ঢাকা 10:38 pm, Wednesday, 5 November 2025

বাহরাইনে বাংলাদেশী শ্রমিকের কোটি টাকা নিয়ে দেশে পালিয়ে এসেছে হাজীগঞ্জের সাঈদ

ছবি-সংগৃহিত।

বাংলাদেশী টাকায় এক কোটি টাকা নিয়ে হাজীগঞ্জে পালিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে সাঈদ (৭০) নামের এক বাহরাইন প্রবাসীর বিরুদ্ধে। ৭০ জন বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকের তিন মাসের বেতনের টাকা নিয়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) দিবাগত রাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।

সাঈদ (মো. আবু ছাইদ) হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামের নোয়া বাড়ির মো. জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে। প্রায় চার বছর আগে তিনি বাহরাইনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিল্ডিং নির্মাণ কাজের সুপারভাইজার পদে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাহরাইনে কন্ট্রাক নিয়ে কনস্ট্রাকশন কাজ করতেন।

স্থানীয়রা জানান, সাঈদ ৭০ জন প্রবাসী শ্রমিকের গত তিন মাসের বেতন বাবদ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ কোটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে দেশে পালিয়ে আসেন। এই ৭০ জন শ্রমিকের মধ্যে তার ইউনিয়ন কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন ও প¦ার্শবর্তী কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের অন্তত ২০ জন প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন।

এছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর উপজেলা, কৃমিল্লা, বি-বাড়িয়া, নোয়াখালী ও টাঙ্গাইল জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকেরা তার অধিনে কাজ করতেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে পালিয়ে আসার পর শুক্রবার বিষয়টি শ্রমিকেরা জানতে পারেন।

এরপর সাঈদের নিজ ও প¦ার্শবর্তী ইউনিয়নের প্রবাসীরা নিজ নিজ পরিবারকে জানান। এরমধ্যে কয়েকজন শ্রমিক বিষয়টি কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপনকে অবহিত করেন। এছাড়া অনেকে সাঈদের ছবি ও ওয়ার্কপারমিটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের শাখাওয়াত সাগর নামের একজন তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি হাজীগঞ্জ থানা ও ইউএনও’র দৃষ্টি কামনা করে উল্লেখ করেন, ৭০ জন বাংলাদেশী ভাইয়ের ২/৩ মাসের ১ কোটি টাকা নিয়ে সাঈদ বাহরাইন থেকে দেশে পালিয়ে এসেছে। তাঁর দেওয়া পোস্টে ৩২ জনের নামের তালিকা দেওয়া আছে। যাদের টাকা নিয়ে সাঈদ দেশে চলে আসছে।

এ বিষয়ে শনিবার (৬ মে) দুপুরে সাঈদের বাবা মো. জসিম উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমার ছেলে দেশে আসছে বলে জানতে পেরেছি। তবে সে এখনো বাড়িতে আসেনি। শুনেছি বলাখাল আছে। এরপর এই দুই দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) ১৬ জন লোক আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তারা বলেছেন, আমার ছেলে নাকি তাদের (প্রবাসী শ্রমিক) টাকা নিয়ে দেশে চলে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে ওখানে (বাহরাইন) যে কোম্পানির অধিনে কাজ করে তারা নাকি এক মাসের বেতন আটকিয়ে রেখেছে। এছাড়া এক মাসের বেতন বাবদ ২ হাজার দিনার বাকি রেখেছে। এখন কোম্পানি টাকা না দিলে, আমার ছেলে কোথায় থেকে দিবে ? অথচ লোকজন (শ্রমিক) আমার ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার ও তাকে মারধর করতে আসে। তাই সে অন্য শ্রমিকদের পরামর্শে সে ছুটিতে দেশে চলে আসছে।

এ সময় মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে (সাঈদ) বাড়িতে আসুক। তার সাথে কথা বলে দেখি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে মানুষের টাকা ফেরত দিয়ে দিবো। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কিস্তি (ঋণ) উঠিয়ে, ধার দেনা করে এবং তিন ছেলের কামাইয়ের (আয়ের টাকা) দিয়ে ঘর-দুয়ার করেছি। এখনো কিস্তির টাকা ও দেনা পরিশোধ করতে পারিনি। সাঈদ যদি এমন কিছু করতো, তাহলে আমাদের এমন অবস্থা থাকতো না।

কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, গতকাল ও আজকে (শুক্রবার ও শনিবার) আমাকে বেশ কয়েকজন বিদেশ থেকে ফোন করে জানিয়েছে, সাঈদ নাকি মানুষের টাকা নিয়ে দেশে পালিয়ে এসেছে। এর মধ্যে কেউ বলেছেন ৭০ জন, আবার কেউ বলেছেন ৫২ জন শ্রমিকের বেতনের টাকা নিয়ে সে দেশে চলে আসছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় ড.আনম এহছানুল হক মিলনকে মনোনীত করায় দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতা বিএম কাউছার হোসেন 

