ঢাকা 12:01 am, Tuesday, 22 July 2025

টিকটকে রূপালী-জামালের পরিচয়, পরিণতি করুন মৃত্যু

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ফাতেমা বেগম রূপালী (৩৬) এর সাথে টিকটকে ১১ মাস পূর্বে পরিচয় হয় পটুয়াখালীর মো. জামাল গাজী (৩৮) নামে যুবকের। সন্দেহ আর পারিবারিক কলেহে অবশেষে স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হন রূপালী। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামী জামাল গাজীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসপি মুহম্মদ আব্দুর রকিব প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

হত্যার শিকার ফাতেমা বেগম রূপালী মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ ঘোড়াধারি গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির কালু পাটওয়ারীর মেয়ে।

আসামী জামাল পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার পানপট্টি গেড়ামধন গ্রামের মো. মোস্তফা গাজীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, ১১ মাস পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক এ পরিচয় হয় তাদের। ফাতেমা জামালের কাছে নিজেকে কোর্টের পিপির সহকারী পরিচয় দেয়। প্রকৃত পক্ষে সে একজন গার্মেন্টস কর্মী। টিকটকে পরিচয়ের সূত্র ধরে রূপালী ও জামাল হোসেন কক্সবাজার এবং সিলেট এলাকায় মনোরঞ্জনের জন্য ভ্রমন করে।

গেল বছর আগস্ট মাসে ঢাকা সদরঘাট এলাকায় ৩ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। এর পূর্বে জামাল আরো দুটি বিয়ে করে, এটি তার তৃতীয় বিয়ে। রূপালী পূর্বে চারটি বিয়ে করেছে, এটি তার পঞ্চম বিয়ে। বিয়ের পর জামাল রূপালীর বাবার বাড়িতে একমাস ঘর সংসার করে। পারিবারিক কলোহ ও জামালের উদ্ধতপূর্ণ আচরণের কারণে রূপালী স্বামীকে সন্দেহ করে। জামাল দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে এবং তার নিকট টাকা পয়সা পাঠায়। এটিকে কেন্দ্র করে উভয়ই তুমুল ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে রূপালী উক্ত বিষয়ে স্থানীয় লোকজনদের নিকট বিচার দাবী করে। গত ১৮ জুন জামাল রূপালীর ঘরে থাকা ১১ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩৬ হাজার টাকা নিয়া নারায়নগঞ্জ চলে যায়।

গত ২৫ জুন রূপালী তার আত্মীয় স্বজন ও লোকজনের মাধ্যমে জামালকে তার বাড়িতে ধরে নিয়ে আসে এবং স্বর্ণালংকার ফেরৎ দেয়। কিন্তু নগদ টাকা ফেরৎ দেয়নি। টাকা ফেরৎ না দিলে জামালসহ তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে মামলা দিবে বলে হুমকি দেয়। রূপালী চার দিন জামালকে কোন খাবার দেয়নি এবং তাকে মারধর করে।

সর্বশেষ ৭ জুলাই রূপালী জামালের কাছে পুনরায় টাকা ফেরৎ চাইলে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং রূপালী জামালাকে কোরআন শরীফ দিয়ে আঘাত করে। ঘটনার দিন ১১ জুলাই রাত আনুমানিক ২টার দিকে জামাল রূপালীর কাছে ক্ষমা চায় এবং উভয়ে শুয়ে পড়ে। রূপালী ঘুমিয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টার দিকে জামাল ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে রূপালীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ও মাথায় দুটি কোপ মারলে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার দেহ টেনে  তাদের ব্যবহৃত টয়লেটের ট্যাংকির কাছে নিয়ে রাখে। ফাতেমার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সে তার মাথায়, মুখমন্ডলে, ঘাঁড়ে ও গলায় এলোপাতাড়ি একাধিক কোপ মারে। ফাতেমার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার মৃত দেহটি টয়লেটের ট্যাংকির ভিতরে ফেলে দেয়।

ওই দিন ভোরে কোন কিছু বুঝে উঠার আগে জামাল কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ওইদিনই রূপালীর ছেলে টিপু পাটওয়ারী জামালকে আসামী করে মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, মামলা হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ দল গঠন হয়। পুলিশ জামাল গাজীকে নারায়নগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ জেলা অনুসরণ করে একাধিক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে। সর্বশেষ কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার বৃত্তিপাড়া বাজার এলাকা হতে ২০ জুলাই দুপুরে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী তার স্ত্রী হত্যার কথা শিকার করেন। তাকে দুপুরে চাঁদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

