হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, হকার প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
শনিবার দুপরে উপজেলা মিলনায়তনে এ মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন কঠোর ভাষায় বলেন, আমি চাঁদপুর জেলায় এসেছি ১১ মাস। এরই মাঝে কয়েকবার হকারদের সাথে মতবিনিময়সভা করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকবার কথা দিয়েছে সড়কে বসে আর দোকানদারি করবেনা। কিন্তু তারা সেই কথা রাখেনি। হাজীগঞ্জ বাজারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ী নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাজীগঞ্জে হাজার হাজার লোক ব্যবাসা করছে। সবাইতো ব্যবসায়ী হতে হবে এটা শর্ত নয়। আবার সরকার ব্যবসা করার জন্য আপনাকে জায়গা দেবেনা। আপনি ব্যবসা করছেন, দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। কিন্তু সড়ক বন্ধ করে, গাড়ী এবং মানুষের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসা করবেন। এটাতো কেউ মেনে নেবেনা।
তিনি বলেন, আপনারা বলছেন, আপনাদের বসার জায়গা দেয়ার জন্য। আপনাদের বসার জায়গা দিলে, পরের প্রজন্ম বলবে এটাতো ভালো ব্যবসা। রাস্তায় বসে ব্যবসা করলে দোকান পাওয়া যায়। এতো জায়গাতো সরকারের নেই। আপনাদের ব্যবসা আপনারা করবেন। সরকার জায়গা দেবে কেন?
তিনি বলেন, আমারা আরো কঠোর হবো। রাস্তায় যতো ভ্যান গাড়ী, কাচা মালামাল পাবো, তা নষ্ট করে দেবো। দেখি আমরা কতো ভ্যান গাড়ী ভাংতে পারি, মালা মাল নষ্ট করতে পারি। আপনারা কত সময় সড়কে বসতে পারেন।
এ সময় বাজারের হকাররা তাদের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, স্যার, আমরা আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে কোথায় যাবো। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বলেন, আপনাদেরকে একটা জায়গা দিতে হলেও সময়ের ব্যাপার চাইলেও দেয়া যাবেনা। তবে সময় লাগবে, বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো। আপনারা কখন বাজার ছাড়বেন সেই ওয়াদা করেন। এক পর্যায়ে হকার ব্যবসায়ীবৃন্দ, আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে আর বসবেনা বলে জানান। প্রতি উত্তরে জেলা প্রশাসক বলেন, এক মাস নয়, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত আপনাদেরকে সময় দেয়া হলো। আপনারা বাজার ছেড়ে দেবেন। পরবর্তীতে আপনারা বাজারে বসলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আমরা চাইনা, আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ হন।
এ সময় হকার মার্কেটকে বহুতল ভবন করে সেখানে নিচতলায় হকার পুনবার্সনের কথা বলা হয়। তবে সেটা সময় স্বাপেক্ষে।
তিনি বলেন, যদি আপনার ৪১ দিনে মধ্যে বাজার না ছাড়েন আমরা কঠোর হবে। কোন নেতার কথা শোনা হবেনা। কারণ হকার হলো মাত্র ৫শ/৭শ এদের কারণে লাখ লাখ লোক কষ্ট পাচ্ছে এটা মেনে নেয়া যায়না। যদি কোন নেতা তদবির করে, ধরে নেয়া হবে তিনি, হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। যদি কারো কারণে এ কার্যক্রম ব্যহত হয়, আমি তাদের নাম পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আবদুর রকিব, হাজীগঞ্জ বাজার যানজট নিরসনে প্রশাসনকে সর্বাত্ত্বক সহযোগিতা করা হবে। এ সময় হাজীগঞ্জ বাজারের পূর্ব বাজার থেকে পশ্চিম বাজার পর্যন্ত, বোগদাদ, আইদিসহ সকল পরিবহন গেইটলক থাকবে, বাজারে কোন সিএনজি স্ট্যা- থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারী দেন তিনি। ধীরে ধীরে এগুলো একটা শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা হবে।
চাঁদপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ২১ বীরের উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আশিকুর রহমান আশিক বলেন, আপনাদের সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা আসছি। বিষয় একটি লজ্জাস্কর। আপনাদের সমস্যাটা আপনারাই সমাধান করবেন। এটাই হলো সত্য। আমরা যতবারাই আপনাদের সড়ক থেকে তুলি দেই, আপনারা আবার বসেন। এবার প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই লাস্ট। আপনাদেরকে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর বিএম কলিমুল্লাহ, নায়েবে আমীর মোজাম্মেল হোসেন মজুমদার পরান, পৌর আমীর আবুল হাসানাত পাটওয়ারী, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক সুমন মোল্লা, এনসিপি নেতা শাহাদাত হোসেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ, মহিউদ্দিন আল আজাদ, সাইফুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, এনায়েত মজুমদার, পাপ্পু মাহমুদ।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন শাবু, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মো. আবুল কাশেম, ওয়ার্ড কমিশনার মহিউদ্দিন মাইনু, ব্যবসায়ী হাফেজ মো. মহসিন, আলী আশ্রাফ, হকারদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, আকতার সর্দার, খাজা মাস্টার প্রমুখ। সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলওয়াত করেন, মাও. মো. মাজহার রাফি ও গীতা থেকে পাঠ করেন, ঝুটন ভৌমিক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের উপস্থাপনায় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা, সেনাবাহিনীর হাজীগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার ল্যাফ. মানজুরুল ইসলাম, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সহ-সভাপতি হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানীয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রেসক্লাব ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বাজারের হকাররাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।