ঢাকা ০৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে শিশু আদিলকে হত্যা করলো গৃহশিক্ষক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:০৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
  • ৫৭ Time View

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ীর আনোয়ার হোসেনের শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) হত্যার রহস্য ও ঘটনায় জড়িত কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদ (১৭) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আহাদ ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে শিশু পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার বলেন, রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ীর আনোয়ার হোসেন তার শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে না আসলে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৬ মে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তকাজ চলছিল। ১৯ মে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশুর বাড়ীর পাশের জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।

এই ঘটনায় ওইদিনই শিশুর পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ধারণা করে যে সময়ের মধ্যে শিশু আদিল নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুলিশ তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে মঙ্গলবার (২৩ মে) গ্রেফতার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধী আবদুল আহাদ জানান, সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখেন। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলায় চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় আহাদ তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আদিলের মার কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়। কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধী আহাদও আদিলের পরিবারের সাথে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলেগেলে আহাদ ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন আদিল জীবীত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্না ঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুড়ে জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমিতে আদিলের মরদেহ পুতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ওই রান্না ঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সীমকার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। সে একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহ শিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের গনিষ্ঠছিলো। সে জানতো আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কুমিল্লায় আইদি পরিবহন প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা, চাঁদপুরে মানববন্ধন

ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখে শিশু আদিলকে হত্যা করলো গৃহশিক্ষক

Update Time : ০৩:০৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ীর আনোয়ার হোসেনের শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) হত্যার রহস্য ও ঘটনায় জড়িত কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদ (১৭) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আহাদ ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে শিশু পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখে বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়।

বুধবার (২৪ মে) দুপুরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার বলেন, রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ীর আনোয়ার হোসেন তার শিশু পুত্র আদিল মোহাম্মদ সোহান গত ১৫ মে সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর মসজিদ থেকে বাড়িতে না আসলে বিভিন্ন স্থানে খুঁজে না পেয়ে পরদিন ১৬ মে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। এই ঘটনায় পুলিশের তদন্তকাজ চলছিল। ১৯ মে সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ পেয়ে নিখোঁজ শিশুর বাড়ীর পাশের জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমি থেকে আদিলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।

এই ঘটনায় ওইদিনই শিশুর পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশের একটি টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ধারণা করে যে সময়ের মধ্যে শিশু আদিল নিখোঁজ হয়, তা খুবই কম সময়। খুব কাছের লোকের মাধ্যমে এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুলিশ তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদকে মঙ্গলবার (২৩ মে) গ্রেফতার করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে কিশোর অপরাধী আবদুল আহাদ জানান, সে নিয়মিত ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখেন। সেই আলোকে ঘটনার দিন মাগরিবের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে আদিলকে বাড়ির পাশের নির্জন নার্সারিতে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে আদিলের মুখ ও গলায় চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় আহাদ তার মায়ের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আদিলের মার কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কল দেয়। কিন্তু আদিলের মা তার সন্তানকে খুঁজতে গিয়ে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে যান। যে কারণে ফোন রিসিভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধী আহাদও আদিলের পরিবারের সাথে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সবাই ঘরে চলেগেলে আহাদ ঘটনাস্থলে আদিলকে দেখতে যান, গিয়ে দেখেন আদিল জীবীত নেই। এরপর সে রাত ১টার দিকে প্রতিবেশী রেনু বেগমের রান্না ঘর থেকে দা ও কোদাল এনে মাটি খুড়ে জনৈক আবদুল মতিন এর গরুর জন্য চাষকৃত জমিতে আদিলের মরদেহ পুতে রাখে। এরপর দা পানি দিয়ে পরিস্কার করে ওই রান্না ঘরে রেখে দেয় এবং তার মায়ের ব্যবহৃত সীমকার্ড বাচ্চু মিয়ার পুকুরে ফেলে দেয়।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, কিশোর অপরাধী মো. আবদুল আহাদের বয়স ১৭ বছর ৬ মাস। সে একই এলাকায় শরীফ তালুকদারের ছেলে। এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তার পরিবারে আর্থিক সংকট আছে। আদিলের গৃহ শিক্ষক হওয়ার কারণে সে ওই পরিবারের গনিষ্ঠছিলো। সে জানতো আদিলের ঘরে কিছু টাকা আছে। যে কারণে সে এই পরিকল্পনা করে। সিরিয়ালে দেখেছে ৪০ সেকেন্ড মুখ চেপে ধরলে মারা যায় না এবং অজ্ঞান হয়ে থাকে। কিন্তু তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি বরং শিশুটির মৃত্যু হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক।