ভোরের কুয়াশার ভেদ করে সূর্যের ডানায় নেমে এসেছে নতুন একটি দিন। আজ ২০২৩ সালের প্রথম সূর্যোদয়। এতে আছে অন্ধকার কেটে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। আছে সাগর সেচে মানিক তুলে আনার অমিত সম্ভাবনার আশ্বাস। একরাশ নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় বুক বেঁধে বিশ্ববাসী জানিয়েছে অভিবাদন-‘সুস্বাগতম ২০২৩।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সময়কালে এক নববর্ষে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’
রোববার সকালে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের সূর্যোদয় হলেও শনিবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। নতুন বছর মানেই নতুন প্রত্যাশা। পেছনে ফেলে আসা ২০২২ সালের না পাওয়া, ভুল, হতাশা, দুঃখ, গ্লানিকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন উদ্যমে সাহস নিয়ে পথচলা।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার যে ধারাবাহিকতা সূচিত হয়েছে ২০২৩ সালে তাতে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিক সব ক্ষেত্রে দেশ আরও এগিয়ে যাবে-এমন প্রত্যাশা সবার। গত বছর যে আশা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল তার অনেকখানি হয়তো পূরণ হয়নি। কিন্তু তাতে কি, নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। আজকের দিনে দেশবাসীর এ প্রত্যয়।
নতুন খ্রিষ্টীয় বছরের আগমন উপলক্ষ্যে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।
২০২৩ বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের রাজনীতি সবসময় নির্বাচনমুখী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের শুরুতেই। তার ২০২৩ সাল পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে নির্বাচনকেন্দ্রিক মাঠ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যেমন তৎপর ছিল ঠিক একইভাবে বিএনপিও মাঠে তাদের সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। এ বছরে সেদিক থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে আরও ব্যস্ত থাকবে। সাধারণ মানুষ এ বছরেও প্রত্যাশা করবে, নির্বাচনমুখী নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যেও দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে।
সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত, লড়াই, সহিংসতা চায় না দেশের মানুষ। সবার প্রত্যাশা সমুন্নত থাকুক মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা। নারীর প্রতি আরও মানবিক হোক সমাজ।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২০২২ সালে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেকখানি। এই উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সমৃদ্ধির সোপান আরও উঁচুতে উঠবে, এমনটাই চায় সবাই।
শিল্পায়নের জন্য দেশে আরও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো জরুরি। শিল্প ও উৎপাদন খাতের বিকাশ মানেই নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। দেশ ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নতুন ধারায় এগিয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এ বিপ্লবে জয়ী হতে চাই আরও দক্ষ মানবসম্পদ। মেধাবী নতুন প্রজন্মকে এ বিপ্লবে শামিল করতে দরকার তথ্যপ্রযুক্তির আরও আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ। সেই নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে সরকার এমন প্রত্যাশা সবার। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার প্রত্যাশায় আজকের দিনে সবার একটাই প্রার্থনা ‘শুভ হোক ২০২৩।’