ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে ভারতীয় অবৈধ চিনি আমদানি, মোড়ক পরিবর্তন করে বাজারজাত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
  • ৭৮ Time View

চাঁদপুরে ভারতীয় অবৈধ চিনির দাপটে বৈধ চিনি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এতে করে শহরও শহরতলীর বাজারগুলো অবৈধ চিনিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে। যার ফলে সরকার প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চিনি পাচারকারি চক্র সক্রিয়। এর মধ্যে প্রতিদিন শহরের ৫ নম্বর ঘাটে ভারতীয় চিনি পাচারকারি চক্রের নেতৃত্ব দেন সাদ্দাম ছৈয়াল। তারা রাতের আধাঁরে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আসা এসব অবৈধ ভারতীয় সীল লাগানো (মোড়কের) চিনি তাদের গুদামে নামাচ্ছেন। এসব চিনির বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় কোম্পানি ফ্রেস চিনির খালি বস্তায় ভর্তি করে হাত বদল করেন। আর তা প্রকাশ্যে দিনের আলোতে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব কার্যক্রমে প্রশাসনের কোন ধরণের হস্তক্ষেপ কিংবা নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ছে না।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৩জুন) দিনগত রাত অনুমান ২টা ১৭ মিনিটের সময় শহরের ৫নম্বর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, একটি ৫ টন ওজন বহনকারী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে আসা শত-শত বস্তা অবৈধ চিনি ভারতীয় বস্তায় সীল ও মোড়ক লাগানো চিনি শ্রমিকদের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে নামিয়ে শহরের ৫নম্বর ঘাটের মেসার্স রহিম স্টোর নামীয় প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।

সেখানে ট্রাক থেকে এ চিনি নামার সময় বস্তা গননার দায়িত্ব পালন করছে হাবিব মিজি নামীয় এক যুবক। তার নাম জানতে চাইলে সে বলে নাম বলতে আমি বাধ্য নয়। সে জানায়, এ ভারতীয় চিনি পালবাজারের বাসু ছৈয়ালের ছেলে সাদ্দামের। সেখানেই মেসার্স রহিম স্টোরের পিছনে গোডাউনের ভিতরে ভারতীয় চিনির বস্তা থেকে চিনি ঢেলে পরিবর্তন করে দেশীয় মোড়কের ফ্রেস কোম্পানির সীল মারা বস্তায় অটো মেশিনের মাধ্যমে নতুন করে সেলাই করে দেয়া হচ্ছে। সেখানে বস্তা পরিবর্তনের দায়িত্বে রয়েছে পাচারকারী সাদ্দামের আপন দুই ভাই। এ ভারতীয় চিনি সিলেট ও কুিমল্লা থেকে চাঁদপুরে আসার পর বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে একদল কিশোর গ্যাং।

পুরান বাজার ও পালবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, পাইকারী ব্যবসায়ীরা দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে চিনি ক্রয় করে বিক্রি করেন। কিন্তু ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এসব চিনি বাজারে প্রবেশ করে এবং কম মূল্যে বিক্রি করে আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে-দেশীয় চিনি প্রতিকেজি ১৪৫টাকা। ভারতীয় এলসি প্রতিকেজি ১৪০টাকা এবং চোরাই পথে প্রবেশ করা প্রতিকেজি চিনি ১২৩টাকা। ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা এসব চিনির প্রতি বস্তার ওজন ৫০ কেজি।

ভারতীয় চিনি বহনকারী ট্রাক-চট্র মেট্রো-ট ১২-১১৭৮ এর  চালক নাজমুল হোসেনকে জিজ্ঞাবাসাদ করা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি কুমিল্লা সাহেবাবাদ হ্মামন পাড়া। সে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এ চিনি নিয়ে রাত ১টায় চাঁদপুরে নিয়ে আসে। এ চিনির মালিক সাদ্দাম ও শহরের স্ট্যান্ড রোডের ব্যববসায়ী কিরণ।

একই এলাকার ট্রাকের অপর চালক হৃদয় জানান, কুমিল্লা থেকে যে ঠিকানা দিয়েছে, সে অনুযায়ী চিনি নিয়ে চাঁদপুর এসে গুদামে নামিয়ে রাতেই চলে যাবে। জানতে পেরেছি চিনির এ চালান সাদ্দামসহ আরও কয়েকজনের।

চিনি বহনকারী কাভার্ডভ্যান নম্বর ঢাকা মেট্রো ট ২২৩২৯২৭ চালক মিজানুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় চাঁদপুর আসি। আমার কাভার্ডভ্যানে ১৫৫ বস্তা ভারতীয় চিনি কুমিল্লা ক্যান্টেনম্যান এলাকা থেকে বহনকরে চাঁদপুরে নিয়ে আসি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মুহসীন আলম বলেন, এরপূর্বেও সংবাদ পেয়ে এধরনের চিনিসহ একটি ট্রাক জব্দ করে থানায় আনা হয়। এরপর চিনির আমদানিকারী সাদ্দাম ছৈয়াল তার কাস্টমস্ এর কাগজপত্র দেখান। বিষয়টি পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা এবং থানায় জিডি করে জব্দ চিনি ছেড়ে দেয়া হয়। এখনও ভারতীয় চিনি আসছে। কিন্তু বাজারে আপাতত চিনির কোন সংকট নেই। তথ্য প্রমাণ থাকলে সংবাদ করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় ফাউন্ডেশন ফর ডাঃ আব্দুল হাই শিক্ষাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

