ঢাকা ০৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত, সেবা নেয়ার আহ্বান

আড়াই’ শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে বিনামূল্যে এইচআইভি রক্ত পরীক্ষা। সদর হাসপাতালে স্থাপিত এইচটিসি এআরটি সেন্টার থেকে গত ৫ বছরে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন রোগীর শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী রোগী। এমন কঠিন রোগ সম্পর্কে সকলকে হাসপাতালের এই সেবা কেন্দ্র থেকে রক্ত পরীক্ষা করার আহবান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের।

জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সারা দেশের আরও ২২টি জেলার মতো চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও এই সেবা চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন গড়ে ৭–৮ জন সেবাপ্রার্থী এখানে এসে এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আবার ১০-১২ জনেরও বেশি হয়। সেন্টারে আসা ব্যক্তিদের মুখের লালা ও রক্ত পরীক্ষা করে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট প্রদান করা হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপিত এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের আবাসিক দু,জন চিকিৎসক। তার সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সেলর কাম এডমিনিস্ট্রেটর মোঃ হাবিবুল হক আখন্দ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোলেমান হোসেন।

তারা জানান, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে এই সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জেলার অনেক মানুষ বিনামূল্যে এই রক্ত পরীক্ষা সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন। এ পর্যন্ত সেন্টার থেকে মোট ৬ হাজার ৪২৭টি পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৫ জন রোগী পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে তারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

আরও জানান, বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিদেশ ভ্রমণের আগে এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক দেশে বাধ্যতামূলক। এছাড়া মাদকাসক্ত এবং যৌনকর্মীদের জন্যও এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সময়মতো রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। তাদের আহ্বান, এই শ্রেণির ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেন হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে এই সহজ সেবাটি গ্রহণ করে নিজেদের এবং সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
দায়িত্বরতরা জানান, এখানে আসা প্রতিটি সেবাপ্রার্থীর জন্য আলাদা ফাইল খোলা হয় এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়, যাতে রোগী সচেতন ও সতর্ক হতে পারেন। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আর নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া ব্যক্তিদেরও ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, যে জীবাণুর মাধ্যমে এইডস রোগ হয়, তাকে এইচআইভি (HIV) বা হিউম্যান ইমিউনো ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস বলা হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, ফলে নানাবিধ জটিল ও প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেশব্যাপী এমন উদ্যোগ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াচ্ছে এবং সময়মতো রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট পিজিসিয়ান (আরপি) ডাঃ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় অনেক কিছু আছে। এর মধ্যে রয়েছে– নিয়মিত প্রাথমিক পরীক্ষা, বিদেশগামী শ্রমিকদের এইচআইভি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা, সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বামী–স্ত্রী দু’জনেরই পরীক্ষার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা এবং গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করা। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে। তিনি আরও জানান, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত ও বিদেশগামী শ্রমিকরা যেন এই সেবাটি গ্রহণ করেন, এতে শুধু তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নয়, পুরো সমাজও সুরক্ষিত থাকবে।

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, এইচটিসি এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যারা সেবা নিয়েছে তাদের মধ্যে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী সনাক্ত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এই বিনামূল্যের সেবার আওতায় নিয়ে আসা, যাতে তারা সময়মতো পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু রোগী নয়, পুরো সমাজও সুরক্ষিত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশগামী, যৌনকর্মী ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা যেন অবহেলা না করে হাসপাতালে এসে সহজেই এই সেবা নেন, এটাই তাদের প্রতি হাসপাতালের বিশেষ আহ্বান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবের নারায়নপুরে ক্রয়কৃত সম্পত্তির চেয়ে অধিক জায়গা দখলের অভিযোগ

চাঁদপুরে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত, সেবা নেয়ার আহ্বান

Update Time : ০৯:৪১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

আড়াই’ শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে বিনামূল্যে এইচআইভি রক্ত পরীক্ষা। সদর হাসপাতালে স্থাপিত এইচটিসি এআরটি সেন্টার থেকে গত ৫ বছরে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪২৭ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫ জন রোগীর শরীরে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী রোগী। এমন কঠিন রোগ সম্পর্কে সকলকে হাসপাতালের এই সেবা কেন্দ্র থেকে রক্ত পরীক্ষা করার আহবান চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের।

জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সারা দেশের আরও ২২টি জেলার মতো চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালেও এই সেবা চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন গড়ে ৭–৮ জন সেবাপ্রার্থী এখানে এসে এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আবার ১০-১২ জনেরও বেশি হয়। সেন্টারে আসা ব্যক্তিদের মুখের লালা ও রক্ত পরীক্ষা করে মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই রিপোর্ট প্রদান করা হয় বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপিত এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তিনজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাসপাতালের আবাসিক দু,জন চিকিৎসক। তার সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সেলর কাম এডমিনিস্ট্রেটর মোঃ হাবিবুল হক আখন্দ এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সোলেমান হোসেন।

তারা জানান, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে এই সেবা কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে জেলার অনেক মানুষ বিনামূল্যে এই রক্ত পরীক্ষা সেবা গ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন। এ পর্যন্ত সেন্টার থেকে মোট ৬ হাজার ৪২৭টি পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ২৫ জন রোগী পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে তারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

আরও জানান, বিশেষ করে বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ বিদেশ ভ্রমণের আগে এইচআইভি পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক দেশে বাধ্যতামূলক। এছাড়া মাদকাসক্ত এবং যৌনকর্মীদের জন্যও এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সময়মতো রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। তাদের আহ্বান, এই শ্রেণির ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেন হাসপাতালে এসে বিনামূল্যে এই সহজ সেবাটি গ্রহণ করে নিজেদের এবং সমাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন।
দায়িত্বরতরা জানান, এখানে আসা প্রতিটি সেবাপ্রার্থীর জন্য আলাদা ফাইল খোলা হয় এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়, যাতে রোগী সচেতন ও সতর্ক হতে পারেন। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। আর নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া ব্যক্তিদেরও ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, যে জীবাণুর মাধ্যমে এইডস রোগ হয়, তাকে এইচআইভি (HIV) বা হিউম্যান ইমিউনো ডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস বলা হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, ফলে নানাবিধ জটিল ও প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। দেশব্যাপী এমন উদ্যোগ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াচ্ছে এবং সময়মতো রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা পেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট পিজিসিয়ান (আরপি) ডাঃ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল বলেন, এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় অনেক কিছু আছে। এর মধ্যে রয়েছে– নিয়মিত প্রাথমিক পরীক্ষা, বিদেশগামী শ্রমিকদের এইচআইভি টেস্ট, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা, সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বামী–স্ত্রী দু’জনেরই পরীক্ষার মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকা এবং গর্ভবতী মায়েদের এইচআইভি পরীক্ষা করা। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগের ঝুঁকি কমাতে। তিনি আরও জানান, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যৌনকর্মী, মাদকাসক্ত ও বিদেশগামী শ্রমিকরা যেন এই সেবাটি গ্রহণ করেন, এতে শুধু তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নয়, পুরো সমাজও সুরক্ষিত থাকবে।

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, এইচটিসি এআরটি সেন্টারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যারা সেবা নিয়েছে তাদের মধ্যে ২৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী সনাক্ত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে এই বিনামূল্যের সেবার আওতায় নিয়ে আসা, যাতে তারা সময়মতো পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু রোগী নয়, পুরো সমাজও সুরক্ষিত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশগামী, যৌনকর্মী ও মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা যেন অবহেলা না করে হাসপাতালে এসে সহজেই এই সেবা নেন, এটাই তাদের প্রতি হাসপাতালের বিশেষ আহ্বান।