চাঁদপুরে দুই দফায় ১০ হাজার টাকা নিয়ে কনে দেখাতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে মারধর ও পানিতে চুবিয়ে হাবিব উল্লাহ নামে এক ঘটককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বর মো. কামাল মীরার বিরুদ্ধে।
রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউপির গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুরের মধ্যে একজন পুরুষ মানুষের মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় মো. হাবিব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত করে মর্গে পাঠায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে ওই ঘটকের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে স্থানীয় লোকজন এসে জানায় মৃত ব্যক্তির নাম হাবিব উল্লাহ। তিনি পুটিয়ারপাড় এলাকার মনোয়ারা বেগম মনুর স্বামী। পরবর্তীতে তাদের পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ শনাক্ত করে এবং মৃতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার করে।
এরপর পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় থেকে আসামি কামাল মীরাকে গ্রেপ্তার করে। কামাল মীরা বরিশাল জেলার চরমোনাই রাজারচর গ্রামের মৃত খালেক মীরার ছেলে।
পুলিশ জানায়, আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় মৃত হাবিব উল্লাহর সঙ্গে তার ৩ থেকে ৪ মাস আগে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মদনপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় চায়ের দোকানে পরিচয় হয়। হাবিব উল্লাহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং আসামি কামাল মীরা ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি প্রেসের কারখানায় নৈশ প্রহরীর কাজ করত।
আসামি কামাল মীরার প্রথম স্ত্রী তার সংসার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় সে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য মনস্থির করে। তখন হাবিব উল্লাহর সঙ্গে পরিচয় হলে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর মতো মেয়ে তার কাছে আছে বলে প্রস্তাব করেন। সেই সুবাদে আনুমানিক এক মাসে আগে হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা নেয় এবং গত ১০ জুলাই হাবিব উল্লাহ মতলব উত্তর থানাধীন তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় আসামি কামাল মীরাকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে পুনরায় নগদ ৪ হাজার টাকা নেন এবং তারা উভয়ই বিকেলের দিকে মুরাদপুর এলাকা থেকে মতলব উত্তর থানা এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সন্ধ্যার সময় প্রথমে শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে আসে।
মাজারে অনেকটা সময় ঘোরাঘুরি করার পর আসামি কামাল মীরা হাবিব উল্লাহকে কখন মেয়ে দেখতে নিয়ে যাবে এই কথা বলে তাগিদ দিলে হাবিব উল্লাহ আসামিকে নিয়ে রাত ১১টার দিকে গোপালকান্দি বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসে।
সেখানে বসে তারা উভয়ে গল্প করার সময় হাবিব উল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল বন্ধ করে দেয়। উভয়ের মধ্যে পুকুরের পাকা সিঁড়ির উপর ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এই ধস্তাধস্তির ফলে তারা উভয়ই পাকা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে মুখমণ্ডলসহ শরীরে অনেক জায়গায় জখম প্রাপ্ত হয়।
আসামি কামাল মীরা হাবিব উল্লাহকে অতর্কিত তলপেটে ও অণ্ডকোষ বরাবর লাথি মারলে হাবিব উল্লাহ যখন একটু দুর্বল হয়ে যায় তখন কামাল মীরা হাবিব উল্লাহকে পানিতে চুবিয়ে ধরে। এই সময় হাবিব উল্লাহ আসামির ডান হাতের দুটি আঙ্গুলে কামড় দিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে হাবিব উল্লাহ নিস্তেজ হয়ে পড়লে আসামি সাঁতরে পুকুরের অপর প্রান্ত দিয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী নামক এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।
পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে হত্যার কোনো সূত্র পায়নি। পরে বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে মতলব উত্তর থানা পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’