চাঁদপুরে ভারতীয় অবৈধ চিনি আমদানি, মোড়ক পরিবর্তন করে বাজারজাত

Update Time : ০৩:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

চাঁদপুরে ভারতীয় অবৈধ চিনির দাপটে বৈধ চিনি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এতে করে শহরও শহরতলীর বাজারগুলো অবৈধ চিনিতে সয়লাব হয়ে পড়েছে। যার ফলে সরকার প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চিনি পাচারকারি চক্র সক্রিয়। এর মধ্যে প্রতিদিন শহরের ৫ নম্বর ঘাটে ভারতীয় চিনি পাচারকারি চক্রের নেতৃত্ব দেন সাদ্দাম ছৈয়াল। তারা রাতের আধাঁরে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে আসা এসব অবৈধ ভারতীয় সীল লাগানো (মোড়কের) চিনি তাদের গুদামে নামাচ্ছেন। এসব চিনির বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় কোম্পানি ফ্রেস চিনির খালি বস্তায় ভর্তি করে হাত বদল করেন। আর তা প্রকাশ্যে দিনের আলোতে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাচার হচ্ছে। কিন্তু এসব কার্যক্রমে প্রশাসনের কোন ধরণের হস্তক্ষেপ কিংবা নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ছে না।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৩জুন) দিনগত রাত অনুমান ২টা ১৭ মিনিটের সময় শহরের ৫নম্বর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, একটি ৫ টন ওজন বহনকারী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে আসা শত-শত বস্তা অবৈধ চিনি ভারতীয় বস্তায় সীল ও মোড়ক লাগানো চিনি শ্রমিকদের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে নামিয়ে শহরের ৫নম্বর ঘাটের মেসার্স রহিম স্টোর নামীয় প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।

সেখানে ট্রাক থেকে এ চিনি নামার সময় বস্তা গননার দায়িত্ব পালন করছে হাবিব মিজি নামীয় এক যুবক। তার নাম জানতে চাইলে সে বলে নাম বলতে আমি বাধ্য নয়। সে জানায়, এ ভারতীয় চিনি পালবাজারের বাসু ছৈয়ালের ছেলে সাদ্দামের। সেখানেই মেসার্স রহিম স্টোরের পিছনে গোডাউনের ভিতরে ভারতীয় চিনির বস্তা থেকে চিনি ঢেলে পরিবর্তন করে দেশীয় মোড়কের ফ্রেস কোম্পানির সীল মারা বস্তায় অটো মেশিনের মাধ্যমে নতুন করে সেলাই করে দেয়া হচ্ছে। সেখানে বস্তা পরিবর্তনের দায়িত্বে রয়েছে পাচারকারী সাদ্দামের আপন দুই ভাই। এ ভারতীয় চিনি সিলেট ও কুিমল্লা থেকে চাঁদপুরে আসার পর বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় ব্যবহার করা হচ্ছে একদল কিশোর গ্যাং।

পুরান বাজার ও পালবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, পাইকারী ব্যবসায়ীরা দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে চিনি ক্রয় করে বিক্রি করেন। কিন্তু ভারত থেকে চোরাই পথে আসা এসব চিনি বাজারে প্রবেশ করে এবং কম মূল্যে বিক্রি করে আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে-দেশীয় চিনি প্রতিকেজি ১৪৫টাকা। ভারতীয় এলসি প্রতিকেজি ১৪০টাকা এবং চোরাই পথে প্রবেশ করা প্রতিকেজি চিনি ১২৩টাকা। ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা এসব চিনির প্রতি বস্তার ওজন ৫০ কেজি।

ভারতীয় চিনি বহনকারী ট্রাক-চট্র মেট্রো-ট ১২-১১৭৮ এর  চালক নাজমুল হোসেনকে জিজ্ঞাবাসাদ করা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি কুমিল্লা সাহেবাবাদ হ্মামন পাড়া। সে কুমিল্লা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এ চিনি নিয়ে রাত ১টায় চাঁদপুরে নিয়ে আসে। এ চিনির মালিক সাদ্দাম ও শহরের স্ট্যান্ড রোডের ব্যববসায়ী কিরণ।

একই এলাকার ট্রাকের অপর চালক হৃদয় জানান, কুমিল্লা থেকে যে ঠিকানা দিয়েছে, সে অনুযায়ী চিনি নিয়ে চাঁদপুর এসে গুদামে নামিয়ে রাতেই চলে যাবে। জানতে পেরেছি চিনির এ চালান সাদ্দামসহ আরও কয়েকজনের।

চিনি বহনকারী কাভার্ডভ্যান নম্বর ঢাকা মেট্রো ট ২২৩২৯২৭ চালক মিজানুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় চাঁদপুর আসি। আমার কাভার্ডভ্যানে ১৫৫ বস্তা ভারতীয় চিনি কুমিল্লা ক্যান্টেনম্যান এলাকা থেকে বহনকরে চাঁদপুরে নিয়ে আসি।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মুহসীন আলম বলেন, এরপূর্বেও সংবাদ পেয়ে এধরনের চিনিসহ একটি ট্রাক জব্দ করে থানায় আনা হয়। এরপর চিনির আমদানিকারী সাদ্দাম ছৈয়াল তার কাস্টমস্ এর কাগজপত্র দেখান। বিষয়টি পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা এবং থানায় জিডি করে জব্দ চিনি ছেড়ে দেয়া হয়। এখনও ভারতীয় চিনি আসছে। কিন্তু বাজারে আপাতত চিনির কোন সংকট নেই। তথ্য প্রমাণ থাকলে সংবাদ করা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।