অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
এবার মন্ত্রিসভায় প্রবীণদের আধিক্য বেশি। মন্ত্রীদের গড় বয়স প্রায় ৬৬ বছর। হলফনামায় দেওয়া তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে মন্ত্রীদের বয়সের গড় হিসাব বের করা হয়েছে। বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যদের গড় বয়স ছিল ৬০ বছর। অর্থাৎ এবারের মন্ত্রিসভা গতবারের চেয়ে আরও প্রবীণ।
মন্ত্রিসভার সবচেয়ে তরুণ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তাঁর বয়স ৪১ বছর। অন্যদিকে মহিবুলের চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য। তাঁর বয়স প্রায় ৮২ বছর। এবারের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসান মাহমুদ আলীও অন্যতম প্রবীণ সদস্য। তাঁর বয়স ৮১ বছরের কাছাকাছি। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় ৮০ বছরের বেশি বয়সী মন্ত্রী আবদুস সালাম ও আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর মধ্যে আবদুস সালাম এবারই প্রথমবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বিদায়ী মন্ত্রিসভায় জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি শপথ নেয় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা। বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এবার মন্ত্রিসভায় ২৬ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
মন্ত্রিসভার সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত মহিবুল হাসান আওয়ামী লীগের বিদায়ী সরকারে শিক্ষা উপমন্ত্রী ছিলেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সী সদস্য ১৫ জন। মন্ত্রিসভার সত্তরোর্ধ্ব সদস্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৭), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (৭৭), সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (৭৪), শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৩), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৩), বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান (৭২), খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার (৭৩), ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (৭৯), বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক (৭০), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান (৭০), কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ (৭৬), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান (৭৭), স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন (৭৫), রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম (৭০) এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (৭৩)।
মন্ত্রিসভায় ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী সদস্য ১১ জন। তাঁরা হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (৬৮), স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম (৬৮), পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ (৬০), ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান (৬৮), গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (৬৯), যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান (৬২), পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী (৬২), মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি (৬২), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (৬০), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান (৬৭) এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী (৬৬)।
মন্ত্রিসভায় ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সদস্য পাঁচজন। তাঁরা হলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি (৫৮), জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (৫১), বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (৫৯), নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (৫৪) এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (৫৪)।
৪০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সদস্য চারজন। তাঁরা হলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ( ৪১), ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ (৪৩), তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত (৪৬) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী (৪৮)।
এবারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চারজন নারী সদস্য আছেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্যরা হলেন দীপু মনি, সিমিন হোসেন রিমি ও রুমানা আলী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সামন্ত লাল সেন ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশ করা জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার। পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ বেশি। এখন দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর।
আর বিবিএসের জনশুমারি ও গৃহগণনার গত এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগ এখন তরুণ। যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। আর ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের গড় বয়স প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে এখনো তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি। তাই মন্ত্রিসভায়ও তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেত। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। সেখানে যুব নেতৃত্ব আরও আসতে পারত।
অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, প্রতিনিধিত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বয়সকাঠামোর বণ্টন দেখা যায় না। এটা শুধু মন্ত্রিসভাতেই না, রাজনৈতিক দলগুলোতেও একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পদে যুব প্রতিনিধি এখনো বেশ কম। প্রবীণ ব্যক্তিরা নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ হলেও বর্তমান এই সময়ে যুবদের প্রয়োজন ও চাহিদা বোঝার ক্ষেত্রে তাঁদের ঘাটতি থাকতে পারে।