিকে প্রতারণার ঘটনা প্রকাশের পর সামনে আসে ঘটনার শিকার কলেজছাত্র নিজেও মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় সাবলেট বাসা দেখতে গিয়েছিলেন আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম (২৩)। তার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামে।

ওই বাসায় যাওয়ার পর চার তরুণী ও চার তরুণ মিলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করেন বলে অভিযোগ নাজমুলে। চক্রটি মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় শুক্রবার থানায় অভিযোগ দিলে মামলা হয় এবং পুলিশ সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) এবং ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে এবং তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করে। দুই তরুণীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।

দুই তরুণী গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে তাদের বিলাসী জীবনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হতে থাকে। কলেজপড়ুয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণীর বিলাসী জীবন ও প্রতারণার কৌশল নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় চলছে।

ময়মনসিংহর মত শহরে এত বিশাল বিলাসী ফ্ল্যাট নিয়ে থাকারও প্রশ্ন উঠে।

তবে তাদের পরিবার জানে তারা বগ চাকুরি করে।

এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে ঘটনার শিকার তরুণকে নিয়েও। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম। ফেসবুকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা জানান দিয়ে ময়মনসিংহে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। নগরীর মীরবাড়ি এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সে সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এ মোহাইমেনুর রশিদ জানিয়েছিলেন, ‘নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম মানুষকে ভুয়া প্রশ্নপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের জন্য নগরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় অলকা নদী বাংলা সায়মা টেলিকম থেকে একটি পুরোনো মোবাইল ক্রয় করে। পরে ফেসবুকে একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলে। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে প্রশ্নপত্র দেবে বলে লক্ষাধিক টাকা আনে। পরে তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা পাওয়া যায়।’

এসব বিষয়ে জানতে রোববার দুপুরে নাজমুল হাসান ওরফে নাঈমের মোবাইলে কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম ফকির বলেন, রোববার দুই তরুণীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর না করে আদালত কারাগারে পাঠায়৷ দুজন আদালতে ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি না দিলেও পুলিশের কাছে তারা ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। দুই মেয়ের কাছ থেকে মালামালও উদ্ধার করে পুলিশ। আজ দুজনকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুই তরুণীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মাধ্যমে প্রতারিত নতুন কেউ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে, ফেসবুকে দুই তরুণীর বিলাসী জীবনের ছবি-ভিডিও দেখা গেছে। পারিবারিকভাবে তারা এতটা সচ্ছল না হলেও বিলাসী জীবনের অর্থের উৎস কী সেই বিষয়টিও বের করা হবে। চক্রের আরও দুজন নারী ও চারজন পুরুষকে শনাক্তের চেষ্টা করছে। রিমান্ডে এনে সবকিছু বের করা হবে।

এসআই মাহবুব আলম ফকির বলেন, মামলাটির বাদী কলেজছাত্র প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিল সে বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি, তা আগে জানতাম না। এখন বাদী নিজেও ফোন বন্ধ করে ফেলেছে। এখানে বাদীর বিষয়গুলোও পুঙ্খানুভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ দিন আগে ৫ সদস্যের আরও একটি চক্র আমরা ধরেছিলাম নগরের সানকিপাড়া, জামতলা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অভিযান করে। নারীর ফাঁদ পেতে লোক নিয়ে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করেছিল চক্রটি।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণীর বিলাসী জীবন নিয়ে নানান প্রশ্ন, পরিবারের সদস্যরা জানে তারা চাকুরী করে

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে বিলাসী জীবনযাপনের ছবি ও ভিডিও

মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণীর বিলাসী জীবন নিয়ে নানান প্রশ্ন, পরিবারের সদস্যরা জানে তারা চাকুরী করে

Update Time : 09:21:26 am, Monday, 15 September 2025

ময়মনসিংহ নগরীতে ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে বাসা দেখতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক কলেজছাত্র। এ ঘটনায় থানায় মামলা ও দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া দুই তরুণীকে আজ ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

এদিকে প্রতারণার ঘটনা প্রকাশের পর সামনে আসে ঘটনার শিকার কলেজছাত্র নিজেও মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় সাবলেট বাসা দেখতে গিয়েছিলেন আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম (২৩)। তার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামে।

ওই বাসায় যাওয়ার পর চার তরুণী ও চার তরুণ মিলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করেন বলে অভিযোগ নাজমুলে। চক্রটি মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় শুক্রবার থানায় অভিযোগ দিলে মামলা হয় এবং পুলিশ সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) এবং ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েলকে (১৯) গ্রেপ্তার করে এবং তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করে। দুই তরুণীর বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায়।

দুই তরুণী গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে তাদের বিলাসী জীবনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ হতে থাকে। কলেজপড়ুয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই তরুণীর বিলাসী জীবন ও প্রতারণার কৌশল নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় চলছে।

ময়মনসিংহর মত শহরে এত বিশাল বিলাসী ফ্ল্যাট নিয়ে থাকারও প্রশ্ন উঠে।

তবে তাদের পরিবার জানে তারা বগ চাকুরি করে।

এর মধ্যে আলোচনায় এসেছে ঘটনার শিকার তরুণকে নিয়েও। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম। ফেসবুকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা জানান দিয়ে ময়মনসিংহে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। নগরীর মীরবাড়ি এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সে সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এ মোহাইমেনুর রশিদ জানিয়েছিলেন, ‘নাজমুল হাসান ওরফে নাঈম মানুষকে ভুয়া প্রশ্নপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের জন্য নগরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় অলকা নদী বাংলা সায়মা টেলিকম থেকে একটি পুরোনো মোবাইল ক্রয় করে। পরে ফেসবুকে একটি ফোন নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলে। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে প্রশ্নপত্র দেবে বলে লক্ষাধিক টাকা আনে। পরে তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা পাওয়া যায়।’

এসব বিষয়ে জানতে রোববার দুপুরে নাজমুল হাসান ওরফে নাঈমের মোবাইলে কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব আলম ফকির বলেন, রোববার দুই তরুণীকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছিল। তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর না করে আদালত কারাগারে পাঠায়৷ দুজন আদালতে ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি না দিলেও পুলিশের কাছে তারা ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। দুই মেয়ের কাছ থেকে মালামালও উদ্ধার করে পুলিশ। আজ দুজনকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুই তরুণীকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মাধ্যমে প্রতারিত নতুন কেউ আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে, ফেসবুকে দুই তরুণীর বিলাসী জীবনের ছবি-ভিডিও দেখা গেছে। পারিবারিকভাবে তারা এতটা সচ্ছল না হলেও বিলাসী জীবনের অর্থের উৎস কী সেই বিষয়টিও বের করা হবে। চক্রের আরও দুজন নারী ও চারজন পুরুষকে শনাক্তের চেষ্টা করছে। রিমান্ডে এনে সবকিছু বের করা হবে।

এসআই মাহবুব আলম ফকির বলেন, মামলাটির বাদী কলেজছাত্র প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিল সে বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি, তা আগে জানতাম না। এখন বাদী নিজেও ফোন বন্ধ করে ফেলেছে। এখানে বাদীর বিষয়গুলোও পুঙ্খানুভাবে তদন্ত করে দেখা হবে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ দিন আগে ৫ সদস্যের আরও একটি চক্র আমরা ধরেছিলাম নগরের সানকিপাড়া, জামতলা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অভিযান করে। নারীর ফাঁদ পেতে লোক নিয়ে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করেছিল চক্রটি।