বাহরাইনে বাংলাদেশী শ্রমিকের কোটি টাকা নিয়ে দেশে পালিয়ে এসেছে হাজীগঞ্জের সাঈদ

Update Time : 10:06:49 am, Sunday, 7 May 2023

বাংলাদেশী টাকায় এক কোটি টাকা নিয়ে হাজীগঞ্জে পালিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে সাঈদ (৭০) নামের এক বাহরাইন প্রবাসীর বিরুদ্ধে। ৭০ জন বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকের তিন মাসের বেতনের টাকা নিয়ে তিনি গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) দিবাগত রাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।

সাঈদ (মো. আবু ছাইদ) হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামের নোয়া বাড়ির মো. জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে। প্রায় চার বছর আগে তিনি বাহরাইনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিল্ডিং নির্মাণ কাজের সুপারভাইজার পদে দায়িত্বরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাহরাইনে কন্ট্রাক নিয়ে কনস্ট্রাকশন কাজ করতেন।

স্থানীয়রা জানান, সাঈদ ৭০ জন প্রবাসী শ্রমিকের গত তিন মাসের বেতন বাবদ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ কোটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে দেশে পালিয়ে আসেন। এই ৭০ জন শ্রমিকের মধ্যে তার ইউনিয়ন কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন ও প¦ার্শবর্তী কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের অন্তত ২০ জন প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন।

এছাড়া হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর উপজেলা, কৃমিল্লা, বি-বাড়িয়া, নোয়াখালী ও টাঙ্গাইল জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকেরা তার অধিনে কাজ করতেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে পালিয়ে আসার পর শুক্রবার বিষয়টি শ্রমিকেরা জানতে পারেন।

এরপর সাঈদের নিজ ও প¦ার্শবর্তী ইউনিয়নের প্রবাসীরা নিজ নিজ পরিবারকে জানান। এরমধ্যে কয়েকজন শ্রমিক বিষয়টি কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপনকে অবহিত করেন। এছাড়া অনেকে সাঈদের ছবি ও ওয়ার্কপারমিটসহ বিভিন্ন কাগজপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এর মধ্যে ওই ইউনিয়নের শাখাওয়াত সাগর নামের একজন তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি হাজীগঞ্জ থানা ও ইউএনও’র দৃষ্টি কামনা করে উল্লেখ করেন, ৭০ জন বাংলাদেশী ভাইয়ের ২/৩ মাসের ১ কোটি টাকা নিয়ে সাঈদ বাহরাইন থেকে দেশে পালিয়ে এসেছে। তাঁর দেওয়া পোস্টে ৩২ জনের নামের তালিকা দেওয়া আছে। যাদের টাকা নিয়ে সাঈদ দেশে চলে আসছে।

এ বিষয়ে শনিবার (৬ মে) দুপুরে সাঈদের বাবা মো. জসিম উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমার ছেলে দেশে আসছে বলে জানতে পেরেছি। তবে সে এখনো বাড়িতে আসেনি। শুনেছি বলাখাল আছে। এরপর এই দুই দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) ১৬ জন লোক আমাদের বাড়িতে এসেছেন। তারা বলেছেন, আমার ছেলে নাকি তাদের (প্রবাসী শ্রমিক) টাকা নিয়ে দেশে চলে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে ওখানে (বাহরাইন) যে কোম্পানির অধিনে কাজ করে তারা নাকি এক মাসের বেতন আটকিয়ে রেখেছে। এছাড়া এক মাসের বেতন বাবদ ২ হাজার দিনার বাকি রেখেছে। এখন কোম্পানি টাকা না দিলে, আমার ছেলে কোথায় থেকে দিবে ? অথচ লোকজন (শ্রমিক) আমার ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার ও তাকে মারধর করতে আসে। তাই সে অন্য শ্রমিকদের পরামর্শে সে ছুটিতে দেশে চলে আসছে।

এ সময় মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে (সাঈদ) বাড়িতে আসুক। তার সাথে কথা বলে দেখি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে মানুষের টাকা ফেরত দিয়ে দিবো। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কিস্তি (ঋণ) উঠিয়ে, ধার দেনা করে এবং তিন ছেলের কামাইয়ের (আয়ের টাকা) দিয়ে ঘর-দুয়ার করেছি। এখনো কিস্তির টাকা ও দেনা পরিশোধ করতে পারিনি। সাঈদ যদি এমন কিছু করতো, তাহলে আমাদের এমন অবস্থা থাকতো না।

কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, গতকাল ও আজকে (শুক্রবার ও শনিবার) আমাকে বেশ কয়েকজন বিদেশ থেকে ফোন করে জানিয়েছে, সাঈদ নাকি মানুষের টাকা নিয়ে দেশে পালিয়ে এসেছে। এর মধ্যে কেউ বলেছেন ৭০ জন, আবার কেউ বলেছেন ৫২ জন শ্রমিকের বেতনের টাকা নিয়ে সে দেশে চলে আসছে।