চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জাহাঙ্গীর বেপারী, আরিফ হোসেন ও বাবুল ভূঁইয়া নামে যুবদলের তিন কর্মী হত্যার ঘটনায় ১১ বছর পর ৩৩৫ জনকে নামীয় এবং ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
রোববার চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন হত্যার শিকার যুবদল কর্মী আরিফ হোসেনের ভাই মো. দেলোয়ার হোসেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন মামলার আইনজীবী মো. আবুল খায়ের স্বপন।
মামলায় আসামি করা হয় ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আবু ছায়েদ সরকার, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম কাজল বিএসসি, পৌর সভার সাবেক মেয়র মাহফুজুল হক, মো. মাসুদ হোসেন ভুঞা (কিলার মাসুদ), উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. অহিদুর রহমান অহিদ, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম রিপন, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি আকবর হোসেন মনিরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে ডাকা মিছিল সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী জাহাঙ্গীর বেপারী, আরিফ হোসেন ও বাবুল ভূঁইয়া। এই ঘটনায় ওইদিন অনেকেই আহত হন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিকাল ৪টায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ মিছিলে আসামিদের নির্দেশে তৎকালীন থানা পুলিশের সহযোগিতায় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। হামলায় তিনজন নিহত, অনেক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত এবং কেউ কেউ পঙ্গুত্ববরণ করেন।
নিহত জাহাঙ্গীর বেপারী উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর তিনকড়ি বেপারী বাড়ির আ. মতিন বেপারী ও তফুরেরনেছা দম্পতির ছোট ছেলে। রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল আলিম ও হাজেরা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও সফুরা বেগমের ছেলে বাবুল ভূঁইয়া।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ওই সময়ে মামলা করা হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাল্টা মামলার কারণে তাদের মামলাগুলোর অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১১ বছরের অধিক সময় মুখ বুঁজে সব সহ্য করলেও গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে বিচারের আশা করছেন ওই তিন পরিবারের স্বজনরা। তারই ধারাবাহিকতায় নিহত আরিফ হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন ৭৩৫ জনের নামে মামলা করেন।
মামলার বাদী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা দীর্ঘদিন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত। আশা করছি আমি আমার ভাইসহ নিহত তিনজনের হত্যার বিচার পাবো।
মামলার আইনজীবী মো. আবুল খায়ের স্বপন বলেন, মামলাটি আদালত আমলে নেয়ার পর তৎকালীন সময়ে ফরিদগঞ্জ থানায় যে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে ওই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দেন। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরে মামলাটির পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।