ঢাকা 4:05 am, Saturday, 28 June 2025

মিয়ানমারের কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মিয়ানমারের কাউকে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ থেকেও কাউকে মিয়ানমারে যেতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কঠোর হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং রক্তপাত বন্ধ দেখতে চান বলে জানান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার শহরের হিলটপ সার্কিট হাউসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এ) চলমান সংঘাত-লড়াই পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ওই যুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি ছাড়াও কয়েকটি ক্ষুদ্র দল অংশ নিয়েছে। এই যুদ্ধে আরাকান আর্মি ক্রমেই শক্তি দেখাচ্ছে। সে জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে বর্ডার তা অনেকটা অরক্ষিত। এদিকে (উখিয়া-টেকনাফ) নাফ নদী, অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির দিকে স্থল বর্ডার। আজকের সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিয়ানমার থেকে আমরা আর কোনো মানুষ, সে রোহিঙ্গা হোক কিংবা যে নাগরিকই হোক, আমরা আর ঢুকতে দেব না এবং আমাদের এদিক থেকেও কাউকে ওদিকে যেতে দেব না। আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখছি। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দল–উপদলে বিভক্ত হয়েছে। এগুলো আমরা বন্ধ করতে চাই। এ জন্য পুলিশ ও এপিবিএনকে নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের সবকিছু সেখানে আছে। বিজিবি আছে, আমাদের সেনাবাহিনীও আছে। যখন প্রয়োজন অংশ নেবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো এখানে (আশ্রয়শিবিরে) খুনখারাবি ও রক্তপাত বন্ধ করা।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫০ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকে রাতে কক্সবাজার পৌঁছে হিলটপ সার্কিট হাউসের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, আশ্রয়শিবিরের সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা, আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশি–বিদেশি কোনো সংস্থা যেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে কিংবা রোহিঙ্গাদের প্রলুব্ধ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনাও দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় একজন গ্রেফতার, মোবাইল উদ্ধার

মিয়ানমারের কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Update Time : 02:57:37 pm, Friday, 31 May 2024

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মিয়ানমারের কাউকে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ থেকেও কাউকে মিয়ানমারে যেতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও কঠোর হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং রক্তপাত বন্ধ দেখতে চান বলে জানান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার শহরের হিলটপ সার্কিট হাউসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন তিনি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এ) চলমান সংঘাত-লড়াই পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ওই যুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি ছাড়াও কয়েকটি ক্ষুদ্র দল অংশ নিয়েছে। এই যুদ্ধে আরাকান আর্মি ক্রমেই শক্তি দেখাচ্ছে। সে জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে বর্ডার তা অনেকটা অরক্ষিত। এদিকে (উখিয়া-টেকনাফ) নাফ নদী, অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির দিকে স্থল বর্ডার। আজকের সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিয়ানমার থেকে আমরা আর কোনো মানুষ, সে রোহিঙ্গা হোক কিংবা যে নাগরিকই হোক, আমরা আর ঢুকতে দেব না এবং আমাদের এদিক থেকেও কাউকে ওদিকে যেতে দেব না। আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখছি। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দল–উপদলে বিভক্ত হয়েছে। এগুলো আমরা বন্ধ করতে চাই। এ জন্য পুলিশ ও এপিবিএনকে নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের সবকিছু সেখানে আছে। বিজিবি আছে, আমাদের সেনাবাহিনীও আছে। যখন প্রয়োজন অংশ নেবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো এখানে (আশ্রয়শিবিরে) খুনখারাবি ও রক্তপাত বন্ধ করা।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ৫০ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকে রাতে কক্সবাজার পৌঁছে হিলটপ সার্কিট হাউসের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্রের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, আশ্রয়শিবিরের সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা, আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশি–বিদেশি কোনো সংস্থা যেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে কিংবা রোহিঙ্গাদের প্রলুব্ধ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনাও দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।