ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদদলিত হয়ে ১১৬ জনের মৃত্যু, ভোলে বাবাকে খুঁজছে পুলিশ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৩৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪
  • ৭০ Time View

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাই ওই ধর্মীয় আয়োজনে গিয়েছিলেন। পরে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১১৬ জন, আহত হন আরও অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে খুঁজছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। ভোলে বাবার নাম নারায়ণ শাকর হরি। তিনি শাকর বিশ্ব হরি বা ভোলে বাবা নামে পরিচিত।

ভোলে বাবা দাবি করেন, তিনি একসময় ভারতের গোয়েন্দা বিভাগে (আইবি) চাকরি করতেন। ২৬ বছর আগে ধর্ম পালনের জন্য তিনি সেই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন বলে দাবি তাঁর।

বর্তমানে ভোলে বাবার লাখো অনুসারী রয়েছে। ভারতজুড়ে তাঁর অনুসারী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। তবে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান ও দিল্লিতে ভোলে বাবার অনুসারী বেশি।

ভোলে বাবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে চলেন। তিনি গ্রামে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এসব এলাকায়ই তাঁর অনুসারী বেশি। প্রায় লাখো মানুষ তাঁর ভক্ত। গতকালের ওই আয়োজনে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

প্রতি মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে ভোলে বাবার উদ্যোগে ধর্মীয় সাধুসঙ্গ আয়োজন করা হয়। হাজারো মানুষ তাতে অংশ নেন। এসব আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকেন। তাঁরা ভোলে বাবার অনুসারীদের খাবার ও পানি বিতরণ তদারক করেন। শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেন।

ভোলে বাবা সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কাড়েন করোনা মহামারির সময়। ওই সময় ভারতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা চলছিল। ভোলে বাবা সেই নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে সাধুসঙ্গ আয়োজন করেছিলেন।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনের তথ্য, ভোলে বাবার আসল নাম সুরাজ পাল। তাঁর বাড়ি উত্তর প্রদেশের ইটাহ জেলার বাহাদুর নাগারি গ্রামে। বাবা নান্নে লাল, মা কাতোরি দেবী। তাঁরা দুই ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। গ্রামে পড়াশোনা করেন তিনি।

উত্তর প্রদেশ পুলিশে হেড কনস্টেবল পদে ছিলেন সুরাজ। কাজ করতেন স্থানীয় গোয়েন্দা ইউনিটে। তবে সুরাজের দাবি, তিনি কলেজ পেরোনোর পর থেকে আইবির হয়ে কাজ করতেন, পরে ধর্মকর্মে মন দেন। ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। বদলে ফেলেন নিজের নাম।

ভারতে ধর্মগুরুদের সাধারণত গেরুয়া রঙের পোশাকে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ভোলে বাবা। তিনি সাদা স্যুট আর টাই পরতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সময় তাঁকে কুর্তা-পায়জামা পরতেও দেখা গেছে।

ভোলে বাবার স্ত্রীর নাম প্রেম বাতি। সাধুসঙ্গে সচরাচর স্বামীর পাশেই দেখা যায় তাঁকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গতকালের আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন। আলীগড় শহরের বিভাগীয় কমিশনার চৈত্র ভি বলেন, অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ছিল প্রচণ্ড গরম। গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অনুষ্ঠান শেষে পানির জন্য একযোগে ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় কাদাপানিতে একজনের ওপর অন্যজন পড়ে আহত হন। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।

পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন তিনি।

যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে, সেটা খুঁজে বের করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন

পদদলিত হয়ে ১১৬ জনের মৃত্যু, ভোলে বাবাকে খুঁজছে পুলিশ

Update Time : ০১:৩৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় ধর্মীয় আয়োজনটি করেছিলেন ‘ভোলে বাবা’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। তাঁর অনুসারীরাই ওই ধর্মীয় আয়োজনে গিয়েছিলেন। পরে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১১৬ জন, আহত হন আরও অনেকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

রতি ভানপুর গ্রামে এ ঘটনার পর থেকে ভোলে বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে খুঁজছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। ভোলে বাবার নাম নারায়ণ শাকর হরি। তিনি শাকর বিশ্ব হরি বা ভোলে বাবা নামে পরিচিত।

ভোলে বাবা দাবি করেন, তিনি একসময় ভারতের গোয়েন্দা বিভাগে (আইবি) চাকরি করতেন। ২৬ বছর আগে ধর্ম পালনের জন্য তিনি সেই সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন বলে দাবি তাঁর।

বর্তমানে ভোলে বাবার লাখো অনুসারী রয়েছে। ভারতজুড়ে তাঁর অনুসারী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন। তবে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান ও দিল্লিতে ভোলে বাবার অনুসারী বেশি।

ভোলে বাবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এড়িয়ে চলেন। তিনি গ্রামে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এসব এলাকায়ই তাঁর অনুসারী বেশি। প্রায় লাখো মানুষ তাঁর ভক্ত। গতকালের ওই আয়োজনে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

প্রতি মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের আলীগড়ে ভোলে বাবার উদ্যোগে ধর্মীয় সাধুসঙ্গ আয়োজন করা হয়। হাজারো মানুষ তাতে অংশ নেন। এসব আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকেরা থাকেন। তাঁরা ভোলে বাবার অনুসারীদের খাবার ও পানি বিতরণ তদারক করেন। শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করেন।

ভোলে বাবা সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কাড়েন করোনা মহামারির সময়। ওই সময় ভারতে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা চলছিল। ভোলে বাবা সেই নিষেধাজ্ঞা অম্যান্য করে সাধুসঙ্গ আয়োজন করেছিলেন।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনের তথ্য, ভোলে বাবার আসল নাম সুরাজ পাল। তাঁর বাড়ি উত্তর প্রদেশের ইটাহ জেলার বাহাদুর নাগারি গ্রামে। বাবা নান্নে লাল, মা কাতোরি দেবী। তাঁরা দুই ভাই। এক ভাই মারা গেছেন। গ্রামে পড়াশোনা করেন তিনি।

উত্তর প্রদেশ পুলিশে হেড কনস্টেবল পদে ছিলেন সুরাজ। কাজ করতেন স্থানীয় গোয়েন্দা ইউনিটে। তবে সুরাজের দাবি, তিনি কলেজ পেরোনোর পর থেকে আইবির হয়ে কাজ করতেন, পরে ধর্মকর্মে মন দেন। ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। বদলে ফেলেন নিজের নাম।

ভারতে ধর্মগুরুদের সাধারণত গেরুয়া রঙের পোশাকে দেখা যায়। ব্যতিক্রম ভোলে বাবা। তিনি সাদা স্যুট আর টাই পরতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সময় তাঁকে কুর্তা-পায়জামা পরতেও দেখা গেছে।

ভোলে বাবার স্ত্রীর নাম প্রেম বাতি। সাধুসঙ্গে সচরাচর স্বামীর পাশেই দেখা যায় তাঁকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গতকালের আয়োজনে অংশ নিয়েছিলেন। আলীগড় শহরের বিভাগীয় কমিশনার চৈত্র ভি বলেন, অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ছিল প্রচণ্ড গরম। গরমে অতিষ্ঠ মানুষজন অনুষ্ঠান শেষে পানির জন্য একযোগে ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় কাদাপানিতে একজনের ওপর অন্যজন পড়ে আহত হন। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় অনেকের।

পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আজ বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন তিনি।

যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘এটা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে, সেটা খুঁজে বের করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হবে।’