চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে ঘোষিত বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন কচুয়া উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে কচুয়া উপজেলার জেলা অনুমোদিত কমিটির নেতৃবৃন্দের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা একযোগে মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি তোলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে কচুয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং সাবেক দুইবারের পৌর মেয়র হুমায়ুন কবির প্রধান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে মামলা-হামলা-নির্যাতন উপেক্ষা করে আমরা কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রতিটি ধাপে মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ছিলেন আমাদের সংগঠক, অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক।
তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈররাণী শেখ হাসিনার পতনের আগেও এবং পরেও দীর্ঘ নির্যাতনের সময়গুলোতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন মোশাররফ হোসেন। তার নেতৃত্ব, ত্যাগ ও আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা তৃণমূলে নতুন উদ্দীপনা জুগিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৩ নভেম্বর গুলশানে ঘোষিত ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় চাঁদপুর-১ আসনে আ. ন. ম. এহসানুল হক মিলনের নাম ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় কচুয়া বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে মিলন স্থানীয় সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনুপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন সময়গুলোতে দলের পাশে ছিলেন না। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন এবং দেশে ফিরে দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে সংগঠনকে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
নেতারা আরও অভিযোগ করেন, মনোনয়ন না পেয়ে ২০১৮ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য ও পদচ্যুতির ক্ষোভে আওয়ামী লীগপন্থী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে জড়ান। দল ও নেতৃত্ব সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম এবং ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ডে অবমাননাকর ও অনৈতিক বক্তব্যের উদাহরণও তুলে ধরেন তারা।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে মিলনের সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘিরে কচুয়ার বিভিন্ন এলাকায় দলে অনুগত কিছু সন্ত্রাসী চক্র তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। স্থানীয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙচুর, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও উস্কানিমূলক সংঘর্ষের ঘটনাও উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, আলোকচিত্র ও প্রমাণসমূহ সাংবাদিকদের হাতে পেনড্রাইভের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন আয়োজকরা।
নেতারা বলেন, মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন একজন ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং আন্দোলন-সংগ্রামের নেতা। তার নেতৃত্বে কচুয়ার তৃণমূল সংগঠন সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে। তিনি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও সক্রিয় রাজনীতির প্রতীক। তাদের দাবি, মোশাররফ হোসেন ছাড়া চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপির বাস্তবসম্মত ও বিজয়ী প্রার্থী আর কেউ নন।
সংবাদ সম্মেলনে কচুয়া বিএনপির নেতারা বিএনপির চেয়ারপার্সন মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানান, চাঁদপুর-১ আসনের প্রাথমিক মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে মোশাররফ হোসেনকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রদানের জন্য।
নেতৃবৃন্দ বলেন, তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ, সংগঠনের ঐক্য রক্ষা এবং জয়ের জন্য মোশাররফকে প্রার্থী করাই একমাত্র যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে তারা আশা প্রকাশ করেন, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তৃণমূলের এই স্পষ্ট বার্তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে এবং কচুয়া উপজেলা বিএনপির দীর্ঘ দিনের এই ত্যাগী নেতার প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সদস্য শাহজাহান মজুমদার, জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট মোস্তাক আহমেদ, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মজুমদার, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক মিজানুর রহমান স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শাহজাহান সিরাজী, সদস্য সচিব আল আমিন মোল্লা, শ্রমিক দলের উপজেলা সভাপতি আলী আক্কাস, কচুয়া উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ফেরদৌসী আক্তার,কচুয়া পৌরসভা মহিলা দলের সভাপতি রোজিনা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক কামরুন নাহার, যুগ্ম সম্পাদকচামেলী চামেলী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক মায়ানুর বেগম, উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব সাফায়েত হোসেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কচুয়া উপজেলা শাখার সভাপতি সভাপতি মোস্তফা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক গাজী রশিদসহ কচুয়া উপজেলার থেকে আগত ১২ ইউনিয়ন ও কচুয়া পৌরসভার বিএনপিসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকগণ।
অনলাইন নিউজ ডেস্ক : 




















