ঢাকা 1:04 pm, Saturday, 28 June 2025

দুর্বৃত্তদের হামলা ও গুলিতে তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:07:21 pm, Monday, 10 June 2024
  • 7 Time View

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে দুর্বৃত্তদের হামলা ও গুলিতে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর সোয়া চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এ হামলা চালিয়েছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই আশ্রয়শিবিরের জাফর আহমদের ছেলে মো. ইলিয়াছ (৩১), মৃত আবদুর রকিমের ছেলে মো. ইছহাক (৫৪) ও ক্যাম্প-৩ আশ্রয়শিবিরের মো. ইসমাইলের ছেলে ফিরোজ খান (১৮)। সবাই মিয়ানমারের আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্য। আধিপত্য বিস্তার ও আরসার অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য সরবরাহের অভিযোগে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ও রোহিঙ্গা মাঝিরা (নেতা)।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে ২০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন।

একই ঘটনায় আরসার গুলিতে আরও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের একটি এনজিও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের মো. হাছানের ছেলে আবদুল হক (৩২), নজির আহমদের ছেলে আবদুস শুক্কুর (৫৫) ও ওমর মিয়ার ছেলে আবদুল মোনাফ (৬০)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়শিবিরের একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, কিছুদিন ধরে আরসা ও আরএসও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যে ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। দিনের বেলায় আরসার সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবির ছেড়ে পশ্চিম পাশের পাহাড়ি আস্তানায় অবস্থায় নেয়। সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ঢুকে খুনখারাবিতে জড়িত হয়। গতকাল রোববার গভীর রাতে র‌্যাব একই আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ আরসার শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আরএসওকে অভিযুক্ত করে আরসা। প্রতিশোধ নিতে আরসা সন্ত্রাসীরা ভোররাতে হামলা ও গুলি চালিয়ে আরএসওর তিন সদস্যকে হত্যা করে। এখন আরএসওর সন্ত্রাসীরাও প্রতিশোধ নিতে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগে যেতে পারে। তাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের (আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল বলেন, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে আরসার সন্ত্রাসীরা হামলা ও গুলি চালিয়ে আরএসওর তিন সদস্যকে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে  আরসার ৪০-৪৫ জন সদস্য পাহাড় থেকে নেমে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করে। এরপর কয়েকটি স্থানে আরএসও সদস্যদের খুঁজতে থাকে। ভোর সোয়া চারটার দিকে শিবিরের একটি রাস্তার মোড় থেকে আরএসও সদস্য মো.ইলিয়াছকে তুলে নিয়ে খোলা জায়গা নিয়ে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। তাতে হাত, পা, পেট ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলেই ইলিয়াছের মৃত্যু হয়। ইলিয়াছকে রক্ষায় সাধারণ রোহিঙ্গারা লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে এলে তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে আরসা। গুলিতে সাতজন রোহিঙ্গা আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুজন রোহিঙ্গা। তাঁরা হলেন মো. ইছহাক ও  ফিরোজ খান। এই দুজনও আরএসও সদস্য।

পুলিশ জানায়, গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে আরসা সন্ত্রাসীরা তাঁদের (এপিবিএন) লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে এপিবিএনও পাল্টা গুলি ছুড়ে অন্তত ১৬ রাউন্ড। একপর্যায়ে আরসা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলি ও হামলায় নিহত তিন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এপিবিএন ও রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, আশ্রয়শিবিরে আরসা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিয়ে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে আরসা সন্ত্রাসীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে ইসকনের আয়োজনে রথ যাত্রায় হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের অংশগ্রহণ

দুর্বৃত্তদের হামলা ও গুলিতে তিন রোহিঙ্গার মৃত্যু

Update Time : 08:07:21 pm, Monday, 10 June 2024

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে দুর্বৃত্তদের হামলা ও গুলিতে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর সোয়া চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এ হামলা চালিয়েছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই আশ্রয়শিবিরের জাফর আহমদের ছেলে মো. ইলিয়াছ (৩১), মৃত আবদুর রকিমের ছেলে মো. ইছহাক (৫৪) ও ক্যাম্প-৩ আশ্রয়শিবিরের মো. ইসমাইলের ছেলে ফিরোজ খান (১৮)। সবাই মিয়ানমারের আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্য। আধিপত্য বিস্তার ও আরসার অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য সরবরাহের অভিযোগে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ও রোহিঙ্গা মাঝিরা (নেতা)।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে রয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে ২০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন।

একই ঘটনায় আরসার গুলিতে আরও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের একটি এনজিও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের মো. হাছানের ছেলে আবদুল হক (৩২), নজির আহমদের ছেলে আবদুস শুক্কুর (৫৫) ও ওমর মিয়ার ছেলে আবদুল মোনাফ (৬০)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়শিবিরের একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, কিছুদিন ধরে আরসা ও আরএসও মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে মাঝেমধ্যে ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। দিনের বেলায় আরসার সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবির ছেড়ে পশ্চিম পাশের পাহাড়ি আস্তানায় অবস্থায় নেয়। সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ঢুকে খুনখারাবিতে জড়িত হয়। গতকাল রোববার গভীর রাতে র‌্যাব একই আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ আরসার শীর্ষ কমান্ডার মৌলভি আকিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। র‌্যাবকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আরএসওকে অভিযুক্ত করে আরসা। প্রতিশোধ নিতে আরসা সন্ত্রাসীরা ভোররাতে হামলা ও গুলি চালিয়ে আরএসওর তিন সদস্যকে হত্যা করে। এখন আরএসওর সন্ত্রাসীরাও প্রতিশোধ নিতে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করছে। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগে যেতে পারে। তাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের (আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল বলেন, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে আরসার সন্ত্রাসীরা হামলা ও গুলি চালিয়ে আরএসওর তিন সদস্যকে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আজ ভোর চারটার দিকে  আরসার ৪০-৪৫ জন সদস্য পাহাড় থেকে নেমে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করে। এরপর কয়েকটি স্থানে আরএসও সদস্যদের খুঁজতে থাকে। ভোর সোয়া চারটার দিকে শিবিরের একটি রাস্তার মোড় থেকে আরএসও সদস্য মো.ইলিয়াছকে তুলে নিয়ে খোলা জায়গা নিয়ে প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। তাতে হাত, পা, পেট ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলেই ইলিয়াছের মৃত্যু হয়। ইলিয়াছকে রক্ষায় সাধারণ রোহিঙ্গারা লাঠিসোঁটা নিয়ে এগিয়ে এলে তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে আরসা। গুলিতে সাতজন রোহিঙ্গা আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও দুজন রোহিঙ্গা। তাঁরা হলেন মো. ইছহাক ও  ফিরোজ খান। এই দুজনও আরএসও সদস্য।

পুলিশ জানায়, গুলিবর্ষণের খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে আরসা সন্ত্রাসীরা তাঁদের (এপিবিএন) লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে এপিবিএনও পাল্টা গুলি ছুড়ে অন্তত ১৬ রাউন্ড। একপর্যায়ে আরসা সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলি ও হামলায় নিহত তিন রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এপিবিএন ও রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, আশ্রয়শিবিরে আরসা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। গুলি করে হত্যা, রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিয়ে নাশকতার চেষ্টা চালাচ্ছে আরসা সন্ত্রাসীরা।