শৈশবজুড়ে দুষ্টুমি, দৌড়ঝাঁপ আর ফুটবলের নেশায় মত্ত এক কিশোর, যাকে দেখে অনেকেই ভাবতেন, পড়ালেখায় মন না দিলে জীবনে বড় হওয়া কঠিন। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মবিশ্বাসই বদলে দেয় তার দিক। আজ তিনি চাঁদপুরের খেলাধুলা অঙ্গনের পরিচিত উদ্যোক্তা মো. মোক্তার আহমেদ মিয়াজী, ‘এশিয়ান স্পোর্টস’ এর প্রতিষ্ঠাতা।
শৈশব থেকেই মাঠে–ঘাটে ফুটবল খেলাই তার ছিলো দিনের প্রধান আনন্দ। পড়ার টেবিলে মন বসত না, আর মায়ের বকাঝকা ছিলো নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু তার এই দুর্বলতা দেখে হতাশ হননি খালুজি মরহুম রুহুল আমিন খান ও মামা আরশ্বাদ জমাদার। তারা বুঝেছিলেন ছেলেটির ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে খেলাধুলার জগতে।
তাদের পরামর্শ ও উৎসাহে ১৯৯৩ সালে মোক্তার চলে যান ঢাকায়। উদ্দেশ্য খেলায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের কাজ শেখা। ঢাকায় খালুর দোকানে কাজ করতে গিয়েই শুরু হয় তার জীবনের আসল শিক্ষা। ওস্তাদ ছিদ্দিকুর রহমান ও লুৎফুর রহমান লতিফের কাছ থেকে পান পেশাদার প্রশিক্ষণ। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও শেখার আগ্রহ তাকে গড়ে তোলে একজন দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে।
২০০১ সালে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। পাঁচ বছর ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনার পর ২০০৬ সালে ফিরে আসেন চাঁদপুরে। প্রতিষ্ঠা করেন নিজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান “এশিয়ান স্পোর্টস”। যা আজ চাঁদপুরের খেলাধুলা অঙ্গনের অন্যতম পরিচিত নাম।
সম্প্রতি গনি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের মুন্সেফপাড়ার রেলওয়ে ফিডার রোডের দোকানে কাজের ফাঁকে প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে উঠে আসে তার সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প।
প্রায় ২৫ বছর ধরে খেলাধুলার সরঞ্জাম সরবরাহ, পরামর্শ ও তরুণ খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে এক বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছেন মোক্তার। চাঁদপুরের খেলোয়াড়, কোচ, স্কুল–কলেজের দল, সবার কাছে সরঞ্জামের প্রথম ভরসা এখন ‘এশিয়ান স্পোর্টস’।
সরঞ্জাম কিনতে আসা তরুণ ফুটবলার বাবু বলেন, ভালো মানের বুট, জার্সি বা বল কিনতে হলে প্রথমেই এখানে আসি। মোক্তার ভাই কোন জিনিসটা আমার জন্য ভালো হবে, সেটা বুঝিয়ে দেন। তাই বহুদিন ধরেই এখানে ভরসা রাখি।
আরেক খেলোয়াড় রাকিব জানান, চাঁদপুরে মানসম্মত ক্রীড়া সরঞ্জামের দোকান খুব কম। দাম ন্যায্য, জিনিস ভালো, আর আচরণও খুব আন্তরিক। তাই টিমের অন্য খেলোয়াড়দেরও এখানে নিয়ে আসি।
দোকানে কর্মরত মো. রায়হান বলেন, গ্রাহকের সন্তুষ্টি আমাদের প্রথম লক্ষ্য। প্রতিদিনই অনেক তরুণ আসে স্বপ্ন নিয়ে। তাদের প্রয়োজন বুঝে পরামর্শ দেওয়া, এটাই আমাদের কাজ। মোক্তার ভাই সবসময় বলেন, গ্রাহক মানেই সম্মান।
আরেক কর্মী মো. রাছেল জানান, ব্যাট, গ্লাভস, জার্সি, সবকিছু ভালো মানে এক জায়গায় পাওয়া যায় বলে গ্রাহকরা এখানে আস্থার সঙ্গে আসে।
নিজের পথচলা প্রসঙ্গে স্বপ্নের কারিগর মোক্তার আহমেদ বলেন, ছোটবেলার খেলাধুলার প্রেমই আমাকে আজকের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। পরিবারের সহযোগিতা, আল্লাহর রহমত আর গ্রাহকদের ভালোবাসাই আমার শক্তি। চাঁদপুরের তরুণরা যেন খেলাধুলায় আরও এগিয়ে যায়, এটাই আমার চাওয়া। তাদের স্বপ্ন পূরণে এশিয়ান স্পোর্টস সবসময় পাশে থাকবে।
চার ভাই-বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ তিনি। স্ত্রী ও চার কন্যাকে নিয়ে সুখী পরিবার গড়ে তুলেছেন। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, বাকি দুজনের পড়াশোনা চলছে। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি সফল পিতা হিসেবেও সমান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
শৈশবের দুষ্টু ছেলেটি আজ চাঁদপুরের খেলাধুলা জগতের এক আস্থার নাম। শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি এক স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা দেন, পথ দেখান এবং তাদের সাফল্যের অংশ হয়ে থাকেন। তার গল্প প্রমাণ করে, দৌড়ঝাঁপের সেই স্বপ্নপথই একদিন পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের মাঠে।
শাহরিয়ার পলাশ: 






