টিকটকে রূপালী-জামালের পরিচয়, পরিণতি করুন মৃত্যু

Update Time : 11:53:16 pm, Monday, 21 July 2025

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ফাতেমা বেগম রূপালী (৩৬) এর সাথে টিকটকে ১১ মাস পূর্বে পরিচয় হয় পটুয়াখালীর মো. জামাল গাজী (৩৮) নামে যুবকের। সন্দেহ আর পারিবারিক কলেহে অবশেষে স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হন রূপালী। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামী জামাল গাজীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসপি মুহম্মদ আব্দুর রকিব প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

হত্যার শিকার ফাতেমা বেগম রূপালী মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ ঘোড়াধারি গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির কালু পাটওয়ারীর মেয়ে।

আসামী জামাল পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার পানপট্টি গেড়ামধন গ্রামের মো. মোস্তফা গাজীর ছেলে।

পুলিশ জানায়, ১১ মাস পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক এ পরিচয় হয় তাদের। ফাতেমা জামালের কাছে নিজেকে কোর্টের পিপির সহকারী পরিচয় দেয়। প্রকৃত পক্ষে সে একজন গার্মেন্টস কর্মী। টিকটকে পরিচয়ের সূত্র ধরে রূপালী ও জামাল হোসেন কক্সবাজার এবং সিলেট এলাকায় মনোরঞ্জনের জন্য ভ্রমন করে।

গেল বছর আগস্ট মাসে ঢাকা সদরঘাট এলাকায় ৩ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। এর পূর্বে জামাল আরো দুটি বিয়ে করে, এটি তার তৃতীয় বিয়ে। রূপালী পূর্বে চারটি বিয়ে করেছে, এটি তার পঞ্চম বিয়ে। বিয়ের পর জামাল রূপালীর বাবার বাড়িতে একমাস ঘর সংসার করে। পারিবারিক কলোহ ও জামালের উদ্ধতপূর্ণ আচরণের কারণে রূপালী স্বামীকে সন্দেহ করে। জামাল দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে এবং তার নিকট টাকা পয়সা পাঠায়। এটিকে কেন্দ্র করে উভয়ই তুমুল ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে রূপালী উক্ত বিষয়ে স্থানীয় লোকজনদের নিকট বিচার দাবী করে। গত ১৮ জুন জামাল রূপালীর ঘরে থাকা ১১ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার ও নগদ ৩৬ হাজার টাকা নিয়া নারায়নগঞ্জ চলে যায়।

গত ২৫ জুন রূপালী তার আত্মীয় স্বজন ও লোকজনের মাধ্যমে জামালকে তার বাড়িতে ধরে নিয়ে আসে এবং স্বর্ণালংকার ফেরৎ দেয়। কিন্তু নগদ টাকা ফেরৎ দেয়নি। টাকা ফেরৎ না দিলে জামালসহ তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে মামলা দিবে বলে হুমকি দেয়। রূপালী চার দিন জামালকে কোন খাবার দেয়নি এবং তাকে মারধর করে।

সর্বশেষ ৭ জুলাই রূপালী জামালের কাছে পুনরায় টাকা ফেরৎ চাইলে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং রূপালী জামালাকে কোরআন শরীফ দিয়ে আঘাত করে। ঘটনার দিন ১১ জুলাই রাত আনুমানিক ২টার দিকে জামাল রূপালীর কাছে ক্ষমা চায় এবং উভয়ে শুয়ে পড়ে। রূপালী ঘুমিয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৩টার দিকে জামাল ঘরে থাকা ধারালো দা দিয়ে রূপালীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গলায় ও মাথায় দুটি কোপ মারলে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তার দেহ টেনে  তাদের ব্যবহৃত টয়লেটের ট্যাংকির কাছে নিয়ে রাখে। ফাতেমার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সে তার মাথায়, মুখমন্ডলে, ঘাঁড়ে ও গলায় এলোপাতাড়ি একাধিক কোপ মারে। ফাতেমার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার মৃত দেহটি টয়লেটের ট্যাংকির ভিতরে ফেলে দেয়।

ওই দিন ভোরে কোন কিছু বুঝে উঠার আগে জামাল কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ওইদিনই রূপালীর ছেলে টিপু পাটওয়ারী জামালকে আসামী করে মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, মামলা হওয়ার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ দল গঠন হয়। পুলিশ জামাল গাজীকে নারায়নগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ জেলা অনুসরণ করে একাধিক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে। সর্বশেষ কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার বৃত্তিপাড়া বাজার এলাকা হতে ২০ জুলাই দুপুরে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী তার স্ত্রী হত্যার কথা শিকার করেন। তাকে দুপুরে চাঁদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।