সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী কমপ্লিট শার্টডাউন চলাকালে ঢাকাসহ সারাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে দূর্বৃত্তরা। কোটা সংস্কার চলা ছাত্র আন্দোলনে মিশে যায় দূর্বৃত্তরা। তাদের আন্দোলনকে ছিনতাই করে সারা দেশে শুরু হয় জ¦ালাও পোড়াও, ভাংচুর। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপরে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের টোরাগড় এলাকায় গাছের গুঁড়ি ও বালু ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিএনপি যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গেলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। সেখানে পুলিশ গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
শুক্রবার দুপরে এনায়েতপুর নামক এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও বালু ফেলে সড়ক অবরোধ করে দূর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস শীল, হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ থানা সার্কেল পঙ্কজ কুমার দে ও অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সাথে দূর্বৃত্তদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ শতাধিক টিয়ারসেল, সাউন্ডগ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই সময়ে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের সামনে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তায় আগুন জ¦ালিয়ে দেয়, বিএনপি যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়ের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে রাত প্রায় ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগের সভাপতি মনির হোসেন কাজীর একটি পিকআপ জ¦ালিয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। জ¦লন্ত পিকআপটি আগুন নেভাতে গিয়ে পিছু হটে ফায়ার সার্ভিস। পরে পুলিশ কয়েক দফা গুলিবর্ষণ করলে দূর্বৃত্তরা সরে গেলে, জ¦লন্ত পিকআপটির আগুন নেভাতে এগিয়ে যায় ফায়ার সার্ভিস।
এসব সংঘর্ষে হাজীগঞ্জে পুলিশ, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির শতাধীক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই দিন রাত ১০টার দিকে টোরাগড় মিল গেইটের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সাপ্তাহিক ত্রিনদী পত্রিকার সহ-বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্যাহ বুলবুলের উপর আক্রমণ করে তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে মূমূর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ছাড়াও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন সোহেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল আলম বেপারী, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শুকুর আলম, ২৩ ছাত্রলীগ নেতা তুষার কাজী, শাহাদাত কাজী, মেহেদি কাজী, আকাশ কাজী, জামিল কাজী, মিরাজ কাজী দূর্বৃত্তদের ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের বিসমিল্লাহ জেনারেল হাসপাতা ও শাহমিরান হাসপতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক মুঠোফোনে বলেন, পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর অকারণে গুলিবর্ষণ করেছে। এতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের প্রায় ৪০জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৭জনকে কুমিল্লায় রেফার করা হয়েছে।
এ দিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কের হাজীগঞ্জ রেলক্রসিং এলাকায় সিমেন্টবাহী একটি কাভার্ড ভ্যানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দূর্বৃত্তরা। এতে গাড়ীর হেলপার খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার আবদুল মজিদ গুরুতর আহত হয়। তার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংস জ¦লসে গেছে। গাড়ীটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাছান রাব্বির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফায়ারসার্ভিস নিয়ে গেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ-আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে ধাওয়ায় পাল্টা ধাওয়ায় হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ থানা সার্কেল পঙ্কজ কুমার দে, অফিসার ইনচার্জ আবদুর রশিদসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে।
এ সব ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ দূর্বৃত্তদের লক্ষ করে ৮৩ রাউন্ড টিয়ারসেল, ১৪ রাউন্ড সাউন্ডগ্রেনেট ও গ্যাস গ্রেনেড এবং ৭৮৮ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।
এ দিকে শনিবার বিকেলে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামলে রেকার এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রট তাপস শীলের নেতৃত্বে হাজীগঞ্জে সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের সম্মুখ থেকে কুমিল্লা-চাঁদপুর মহাসড়কের উপর থেকে আগুনে জ¦ালিয়ে দেয়া পিকআপটি সরিয়ে নিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুস্কৃতকারীদের ধরতে পুলিশের চিরুনি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।