অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমছিলো রোগীদের মনে। অবশেষে তা বিস্ফোরণ আকারে দেখা দিলো চাঁদপুরের বেসরকারি ‘অর্পন’ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে অসন্তুষ্ট রোগীরা বিক্ষোভ করে, ভাঙচুর চালায় এবং কর্মকর্তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অনেক রোগী দেয়াল টপকে পালিয়েও যায়।
ঠিক এমন এক সংকটময় মুহূর্তে মানবিক ও সাহসী পদক্ষেপে এগিয়ে আসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) চাঁদপুর। সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রোগীদের শান্ত করেন। পরে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এসময় রোগীদের নিরাপত্তা ছিলো বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছিলো, আর বেশ কিছু পরিবারও নিজেদের প্রিয়জনকে ফেরত নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এমনকি কয়েকজন মায়েরাও সন্তান নিতে আসতে দ্বিধা করেন। তবুও হাল ছাড়েননি ডিএনসি কর্মকর্তারা। রোগীরা যাতে পথে না বসে যায় বা নতুন করে বিপথে না যায়—এই চিন্তায় একে একে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন কর্মকর্তারা। গভীর রাত অবধি থেকে প্রতিটি রোগীকে পরিবারের জিম্মায় তুলে দিয়ে তবেই স্বস্তি নেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, তারা হয়তো মাদকাসক্ত, কিন্তু তারাও তো মানুষ। পরিবার ছাড়া তারা কোথায় যাবে? আমাদের কষ্ট হলেও রোগীদের নিরাপদে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি, এটাই তৃপ্তির বিষয়।
তিনি আরো বলেন, এ জেলায় আমার যোগদানের পূর্বে মানে ২০২৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন পায়। আমি এসে প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু অনিয়ম ও অব্যবস্থপনা লক্ষ্য করি। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বারবার এসব বিষয়ে সর্তক করি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ও রোগীদের মানোন্নয়নে সিসিটিভি ক্যামেরা, বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থাসহ খাওয়া দাওয়ার চার্টও করে দেয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং প্রতিমাসে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন করি।
রোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তারা খাবারের অনিয়ম, অমানবিক আচরণ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। তাই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিলো ওই রাতে।
ডিএনসি কর্মকর্তাদের এই মানবিক উদ্যোগ ইতোমধ্যেই সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, মানবিকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ডিএনসি চাঁদপুর দেখিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”
এ ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো—মাদকাসক্তরা অপরাধী নয়, তারা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় রোগী। আর তাদের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবিক দায়িত্ব।